কলকাতা: ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে সর্বভারতীয় স্তরে শক্তি বৃদ্ধিতে আদাজল খেয়ে নেমে পড়ল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। জাতীয়স্তরে দলের কৌশল ঠিক করার পাশাপাশি সংগঠন মজবুত করার নীলনকশা তৈরি করতে সোমবার কালীঘাটে তৃণমূলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক (Working Committee Meeting) ডেকেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বৈঠক শেষে রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ ব্রায়েন (Derek o’Brien) সাংবাদিকদের জানান, সংবিধান বদলাচ্ছে দল। শুধু বাংলা নয়, দলের ওয়ার্কিং কমিটিতে স্থান পাবেন অন্যান্য রাজ্যের নেতারাও।
২০২৪-এ লোকসভা ভোট। তার আগে সামনের বছরেই পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। লোকসভার আগে জাতীয় স্তরে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে বাংলার বাইরে একাধিক রাজ্যে ছাপ ফেলতে মরিয়া তৃণমূল। প্রথম বার ত্রিপুরা পুরভোটে লড়াই করে আমবাসায় একটি আসনও তারা পেয়েছে। বামেদের হাতছাড়া হওয়া আগরতালা পুরসভায় দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে তারা উঠে এসেছে। গোয়ায় বিধানসভা ভোটেও লড়াই করবে তৃণমূল। মুকুল সাংমার সঙ্গে ১১ জন কংগ্রেস বিধায়ক দল পরিবর্তন করায়, মেঘালয়েও তৃণমূল প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পেয়েছে।
এমত অবস্থায় জাতীয়স্তরে রাজনীতির কথা মাথায় রেখেই দলের সংবিধানে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওয়ার্কিং কমিটিতে বাংলার বাইরের রাজ্যের তৃণমূল নেতারাও স্থান পাবেন। বৈঠকের পর ডেরেক বলেন, ‘এখন তৃণমূলের সংবিধান অনুযায়ী ২১ জন সদস্য রয়েছেন। সংখ্যা বাড়ানো হবে। নেত্রীকেই সেই দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নতুন বেশ কয়েক জনকে কমিটিতে নেওয়া হবে।’
তৃণমূলের রবিবারের এই বৈঠকে ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা ছাড়াও হাজির ছিলেন ত্রিপুরা, মেঘালয়, উত্তরপ্রদেশ, গোয়ার তৃণমূল নেতারা। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও প্রাক্তন বিজেপি নেতা যশবন্ত সিন্হা, মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা, হরিয়ানার নেতা অশোক তনওয়ার, প্রাক্তন জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) নেতা পবন বর্মা এবং টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের শুরুতে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়। সর্বভারতীয় স্তরে কী ভাবে তারা এগোবে, সে বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়।
আরও পড়ুন – আলাপন মামলায় হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে ‘রাজনীতির রং’, সুপ্রিম কোর্টে বলল কেন্দ্র
ডেরেকের কথায়, ‘বাংলা ভারতকে মে মাসে দেখিয়েছে। ২০২৪ সালে সারা দেশকে পথ দেখাবে। দল বড় হচ্ছে। আমরা গ্রোয়িং পার্টি। ২০২৪ সালে তৃণমূল গোটা দেশকে পথ দেখাবে। সর্বভারতীয় স্তরে শক্তি বাড়ানোর কাজ এখন থেকেই শুরু হবে। তবে তৃণমূলের ডিএনএ পরিবর্তন হচ্ছে না। শুধু দলের সংবিধান পরিবর্তন করা হচ্ছে।’ এই ওয়াকিং কমিটির পরবর্তী বৈঠক দিল্লিতে হবে বলেও এদিন জানান ডেরেক।
সর্বভারতীয় স্তরে তৃণমূল কংগ্রেস যে কৌশল বদলাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সদ্য দিল্লি সফরের মধ্যেই তার খানিক আভাস মেলে। দলনেত্রীর কথাতেই কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্বের ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যায়। সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তিনি দেখা করবেন কি না, সাংবাদিকদের সেই জিজ্ঞাসার জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাত্পর্যপূর্ণ মন্তব্য ছিল, প্রতিবার দিল্লি এলেই কি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে হবে?
বিভিন্ন রাজ্যে একের পর এক কংগ্রেস নেতাকে দলে টানায় সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কের রসায়নটা যে বদলাবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে কোনও সন্দেহ নেই। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সঙ্গে যদি তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি হয়, তা হলে জাতীয় রাজনীতিতে মমতার কৌশল কী? এই কৌতূহলের জায়গা থেকেই তৃণমূলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের দিকে অনেকেরই নজর ছিল।
এদিন বৈঠক শেষে বোঝাই গেল বিজেপি (BJP) বিরোধিতায় কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে ‘একলা চলো’ নীতি নিচ্ছে ঘাসফুল শিবির। দলনেত্রী আগেই সেই সংকেত দিয়েছেন। সূত্রের খবর, এদিন ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকেও এই অবস্থান নিয়ে কোনওরকম ধোঁয়াশা রাখা হয়নি। তবে কংগ্রেস তৃণমূলের সঙ্গে আসতে চাইলে সে ক্ষেত্রে মমতা স্বাগতা জানাবেন। বৈঠকে সর্বসম্মতিতে স্থির হয়েছে, নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই শেষ কথা। ডেরেক এ-ও জানান, আগামী দিনে দলের সংবিধানে যা যা পরিবর্তন হবে, সে বিষয়ে শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। ওয়ার্কিং কমিটিতে কারা আসবেন, তা ঠিক করার দায়িত্বও ‘সুপ্রিমো’র।