আমাদের সম্পাদক কৌস্তুভ রায় ২২৬ দিন জেলেই আছেন। আগেই জানিয়েছি যে এক কনভিকটেড আসামির বয়ান আর নাকি তার ইমেল করে পাঠানো এক হিসেবের কাগজের ভিত্তিতে তাঁকে জেলে রাখা হয়েছে। অনেক নথি আছে এবং তার একটা নথি ওই জেল খাটা আসামির কাছ থেকে পাওয়া এমন কিন্তু নয়, ওই একমাত্র সবেধন ডকুমেন্ট-এর ভিত্তিতে তাঁকে জেলে পুরে রাখা হয়েছে। জানিয়েছিলাম যে সেই ডকুমেন্ট একটা হলেও অভিযোগের তালিকাতে অ্যামাউন্ট, মানে কত টাকা নিয়ে এই অভিযোগ তৈরি হয়েছে তা বদলে বদলে যাচ্ছে। বিষয়টা খানিকটা এরকম যে পুলিশ এক চোরকে আদালতে পেশ করে বলল প্রমাণের ভিত্তিতে বোঝা যাচ্ছে যে এই লোকটি ৩০০০ টাকা চুরি করেছে। পরের দিন সেই পুলিশই আদালতে বলল এই লোকটি ৩৯০০ টাকা চুরি করেছে, আবার তার পরের দিন জানাল যে এই লোকটি ৪৩০০ টাকা চুরি করেছে। একই তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে যদি অভিযোগ দায়ের করা হয়, তাহলে টাকার অঙ্ক বদলাবে কেন?
বদলাতে পারে একমাত্র তখনই যখন ওই নথি কনককটেড হবে, ষড়যন্ত্র করে বানানো হবে। আর বানানো ডকুমেন্টস-এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হল তাতে অসংখ্য ভুল থেকে যাওয়া, এক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে। হিসেবের খাতার যে ক’টা পাতা দেওয়া হয়েছে, তাতেও আছে অসংখ্য ভুল। একে একে জানাই সেগুলো। প্রথম ভুল দেখা যাচ্ছে ৫৩টা এন্ট্রি আছে ওই হিসেবের খাতায় যেখানে ক্যাশ দেওয়া হয়েছিল, সব মিলিয়ে মোট এক কোটি বত্রিশ লক্ষ আশি হাজার টাকার, কিন্তু তার কোনও ভাউচার নম্বর নেই। হিসেবশাস্ত্র বলে, একটা টাকাও দিলে তার একটা ভাউচার হবে আর সেই ভাউচারের একটা নম্বর থাকবে। ওই কনভিকটেড আসামির পাঠানো হিসেবের কাগজে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্যাশ পেমেন্টের কোনও ভাউচার নেই। হয় তাড়াহুড়োতে সেটা দিতেই ভুলে গেছে, নাহলে নিয়ম মেনে ওই আসামি তার ব্যবসা চালাত না, যে কথা উচ্চ আদালতের বিচারকরা তাঁদের রায়ে বলেছেন। কিন্তু সেই আসামির দেওয়া ওই হিসেবের কাগজের ভিত্তিতে একজন জেলে, তিনি একটা নিউজ চ্যানেলের মালিক সম্পাদক। পরের ভুলে যাওয়া যাক, একই ভাউচার নম্বরে বিভিন্ন এন্ট্রি।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব-১০)
ধরুন ২১ জুলাই ২০১৪তে তিনি ৩ লক্ষ টাকার ক্যাশ দিয়েছেন, ভাউচার নম্বর ১২৩৯০। আবার ১১ অগাস্ট ওই একই ভাউচার নম্বর ১২৩৯০তেই অন্য কাউকে ৩ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে, এখানেই শেষ নয়। আবার ১৯ অগাস্ট ২০১৪তে ওই একই ভাউচার নম্বরে আবার ৩ লক্ষ টাকার ক্যাশ দেওয়া হয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪তে ২০৬৩১ ভাউচার নম্বরে ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে, আবার ২৭ অক্টোবরে ওই একই ভাউচারে দু’ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। ১৩৪৫১ ভাউচার নম্বরে ১৮ ডিসেম্বর, ২৭ ডিসেম্বর আলাদা আলাদা করে একবার ২ লক্ষ একবার ৩ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ উনি হয় হিসেব রাখেননি, সবটা বানানো, না হলে সবটা গুলিয়ে দেওয়ার জন্যই এক হিসেবের নাটক করেছেন। সেই অপরাধীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যখন কাউকে ২০০ দিনের বেশি জেলের মধ্যে পুরে রাখা হয় তখন এটা পরিষ্কার নয় কি যে এই গ্রেফতারির পিছনে আলাদা কোনও উদ্দেশ্য আছে। যা আমাদের সম্পাদক আমরা বার বার বলছি, এক এবং একমাত্র উদ্দেশ্য হল কলকাতা টিভি চ্যানেলের রাজনৈতিক মতামতকে চুপ করিয়ে দেওয়ার জন্যই এক ষড়যন্ত্রের শিকার আমাদের সম্পাদক। তাই আমরা জামিনও চাইছি না, মুক্তিও নয়, আমরা চাইছি জাস্টিস। জাস্টিস ফর কলকাতা টিভি, জাস্টিস ফর কৌস্তুভ রায়।
দেখুন ভিডিও: