ভীমা কোরেগাঁও মামলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। কী ছিল এই মামলায়? মহারাষ্ট্রে নাগপুরের কাছে ভীমা কোরেগাঁও গ্রামে ব্রিটিশদের সঙ্গে মারাঠা পেশোয়া বাজিরাও দ্বিতীয়র লড়াই হয়েছিল, স্থানীয় আদিবাসীরা ব্রিটিশদের হয়ে যুদ্ধ করেছিল, জিতেছিল, তাঁরা তাদের জয়কে উদযাপন করেন প্রতিবছর, বাবাসাহেব আম্বেদকর হিন্দু প্রভুত্বের বিরুদ্ধে এই জয়কে উদযাপন করা শুরু করেন। ২০১৮তে কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন মূলত বিজেপির লোকজন এখানে বাধা দিতে আসে এবং সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এনআইএ থেকে পুলিশ এক বিরাট ষড়যন্ত্রের কথা বলতে থাকে, যেখানে এই আদিবাসীদের সমর্থক বুদ্ধিজীবী সমাজকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়।
অভিযোগ, তাঁরা আসলে মাওয়িস্ট, তাঁরা আসলে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে মারার চেষ্টা করছেন। এবং এই মামলায় কবি ভারাভারা রাও থেকে জেসুইট ফাদার স্ট্যান স্বামী থেকে সমাজকর্মী সুধা ভরদ্বাজ, অধাপিকা সোমা সেন, সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, সুধীর ধাওলে, রোনা উইলসন, মহাশ রাউত, জি এন সাইবাবা, হেম মিশ্রা, সাংবাদিক গৌতম নওলাখা ইত্যাদি বহু মানুষকে গ্রেফতার করে আজ থেকে ৬ বছর আগে। এর মধ্যে জেসুইট ফাদার স্ট্যান স্বামী জেলেই মারা গেছেন, জি এন সাইবাবাকে নির্দোষ ঘোষণা করেই মুক্ত করা হয়েছে ক’দিন আগেই। সুধা ভরদ্বাজ, আনন্দ তেলতুম্বে, ভার্নন গনজালভেস, অরুণ ফেরেইরা, ভারাভারা রাও জামিন পেয়েছেন, সাংবাদিক গৌতম নওলাখাকে জেল থেকে বের করে তাঁর বাড়িতে হাউস অ্যারেস্ট করে রাখা হয়েছে। একজনের বিরুদ্ধেও কোনও প্রমাণ এনে হাজির করতে পারেনি। এঁরা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি, বিভিন্ন অবস্থান থেকে আসা মানুষ, এবং একটা বিষয়ে এঁদের মিল আছে, এনারা এই মোদি রেজিমের, মোদি রাজত্বের বিরোধী। বিভিন্ন সময়ে সেই বিরোধিতার কথা ওঁরা লিখেছেন, বলেছেন, বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। তাঁদের সেই প্রধানমন্ত্রীকে মারার চক্রান্তের অভিযোগে গ্রেফতার করে পাঁচ ছ’ বছর জেলে রাখা হল যাঁর প্রতিদিনের সিকিউরিটির খরচ দেড় কোটি টাকার বেশি। এবং গ্রেফতার করার পাঁচ ছ’ বছরের মধ্যেও এক কুঁচো প্রমাণ এনে হাজির করতে পারল না। এটাই মোদি যুগ।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব ৩৮)
বিরোধিতা করছে, জেলে পুরে দাও, তারপর একটা বিরাট সময় ধরে জেলে রাখার পরে ছাড়ো এবং দেখো এঁদের ঘাড় নিচু হয়েছে কি না, যদি না হয়ে থাকে তাহলে আবার জেলে পোরো। একই জিনিস চলছে প্রত্যেকের সঙ্গে, কাউকে মাওয়িস্ট বলে, কাউকে দেশদ্রোহী বলে, কাউকে চোর বলে আগে জেলে পুরে দাও, তারপর দেখো সে মাথা নোয়াচ্ছে কি না। আসলে সাভারকরের শিষ্যরা ভাবে জেলে পুরলেই মানুষ মুচলেকা দেবে, যেমনটা মুচলেকা বীর সাভারকর দিয়েছিল। কিন্তু তা তো বাস্তব নয়। শোনা গেল জি এন সাইবাবা তাঁর জেলেই বসে লিখে ফেলা প্রতিবাদের কবিতাগুলো বই আকারে বের করতে চলেছেন। আমাদের সম্পাদকও জেলে আজ ২৬৮ দিন হয়ে গেল, ওই একই কায়দায় জেলে রেখে মুচলেকা লেখানোর চেষ্টা চলছে। উনি কাগজে লিখে দিয়েছেন, শুনেছ কী বলে গেল সীতারাম বন্দ্যো? আকাশের গায়ে নাকি টক টক গন্ধ, টক টক থাকে নাকো হলে পরে বৃষ্টি, তখন দেখেছি চেখে একেবারে মিষ্টি। শোনা গেল মুচলেকা নামার এই ছড়া নিয়ে দিল্লিতে গবেষণা চলছে।
দেখুন ভিডিও: