১৯১২ সালে ১০ এপ্রিল ইংল্যান্ডের সাদাম্পটন বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেছিল টাইটানিক। গন্তব্য ছিল আমেরিকার নিউ ইয়র্ক। ১৫ এপ্রিল উত্তর অতলান্তিকে নিউ ফাউন্ডল্যান্ডের কাছে হিমশৈলে ধাক্কা লেগে জাহাজটি ডুবে যায়। বিশ্বের ভয়ঙ্করতম এই জাহাজডুবিতে মৃত্যু হয় দেড় হাজার মানুষের।টাইটানিক জাহাজটি প্রথম যাত্রায়ই আটলান্টিক সাগরের ঠান্ডা জলে ডুবে গিয়েছিল। খুব কম মানুষেরই ভাগ্য হয়েছিল অন্ধকার আর শীতল ভয়ের সেই রাতটাকে পেরিয়ে পরের দিনের সূর্য দেখার। আর সেই কয়েকজন সৌভাগ্যবানের মধ্যে ছিলেন রোজ নামে একটি মেয়ে। সলিলসমাধির পর ১১১ বছর ধরে অতলান্তিক মহাসাগরের সাড়ে বারো হাজার ফুট গভীরে পড়ে আছে টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপ।
টাইটানিক জাহাজের এই ধ্বংসের কাহিনী নিয়ে জেমস ক্যামেরণ ১৯৯৭ সালে জনপ্রিয় ব্যয়বহুল ছবি ‘টাইটানিক’ তৈরি করেছিলেন। পরিচালক এই বিপর্যয়ের মানসিক প্রভাব বোঝাতে মানুষের ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে একটি প্রেমের গল্প তৈরি করেছিলেন এই ছবিতে।ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও এবং কেট উইন্সলেট। ছবিতে রোজ-চরিত্রে ছিলেন উইন্সলেট ।রোজ তথা কেট উইন্সলেটের পরনে গোলাপী রঙের ওভারকোট। ফ্লোর পর্যন্ত দীর্ঘ এই ওভারকোটে কালো রঙের এমব্রয়ডারি করা। তার চোখে-মুখে লেগে আছে ভয়। টাইটানিক জাহাজের ভেতরে হাঁটু জলে খুঁজছেন জ্যাক তথা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওকে। এক পর্যায়ে বুক অবধি জলে পড়েন রোজ। তখন পরনের ওভারকোটটি খুলে ফেলেন তিনি।
‘টাইটানিক’ ছবির এই দৃশ্য কারোও ভোলার কথা নয়। ভুলে যাওয়ার কথা নয় রোজের পরনের ওভারকোটটিও। রোজের সেই ওভারকোটটি নিলামে উঠেছে। গত ১১ আগস্ট পর্যন্ত যার দাম উঠেছে ৩৪ হাজার মার্কিন ডলার। নিউ ইয়র্ক পোস্ট এ খবর প্রকাশ করেছে।যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির নিলামকারী সংস্থা গোল্ডিন অনলাইনে এই নিলাম পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও কেন গোল্ডিন সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন— ‘ওভারকোটটির দাম ১ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি হবে।’
গত শুক্রবার পর্যন্ত পাঁচজন এ নিলামে অংশ নিয়েছেন। সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৩৪ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৭ লাখ ৩১ হাজার টাকার বেশি)। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ নিলাম চলবে। যে বেশি দাম দিতে পারবেন, তারই সংগ্রহে যাবে এই ওভারকোট।
নিউ ইয়র্ক পোস্ট জানিয়েছে, ১৯৯৮ সালে প্রোডাকশন কোম্পানি ‘টাইটানিক’ সিনেমার প্রপস বিক্রি করে দেয়। যার মধ্যে নিলামে ওঠা কোটটিও রয়েছে। ডেবোরা লিন স্কটের ডিজাইনের উপর ভিত্তি করে এটি প্রস্তুত করেছিল জে. পিটারম্যান কোম্পানি। সর্বশেষ যে ব্যক্তি কোটটি কিনেছিলেন তিনি নিলামকারী সংস্থা গোল্ডিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
নিলামকারী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও কেন গোল্ডিন এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রথম ব্যক্তি কোটটি কিনে কয়েক বছর তার নিজের কাছে রেখেছিলেন। ২০০০ সালে এটি আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দেন তিনি। বছর খানিক আগে যে ব্যক্তি এটি কেনেন তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’ এই কোটটি যে ‘টাইটানিক’ সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছিল, তার প্রমাণ স্বরূপ সিনেমাটির প্রোডাকশন কোম্পানি এবং প্রস্তুতকারী কোম্পানি থেকে লিখিত কাগজ নিলামকারী প্রতিষ্ঠানটিকে দিয়েছেন। তারপর নিলামকারী প্রতিষ্ঠান এটি ফের যাচাই করে নিলামে তুলেছে।