কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: এই প্রথম। আন্তর্জাতিক মহাকাশবিজ্ঞানীদের হাতে এসে পৌঁছল মহাজাগতিক কৃষ্ণগহ্বরের (Black Hole) ছবি। যার অবস্থান ছায়াপথের কেন্দ্রে। ‘ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপে’ (EHT) ধরা পড়েছে কৃষ্ণগহ্বরের অতিকায় চেহারা। যার শরীর ঘোর কৃষ্ণবর্ণ।
আমাদের সৌরলোক যে ছায়াপথের অংশ, সেই মিল্কি-ওয়ে গ্যালাক্সির একেবারে কেন্দ্রে অবস্থান করছে অতিকায় বিশাল আকারের ওই কৃষ্ণগহ্বর। মহাজাগতিক এই অস্তিত্বের নাম রেখেছেন বিজ্ঞানীরা, ‘স্যাজিটেরিয়াস এ’ (Sagittarious A)। ধনুরাশির নক্ষত্রপুঞ্জে গহ্বরের অবস্থান দেখে।
ছায়াপথের কেন্দ্রে অন্ধকার গোলকের মত ওই গহ্বরের ছবি তুলেছে ‘ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ’। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কাছে কৃষ্ণগহ্বরের এই ছবি সাড়া ফেলে দিয়েছে। কেননা আমাদের ছায়াপথে এই প্রথম এ’রকম কোনও অন্ধকার মহাজাগতিক কূপের অস্তিত্ব ছবির আকারে ধরা পড়ল। এর আগে তিন বছর আগে দূরের একটি গ্যালাক্সি থেকে অন্য এক কৃষ্ণগহ্বরের ছবি টেলিস্কোপে ধরা পড়ে।
মিল্কি-ওয়ের একেবারে মাঝামাঝি এলাকায় এই কৃষ্ণগহ্বরের চেহারাটি অতিকায়। যদিও এর অস্তিত্ব অদৃশ্য। ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রাতীগ বা নিজের শরীরের দিকে অভিকর্ষীয় বলের টান এতটাই জোরালো হয় যে, কোনও বস্তুর অস্তিত্ব সেখানে ধরা পড়ে না। এমনকি মহাজাগতিক সমস্ত আলোকেও গিলে ফেলে ওই অন্ধকার সীমাহীন গভীর গর্ত। তা হলে কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব বোঝার উপায় কী? সমস্ত কিছু গিলে ফেলার পর কৃষ্ণগহ্বর তার বেষ্টনী ঘিরে উজ্জ্বল গ্যাস উদগীরণ করতে থাকে। গহ্বরটিকে ঘিরে থাকে ওই গ্যাসের বলয়। যে গ্যাস সূর্যের আলোর চাইতেও চল্লিশ লক্ষ গুণ উজ্জ্বল। গোলাকার বাঁকা এক উজ্জ্বল আলোর বলয়।
‘এ এক অভিনব দৃশ্য। এ এক মহাজাগতিক আবিস্কার। আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রে ঠিক কী হচ্ছে? মহাজগতের ওই অবস্থানে মহাকাশবিদ্যার কোন কোন অধ্যায় লেখা হচ্ছে? তা বুঝতে সাহায্য করবে কৃষ্ণগহ্বরের এই ছবি।’ বললেন, ‘ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ’ প্রকল্পের বিজ্ঞানী জিওফ্রে বোয়ার। দৈত্যাকার ওই কৃষ্ণগহ্বর তার চারপাশের মহাজগতের সঙ্গে কী ভাবে যোগাযোগ করে, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে, সেসবও বুঝতে সাহায্য করবে এই আবিস্কার।
প্রথমবার মহাজাগতিক দৈত্যাকার এই কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব ধরা পড়ে ১৯৭৪ সালে। যখন ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে এক ধরনের রেডিয়ো তরঙ্গ খুঁজে পাওয়া যায়, যা ছিল একেবারে ভিন্ন প্রকৃতির। ১৯৯০ সালে ছায়াপথের ওই এলাকায় একটি উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের কক্ষপথ আঁকেন বিজ্ঞানীরা। যে রেখচিত্র প্রমাণ করে কোনও দৈত্যাকার মহাজাগতিক অস্তিত্বের কথা। বিজ্ঞানীদের এই গবেষণাই ২০২০ সালে পদার্থবিদ্য়ায় নোবেল সম্মান এনে দেয়।