ভারত–৪ ওয়েলশ–২
(সামশের, আকাশদীপ, হরমনপ্রীত) (কারসন, জ্যাকব ড্রেপার)
স্বদেশের মাটিতে ভরা গ্যালারির সামনে বিশ্ব কাপ হকির গ্রুপ লিগের তিনটে ম্যাচে ভারত যা খেল দেখাল তাতে তাদের দৌড় শেষ পর্যন্ত কোথায় থামবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই গেল। বৃহস্পতিবার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে ভারত অনেক কষ্ট করে ওয়েলশকে হারাল বটে, কিন্তু তাতে তাদের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌছল হল না। সেই জায়গায় পৌছতে হলে রবিবার নিউ জিল্যান্ডকে হারাতে হবে ভারতকে। হরমনপ্রীতদের গ্রুপে এক নম্বর হয়ে শেষ আটে এদিনই চলে গেল ইংল্যান্ড। এদিন গ্রুপের শেষ ম্যাচে তারা ৪-০ গোলে হারিয়ে দিল স্পেনকে। ভারতও জিতল ওয়েলশের বিরুদ্ধে। এতে ইংল্যান্ড ও ভারত দুই দলেরই তিন ম্যাচে হল সাত পয়েন্ট। কিন্তু গোল পার্থক্যে ইংল্যান্ড (৯) অনেক এগিয়ে ভারতের চেয়ে (৪)। তাই গ্রুপে এক নম্বর হল ইংল্যান্ড। ভারত হল দুই। রিভার্স ম্যাচে ভারতকে এখন হারাতে হবে সি গ্রুপের তিন নম্বর নিউ জিল্যান্ডকে। তবেই ভারত পৌছবে শেষ আটে।
নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারত হয়তো জিতে যাবে। কিন্তু তারপর ভারতের ভবিষ্যৎ যে খুব ভাল তা বলা যাবে না। তিনটে ম্যাচে এদিনই প্রথম পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল পেল ভারত। একেবারে শেষ দিকে সিই গোলটি করলেন হরমনপ্রীত। অথচ ভারতের এই ড্র্যাগ ফ্লিকার এর অগে পেনাল্টি কর্নার থেকে প্রচুর গোল করেছেন। এবারের বিশ্ব কাপে তিনটে ম্যাচে মাত্র একটা গোল এল তাঁর স্টিক থেকে। তাও আবার গ্রুপের দুর্বলতম ওয়েলশের বিরুদ্ধে। এই জায়গাটায় ভারত বেশ পিছিয়েই রয়েছে। এদিন আবার ওয়েলশের কাছেও দু গোল খেতে হল। সেটাও ভারতের ডিফেন্সের পক্ষে ভাল বিজ্ঞাপণ নয়। বিশ্ব জয় তো দূর অস্ত, সেমিফাইনালে যেতে হলেও ভারতকে অনেক ভাল খেলতে হবে। সেটা সম্ভব কিনা তার উত্তর এদিনের ম্যাচ দেখে পাওয়া গেল না।
ভারতের প্রথম গোল ২২ মিনিটে। হরমনপ্রীতের পেনাল্টি কর্নার হিট ওয়েলশ গোলকিপার প্রতিহত করলে বক্সের বাইরে থেকে বল ধরে দুর্দান্ট হিটে গোল করলেন শামশের সিং। বিরতির সময় ভারত ওই এক গোলেই এগিয়ে ছিল। বিরতির পর ৩২ মিনিটে ভারতের হয়ে দ্বিতীয় গোলটি করলেন আকাশদীপ সিং। একটি সম্মিলিত আক্রমণ থেকে বল পেয়ে ডি বক্সের মধ্যে ঢুকে আকাশদীপ যে শটটি নেন তা গোলে ঢুকে যায়। দু গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর মনে হচ্ছিল ভারত বুঝি এবার আরও গোল করবে। কিন্তু দুর্দান্তভাবে ম্যাচে ফেরে ওয়েলশ। তিরিশ হাজার দর্শককে অবাক করে তারা পর পর দুটো গোল করে ফেলে। প্রথমে পেনাল্টি কর্নার থেকে সরাসরি শ্রীজেশকে হার মানান কারসন। এর একটু পরেই ফারলংয়ের শট শ্রীজেশ আটকে দিলে বল পান জ্যাকব ড্রেপার। তাঁর দুর্দান্ত হিট শ্রীজেশকে নড়তে না দিয়ে গোলে ঢুকে যায়। তৃতীয় কোয়ার্টার যখন শেষ হচ্ছে তখন খেলার ফল ২-২।
চতুর্থ কোয়ার্টারে অবশ্য ভারত খেলার রাশ নিজেদের হাতে নেয়। ৫০ মিনিটেই ভারত আবার এগিয়ে যায়। সুখজিৎ সিংয়ের সঙ্গে পাস খেলে এগোতে এগোতে ডি বক্সের মধ্যে ঢুকেই রিভার্স ফ্লিকে গোল করেন আকাশদীপ। ম্যাচের ছয়টা গোলের মধ্যে এটাই সেরা। এর পর ওয়েলশ বেশ কয়েকটা আক্রমণ তুলে আনে। কিন্তু ভারতের দ্বিতীয় গোলকিপার কৃষাণ বাহাদুর পাঠক বেশ ভাল খেলায় আর গোল খায়নি ভারত। শেষ দিকে হরমনপ্রীত পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করলে ভারত এদিনের মতো উতরে গেল বটে। কিন্তু তাদের আসল লড়াই শুরু হবে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর।