Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeখেলাEmiliano Martinez | প্রোলেতারিয়েতের দুর্গরক্ষক

Emiliano Martinez | প্রোলেতারিয়েতের দুর্গরক্ষক

মার্টিনেজের সঙ্গে আমার অপ্রত্যাশিত কানেক্টও তৈরি হল দারিদ্র্য নিয়ে কথা উঠতে

Follow Us :

কলকাতা: শর্টস পরে আসায় এবং মোটামুটি মিনিটকুড়ি মোহনবাগান মাঠের মঞ্চে পাশে বসার সুবাদে একেবারে কাছ থেকে এমিলিয়ানো মার্টিনেজের পায়ের পেশী দেখার সুযোগ হচ্ছিল। যথেষ্ট রোগাসোগা। কাছ থেকে দেখে মনেই হয় না এই লোকটা যে মাঠে এমন হাট্টাগোট্টা হয়ে উঠতে পারে। বক্সের ওপর প্রতিনিয়ত যে বিপক্ষের সঙ্গে ঝগড়া করতে পারে। রেফারির চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে। রোনাল্ডো-কে যে চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারে অন্য লোককে দিয়ে পেনাল্টি মারাচ্ছিস কেন? হিম্মত থাকে তো নিজে আয়। তার চেয়েও আশ্চর্য, এর যা বিষয়সম্পত্তি সামান্য ক’দিনেই হয়েছে তাতে আপাতত ভূমধ্যসাগরের ওপর ইয়ট নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর কথা। উন্নত ফুটবলবিশ্বের কাছে ম্যাপের বাইরে থাকা কলকাতায় আসার জন্য অবশ্যই এমন কিছু উপার্জন করেনি যা দ্রুত চুটকি এনডোর্সমেন্ট থেকে করে নিতে পারত না। আজ পর্যন্ত কোনও খেলার কারেন্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতে দৌড়ে এসেছে দেখাতে পারেন? তা-ও তাঁকে প্রবল প্রতিপত্তিসম্পন্ন কোনও আম্বানি বা আদানি আনেনি। মার্টিনেজ যে দেড়ঘন্টার জার্নি করে শতদ্রু দত্ত-র রিষড়ার বাড়ি গিয়ে অভিভূত হয়ে যান। বলেন, “খুব ভালো যে তুমি শেকড়কে ভোলোনি। শেকড়ে থাকাই আসল।” সেটা শুনে এতটুকু আশ্চর্য  হইনি।

মার্টিনেজের সঙ্গে আমার অপ্রত্যাশিত কানেক্টও তৈরি হল দারিদ্র্য নিয়ে কথা উঠতে। নইলে এসব অনুষ্ঠানে মহাতারকা আর অপরিচিত সংযোজকে পরিচিত হওয়ার সুযোগই হয় না। বড়জোর ভদ্রতা করে চিফ গেস্ট অ্যাঙ্করকে বলে ভালো বলেছেন। বলাটা সম্পূর্ণ পোশাকি। বসার অ্যারেঞ্জমেন্টও স্বাভাবিকভাবে ছিল দূরে। মার্টিনেজের এক দিকে নগরপাল বিনীত গোয়েল। আর একপাশে মোহনবাগান সচিব। তাঁর পাশে মার্টিনেজের সঙ্গে থাকা ম্যানেজার।

মার্টিনেজকে ডাকার আগে ইন্ট্রোডাকশনে বলছিলাম যে ওঁর কৃতিত্বের কাহিনী যে কোনও লড়ুয়ে মানুষের মন স্পর্শ করবে। একটা সতেরো বছরের ছেলে দূর দেশে অজানা ভবিষ্যতে পাড়ি দিতে যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে সে পড়তে যাচ্ছে না –যে গেল। গিয়ে নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হল। সে যাচ্ছে পেশাদার ফুটবলের মোহনায়। যে কোনও কিছু এর পর ঘটতে পারে তার জীবনে। সে বাতিল হতে পারে। সুযোগ পেয়ে ব্যর্থ হতে পারে। আবর্জনা ঘোষিত হতে পারে। সেসব বাদ দিয়েও ঘরের ছেলেকে এমন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে দেওয়া। তাই কাঁদছিল তার ভাই। কাঁদছিলেন তার মা। ছেলেটা কাঁদছিল না। সে জানত রুটির সংস্থানের জন্য সে বাইরে না গেলে সংসারের পেট চলবে না। কান্নাটা সে অবশিষ্ট রেখেছিল এফএ কাপ ফাইনালের জন্য। যখন দশ বছর অপেক্ষার পর মূল টিমে সুযোগ পেয়ে সে চ্যাম্পিয়নশিপ জিতল। আর টিমমেটরা যখন উৎসবে মত্ত, সে বিজ্ঞাপন বিলবোর্ডে পিঠ রেখে ভিডিও কল করছিল তার পরিবারকে। আর কাঁদছিলো। বিশ্বকাপ পদকের চেয়েও গভীর সেই কান্নাটা শুধু ফুটবল নয় যে কোনও পেশার  মানুষের কাছে অনুপ্রেণামূলক যে চাইলে তুমিও দারিদ্র্যকে হারিয়ে মাল্টিস্টোরিডে চড়তে পারবে। দোহা পদক নয়। বায়োপিকের মূল থিম হতে পারে ওই কান্নাটা।

মার্টিনেজ এবার পোডিয়ামে যাচ্ছেন। আমি ফিরে যাচ্ছি নিজের জায়গায়। হাত দিয়ে দেখালেন। মুখ নিচু করে বোঝালেন তিনি আবেগরুদ্ধ। নিজের বক্তব্যেও বললেন, “আমাদের বন্ধু যা বলছিলেন সেটা সত্যি একটা আবেগ।” সেই মনোভাব থেকে সুযোগ নিই চারটে প্রশ্ন করার। প্রোগ্রাম ফ্লো চার্টে মিনি ইন্টারভিউ ব্যাপারটা ছিল না। পুলিশের লোকেরাও নিশ্চিত ছিলেন না মার্টিনেজকে অ্যাপ্রোচ করা উচিত হবে কি না ?কারণ শর্তে আছে ফ্রেন্ডশিপ কাপ ওপেন করা। ইন্টারভিউ দেওয়া নয়।

যেহেতু গ্যালারি থেকে ভেসে আসা তীব্র চিৎকারে অনেকে হয়তো মার্টিনেজের কথা ভালো করে শুনতে পাননি। তাই কথোপকথন আবার তুলে দিলাম। সঙ্গে থাকল কিছুক্ষণ পর আমার সঙ্গে পাশাপাশি বসে ইনফরমাল আলোচনাও। মোহনবাগান সচিব জায়গাটা না ছেড়ে দিলে আরও ছ-সাতটা প্রশ্ন অসমাপ্ত থাকতো। মনে হল অন্তত আর্জেন্তিনীয় ভক্তদের জন্য সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকার তুলে দেওয়া উচিত।

গৌতম: মেসির পেনাল্টি কখনও বাঁচিয়েছেন?

মার্টিনেজ: হ্যাঁ বাঁচিয়েছি (হাসি )

গৌতম: প্র্যাকটিসে?

মার্টিনেজ: না, ম্যাচে। যদিও প্র্যাকটিসে মারা পেনাল্টিতে ও বেশ কয়েকবার গোল করেছে আমার বিরুদ্ধে। মেসি অতুলনীয়।

গৌতম: কলকাতা কেমন আর্জেন্টিনা পাগল আপনি দেখতেই পাচ্ছেন। আপনি যদি দোহার ফাইনালের দিন ওখানে না থেকে কলকাতা ঘুরতেন আপনার অবাক লাগতো এত ভালোবাসে লোকে? সেই সমর্থকদের একটা অংশ আজও ভাবে,আহা নব্বইয়ের বিশ্বকাপ ফাইনালে যদি আন্দ্রেস ব্রেমের পেনাল্টিটা আপনি সামলাতেন? তাহলে হয়তো আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হত না।

মার্টিনেজ: (চোখ বড় বড়) কী বলছেন? তার দু’বছর পর তো আমি জন্মাই।

গৌতম: জানি। আসলে সেই ম্যাচের গোলকিপার গয়কোচিয়া আজও দুঃখ করেন যে একটুর জন্য শটটা বাঁচাতে পারেননি। চেনেন ওঁকে? গোলটা নিশ্চই ইউটিউবে দেখেছেন ?

মার্টিনেজ: নিশ্চয়ই চিনি। উনি খুব বড় গোলকিপার ছিলেন। আমাকে খুব ইন্সপায়ার করেছেন গয়কোচিয়া। ভারতীয় গোলকিপারদের একইভাবে আমি ইন্সপায়ার করতে চাই। আপনি যা বললেন সেই গোলটার ক্লিপ দেখেছি। কিন্তু আমি থাকলে হয়তো বেঁচে যেত, ওভাবে বলা যায় না। আমাকে অনেক বলেছে তুমি যদি ২০১০ সালে থাকতে আমাদের বিশ্বকাপে এই রেজাল্ট হত না। আমি বরঞ্চ এই আলোচনায় যোগ দেওয়ার চেয়ে কোপা আমেরিকাতে কনসেনট্রেট করতে চাই। ওটায় চ্যাম্পিয়ন হতে হবে আমাদের।

গৌতম: টাইব্রেকারে এই যে আপনি তীব্র নাটক তৈরি করেন। আমরা টিভিতে অবাক হয়ে দেখি। বা দোহাতে সামনে থেকেও দেখেছি সামনে কীভাবে মাইন্ডগেমস খেলেন বিপক্ষ শুটারের সঙ্গে। অনেকেই মনে করে এর পেছনে রয়েছে কৌশলী চিত্রনাট্য। প্রশ্ন হলো সেটা কি আপনি একা তৈরি করেন? না তার পেছনে রয়েছে কোনও মনোবিদের পরামর্শ?

মার্টিনেজ: সবার সঙ্গে আলোচনা হয়। টিম কথা বলে। মনোবিদের সঙ্গে কথা হয়। প্রত্যেকটা জিনিস প্রাকটিস হয়। আপনাকে বুঝতে হবে বিশ্বপর্যায়ে একশো কুড়ি মিনিট খেলা হওয়ার পর বিধস্ত থাকে শরীর। পেশিগুলো আর টানতে চায় না। সেই সময় আপনাকে মনকে অসম্ভব স্ট্রং রাখতে হয়। মনই তখন আসল।

গৌতম: নেদারল্যান্ডস ম্যাচ মনে আছে? সেমি ফাইনাল।

মার্টিনেজ: না, কোয়ার্টার ফাইনাল।

গৌতম: হ্যাঁ, কোয়ার্টার ফাইনাল। যেভাবে ০-২ থেকে ডাচরা সেদিন ২-২ করে ফেলেছিল তাতে মাঠে বসে দেখেছিলাম মেসি অবধি যেন লড়াই ছেড়ে দিয়েছেন। সেদিনই আপনারা বিশ্বকাপের বাইরে চলে যেতেন। সেই অবস্থা থেকে আপনি লড়াই করে না ফেরালে…

মার্টিনেজ: ইয়েস ওই দিনটা খুব কঠিন ছিল। কিন্তু সেটাই তো দুর্গরক্ষক হিসেবে আমার কাজ। টিম যখন নুয়ে পড়েছে তখন গোলকিপারের টিমকে টেনে তোলা। মনে রাখবেন  ফুটবল ইজ আ মেন্টাল গেম।

গৌতম: বলা হচ্ছে অতীতে লেভ ইয়াসিন। তারপর ম্যানুয়েল ন্যুয়র। আধুনিক সময়ে এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।

মার্টিনেজ: না না। আমি ওদের পাশে বসার মতো নই। এখনও অনেক উন্নতি করতে হবে আমাকে।

গৌতম: একটা কথা বলুন। পরের বিশ্বকাপ ডিফেন্ড করার সময় আপনাদের সঙ্গে মেসি থাকবেন না — ভাবনাটাই কি চরম আতঙ্কজনক নয়?

মার্টিনেজ: এতটুকু না। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা আমরা করতে চাই প্রতিজ্ঞা আর প্যাশন দিয়ে। আমাদের দলে একাধিক বাঘ রয়েছে যারা যুদ্ধের জন্য তৈরি।

কী  বুঝলেন? একমত আমার দেওয়া হেডলাইনের সঙ্গে —প্রলেতারিয়েতের দুর্গরক্ষক?

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
বাংলার ৪২ | বারাসতে কোন দল এগিয়ে?
05:05
Video thumbnail
চতুর্থ স্তম্ভ | Fourth Pillar | ২৫শে বৈশাখ, হে নূতন
12:55
Video thumbnail
আজকে (Aajke) | শুভেন্দু বলেছিলেন বোমা ফাটিবে, সে বোমা কোথায় ফাটিল?
10:04
Video thumbnail
Politics | পলিটিক্স (08 May, 2024)
12:46
Video thumbnail
বাংলা বলছে | রাহুলকে নিশানা, মোদির মুখে অম্বানি-আদানি, কত কালো টাকা নিয়েছে কংগ্রেস, প্রশ্ন মোদির
38:28
Video thumbnail
Beyond Politics | সন্দেশখালি, মণিপুর এবং নারীসম্মান
07:58
Video thumbnail
SSC Scam | নিয়োগ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সংক্ষিপ্ত রায়ে স্বস্তিতে রাজ্য সরকার
03:01
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | আবার শুভেন্দুকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান
02:33
Video thumbnail
Narendra Modi | আম্বানি-আদানি নিয়ে রাহুল কেন নীরব, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রী মোদির
05:16
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধে রণহুঙ্কার | রায় শুনে আমার মনস্নিগ্ধ হয়েছে : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
04:19