পিংলা: সাধারণতন্ত্র দিবসে দিল্লির রাজপথে পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলো-বাতিল বিতর্কের মধ্যেই খুশির হাওয়া নিয়ে এল পিংলা পটচিত্র। বুধবার, সাধারণতন্ত্র দিবসে দিল্লির কুচকাওয়াজের পথে শোভা পাবে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের শৌর্যবীর্য বিষয়ক বিভিন্ন শিল্পকলা। সেখানে স্থান পাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের পটুয়াদের সৃষ্টি পটচিত্রও।
মেদিনীপুর জেলার এক অখ্যাত গ্রামে তাঁর জন্ম। তা সত্ত্বেও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের শৌর্য, দেশের অগণিত স্বাধীনতা সংগ্রামীকে নিয়ে আঁকা তাঁর পটচিত্র জিতে নিয়েছে বিশ্বের সমাদর। বাহাদুর চিত্রকর, পিংলা অঞ্চলের নয়াগ্রামের বাসিন্দা। পটচিত্রের নামী শিক্ষক হিসেবে তাঁর সুনাম সর্বজনবিদিত। পটচিত্র হল চিরায়তভাবে কাহিনিমূলক। বাহাদুর এবং তাঁর ছাত্রছাত্রীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যাতে এই চিরায়ত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। বাহাদুর কালীঘাট পটচিত্রের বিশেষজ্ঞও বটে। তাঁর আঁকা পটচিত্রের মধ্যে স্থান পেয়েছে নেতাজি, ক্ষুদিরামের ফাঁসি, মাতঙ্গিনী হাজরা, তিতুমিরের বাঁশের কেল্লা এবং ভারতমাতার ছবি। গল্পের মতো করে আঁকা ছবিগুলি ইতিমধ্যেই নানা দিকে স্বীকৃতি পেয়েছে।
বাহাদুরের কথায়, বার্তা প্রেরণের কাজে যখন সংবাদপত্র ছিল না, তখন তা করেছে এই পটচিত্র। তিনি এবং তাঁর পটুয়াভাইরা যেমন মনোরঞ্জন চিত্রকর, চাঁদনি চিত্রকর, মহিউদ্দিন চিত্রকর, কুরবান চিত্রকর, সাবিনা চিত্রকর, মলয় চিত্রকর এবং সমীর চিত্রকরের আঁকা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী বিপ্লবীদের শৌর্য নিয়ে সৃষ্ট পটচিত্র এবছর সাধারণতন্ত্র দিবস উদযাপনের অঙ্গ হিসাবে দেশের অন্যান্য রাজ্যের শিল্পীর সৃষ্টির সঙ্গেই রাজপথে প্রদর্শিত হবে।
আগে চিত্রকররা মূলত পৌরাণিক কাহিনি নিয়েই ছবি আঁকতেন। কিন্তু এখন অনেক শিল্পীই রাজনীতি, সামাজিক বিষয়, আন্তর্জাতিক ঘটনা ইত্যাদি থেকে প্রেরণা খুঁজে নেন। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুধুমাত্র বিষয়ে সীমাবদ্ধ নেই বরং তাঁদের কাজের যথেষ্ট প্রসার ঘটেছে। এখন হাতে তৈরি কাগজ ছাড়াও কাঠ, বস্ত্র, টেরাকোটাকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
পটুয়া শিল্প বা পটচিত্র অন্যান্য লোকশিল্পের মতো ততটা জনপ্রিয় না হলেও চড়া রঙের ব্যবহার এবং আকর্ষণীয় বিষয় প্রদর্শিত হওয়ায় তা দেশ-বিদেশে প্রশংসা অর্জন করেছে।
আরও পড়ুন: Home guard Mysterious death: প্রাক্তন মাওবাদী হোমগার্ড ও শিশুপুত্রের দেহ উদ্ধার, রহস্য
বাহাদুর ইতিমধ্যেই তাঁর বাড়িতে একটি সংরক্ষণাগার তৈরি করেছেন বাহাদুরের এই প্রয়াস বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
বাহাদুর এবং রাজ্যের অন্য পটুয়ারা ‘কলা কুম্ভ- আজাদি কা অমৃত মহোৎসবে’ অংশ নেন সম্প্রতি। যোগ দেন আনুমানিক ৭৫০ মিটার লম্বা স্ক্রল আঁকার শিল্পীদের কর্মশালায়। যেখানে আঁকা হয়েছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অজানা-অচেনা নায়কদের শৌর্যের গল্প। ভুবনেশ্বর এবং চণ্ডীগড়ে সম্প্রতি এটি অনুষ্ঠিত হয় সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সহযোগিতায়। সেই শিল্পকৃতিই সাজানো হবে সাধারণতন্ত্রের অনুষ্ঠানে।