Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeখেলাIndia vs Australia: স্মৃতির সরণি বেয়ে বর্ডার-গাভাসকর সিরিজ

India vs Australia: স্মৃতির সরণি বেয়ে বর্ডার-গাভাসকর সিরিজ

Follow Us :

কয়েক ঘন্টা পরেই শুরু বর্ডার-গাভাসকর সিরিজ। কিন্তু কী এর ইতিহাস? এই সিরিজে কে দেখিয়েছে আধিপত্য? ১৯৯৬ সাল থেকে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজের নামকরণ করা হয় ‘বর্ডার-গাভাসকর’ সিরিজ নামে। এর আগে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া সিরিজের ৪৯ বছরের ইতিহাস রয়েছে। স্বাধীনতার পর অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রথম যায় ভারত। ১৯৪৭ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া সিরিজের সময়সূচী নির্দিষ্ট ছিল না। নিয়মিতভাবে হত না এই সিরিজ। ১৯৯৬ সালের পর থেকে নিয়মিতভাবে হতে থাকে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া সিরিজ ওরফে বর্ডার-গাভাসকর সিরিজ। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বর্ডার-গাভাসকর সিরিজকে ‘অ্যাশেজ’ এর থেকেও এগিয়ে রাখতে চান স্টিভ স্মিথ-প্যাট কামিন্সরা। এখনও পর্যন্ত বর্ডার-গাভাসকর সিরিজে সবথেকে সফল ব্যাটার শচীন তেন্ডুলকর। এই সিরিজে তাঁর সর্বমোট রানসংখ্যা ৩২৬২। অন্যদিকে, সবথেকে সফল বোলার ভারতের অনিল কুম্বলে। এই সিরিজে তাঁর উইকেটের সংখ্যা ১১১। একনজরে চোখ রাখা যাক ১৯৯৬ সাল থেকে হয়ে আসা বর্ডার-গাভাসকর সিরিজের দিকে…

১৯৯৬ সাল। সূচনা হয় বর্ডার-গাভাসকর সিরিজের। সেইসময়ের ভারত অধিনায়ক শচীন তেন্ডুলকর এবং অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক মার্ক টেলর। একটিমাত্র টেস্ট ম্যাচ আয়োজিত হয় দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায়। ওপেনার হিসেবে ১৫২ রান করে তাক লাগিয়ে দেন নয়ন মোঙ্গিয়া। ৬৬ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বল হাতে ভেল্কি দেখান অনিল কুম্বলে। দুই ইনিংস মিলে তুলে নেন ৯ উইকেট। মার্ক টেলরের অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ম্যাচ জেতে শচীন তেন্ডুলকরের ভারত।

১৯৯৭/৯৮- এ  অস্ট্রেলিয়া আবার আসে ভারতে।  এই সিরিজকে দেখা হচ্ছিল শচীন বনাম ওয়ার্ন-এই দুই মহাতারকার মহাসংগ্রাম হিসেবে।  তবে এই সিরিজে ওয়ার্নকে ছাপিয়ে একাধিপত্য দেখান মাস্টার-ব্লাস্টার। চেন্নাইতে শচীনের ১৫৫ রানের ইনিংস তাঁর টেস্ট কেরিয়ারের অন্যতম সেরা। শোনা যায় মাঠে উপস্থিত আম্পায়ারও মোহিত হয়ে যান শচীনের এই ইনিংসে। এরপর ইডেন টেস্টে আজহারের করা ১৬৩ রানের ইনিংস এখনও ফ্রেমবন্দি। ভারত সিরিজ জেতে ২-১ ব্যবধানে।

১৯৯৯ সালে  ভারতীয় দল যায় অস্ট্রেলিয়ায়। এই সিরিজে একাধিপত্য দেখান স্টিভ ওয়ার নেতৃত্বাধীন ব্যাগি-গ্রিনধারিরা। ভারত সিরিজে পরাজিত হয় ৩-০ ব্যবধানে। যদিও মেলবোর্নে শচীনের করা অতিমূল্যবান শতরান প্রশংসা কুড়িয়ে নেয় প্রত্যেকের। একইসঙ্গে সিডনিতে ভিভিএস লক্ষ্মণের করা অনবদ্য ১৬৭ রানের ইনিংস যথেষ্ট প্রশংসিত হয়। তবে সিরিজ শেষে তীব্র সমালোচিত হন ক্যাপ্টেন শচীন তেন্ডুলকর।

২০০১ সালে বর্ডার-গাভাসকর সিরিজ আয়োজিত হয় ভারতে এবং এই সিরিজ ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। টানা ১৫টি টেস্ট ম্যাচ জিতে ভারতে এসেছিল স্টিভ ওয়ার অস্ট্রেলিয়া। অজি বাহিনীকে মনে হচ্ছিল যেন অশ্বমেধের ঘোড়া। এই সিরিজের প্রথম টেস্টেও জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। পরের টেস্ট ইডেন গার্ডেনসেও জয় প্রায় নিশ্চিত ছিল অজি বাহিনীর। ভারতকে ফলো অন করিয়ে চাপে ফেলার চেষ্টা করে স্টিভ ওয়ার অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ভিভিএস লক্ষ্মণ (২৮১) এবং রাহুল দ্রাবিড়ের (১৮০) মহাকাব্যিক পার্টনারশিপের দরুন ফলো অনের পরেও ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচ জেতে ভারত। সঙ্গে অবশ্যই রয়েছে তরুণ হরভজন সিং-এর হ্যাটট্রিক। এরপর রুদ্ধশ্বাস চেন্নাই টেস্ট জিতে  সিরিজ জেতে সৌরভের টিম ইন্ডিয়া। এই সিরিজ চলাকালীন টসের সময় অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক স্টিভ ওয়া-কে দাঁড় করিয়ে রাখেন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এর মাধ্যমে স্লেজ-মাস্টার টিম অস্ট্রেলিয়াকে স্পষ্ট বার্তা দেন ভারত অধিনায়ক। অস্ট্রেলিয়াও বুঝে যায় এই ভারত আর আগের ভারত নয়। পরবর্তীতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন যে ব্লেজার পরতে ভুলে গিয়েছিলেন বলে টসের সময়ে যেতে দেরি হয়ে যায় তাঁর।

২০০৩-০৪ সালে সৌরভের নেতৃত্বে ভারত যায় অস্ট্রেলিয়ায়। এই সিরিজেও দারুণ খেলে ভারত। অ্যাডিলেডে জেতার সঙ্গে বর্ডার-গাভাসকর সিরিজ ধরে রাখে ভারত। সিরিজের ফলাফল ১-১। ব্রিসবেন টেস্টে চিন মিউজিকের বিপক্ষে সাহসী ১৪৪ রানের ইনিংস খেলে স্পষ্ট বার্তা দেন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এই সফরে অন্যান্য ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে নজর কাড়েন রাহুল দ্রাবিড়, শচীন তেন্ডুলকর এবং ভিভিএস লক্ষ্মণ। অ্যাডিলেড টেস্টে ৬ উইকেট নিয়ে নায়ক হয়ে ওঠেন অজিত অগারকর। সিডনি টেস্টের শেষ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিকেরা উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে অভিবাদন জানান ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। ভারত অধিনায়ক এই অভিবাদনের কারণ জানতে চাইলে অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকেরা বলেন, বিগত ২০ বছরে এভাবে কেউ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এসে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এভাবে লড়াই করেনি। উল্লেখ্য, স্টিভ ওয়া সিডনি টেস্ট খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। 

২০০৪-০৫ সালে অস্ট্রেলিয়া ভারত সফরে আসে। এবারে বেশ কিছু বিতর্কের মুখোমুখি হয় ভারতীয় দল। বেঙ্গালুরু টেস্টে বিশ্রীভাবে হার স্বীকার করে ভারত। এরকম মনে করা হয় পিচ নিয়ে অসন্তোষের কারণে নাগপুর টেস্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সৌরভ দলে নেই কেন?-এই প্রশ্ন অজি অধিনায়ক করলে তার যথার্থ উত্তর দিতে পারেননি রাহুল দ্রাবিড়। ভারতের জন্য ইতিবাচক দিক একটাই। ওয়াংখেড়েতে শেষ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ১০৭ রানের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েও ১৩ রানে জয় পায় ভারত। বল হাতে নায়ক হয়ে ওঠেন হরভজন সিং এবং মুরলী কার্তিক।  তবে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ জেতে ২-১ ব্যবধানে।

২০০৭-০৮ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে যায় ভারত। বিতর্কে ভরা এই সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। জঘন্য আম্পায়ারিং সহ রয়েছে ‘মাঙ্কিগেট’ স্ক্যান্ডাল। অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগে জেরবার হয়ে যান হরভজন সিং এবং অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। এই সিরিজেই মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কেরিয়ারের শততম টেস্ট ম্যাচটি খেলে ফেলেন। এছাড়া এই সিরিজে পন্টিং-ইশান্তের দ্বৈরথ ছিল চোখে পড়ার মতো। কুম্বলের নেতৃত্বে পার্থে  ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ও ভোলার নয়।

২০০৮-০৯ সালে অস্ট্রেলিয়া আসে ভারতে। ২-০ ব্যবধানে এই সিরিজ জেতে ভারত। নাগপুরে সিরিজের শেষ টেস্ট খেলে অবসর গ্রহণ করেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ঠিক তার আগের টেস্টে ফিরোজ শাহ কোটলায় আচমকা অবসর নেন অধিনায়ক অনিল কুম্বলে। সিরিজে মোহালি টেস্টে শতরান করেন শচীন তেন্ডুলকর এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সৌরভ তাঁর আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের শেষ শতরান যখন করেন, তখন নন স্ট্রাইকিং এন্ডে মহেন্দ্র সিং ধোনি। নাগপুরে শেষ টেস্ট ম্যাচ চলাকালীন একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। অস্ট্রেলিয়া দলের ৯ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সেই টেস্টের অধিনায়ক ধোনি সৌরভকে অধিনায়কত্ব হস্তান্তরিত করেন। মুহূর্তে আবেগে ভাসে আসমুদ্রহিমাচল। সৌরভের প্রতি ধোনির এই সম্মান প্রদর্শন প্রশংসা কুড়িয়ে নেয় প্রত্যেকের।

২০১০ সালে দু’টি টেস্ট ম্যাচের সিরিজ খেলতে ভারতে আসে। এখানেও আধিপত্য দেখায় ভারত। মোহালি টেস্টে ভারতের হার প্রায় নিশ্চিত মনে করা হচ্ছিল। সেখান থেকে ৭৩ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলে ভারতকে ম্যাচ জেতায় ভিভিএস লক্ষ্মণ। উইকেটের ওপর প্রান্তে শিট অ্যাঙ্করের ভূমিকায় দেখা যায় ইশান্ত শর্মাকে। এরপর বেঙ্গালুরুতেও জয় পায় ভারত।

২০১১-১২ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে যায় ভারত। অস্ট্রেলিয়ান দলের দাপটের সামনে টিকতে পারেনি ভারত। সিরিজ হারে ৪-০ ব্যবধানে। তীব্র সমালোচিতে হন ক্যাপ্টেন মাহি।

২০১২-১৩ সালে অস্ট্রেলিয়া আসে ভারতে। এবারে বদলা নেয় টিম ইন্ডিয়া। চেন্নাইতে প্রথম টেস্টে ২২৪ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে সতীর্থদের স্পষ্ট বার্তা দেন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। ভারত সিরিজ জেতে ৪-০ ব্যবধানে।

২০১৪-১৫ সালে ভারত আবার অস্ট্রেলিয়া সফরে যায়। এই সিরিজেই বক্সিং ডে টেস্টের শেষ দিনে আচমকা টেস্ট অধিনায়কত্বকে আলবিদা জানান মহেন্দ্র সিং ধোনি। অ্যাডিলেডে বিরাট কোহলির আক্রমণাত্মক এবং লড়াকু শতরান স্মৃতিতে রয়েছে প্রত্যেকের। যদিও ভারত সিরিজ হারে ২-০ ব্যবধানে।

এরপর ২০১৭ সালে শেষবার বর্ডার-গাভাসকার সিরিজ খেলতে ভারতে আসে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম টেস্টে ৩৩৩ রানে জিতে সিরিজের শুরুটা দারুণ করে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু দুরন্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের জন্য নজর কাড়েন রবীন্দ্র জাডেজা। অবশেষে ভারত সিরিজ জেতে ২-১ ব্যবধানে।

২০১৮-১৯ এবং ২০২০-২১ এ পরপর দু’বার অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দেয় ভারত। উল্লেখযোগ্যভাবে দু’বারই সিরিজ জেতে ভারত। প্রথম সফরে নায়ক হয়ে ওঠেন চেতেশ্বর পূজারা। দ্বিতীয় সফরে অ্যাডিলেডে ৩৬ রানে অল আউট হয়েও সিরিজে দুরন্ত কামব্যাক করে টিম ইন্ডিয়া। ‘অবিশ্বাস্য ব্রিসবেন’-এর সাক্ষী থাকে আসমুদ্রহিমাচল। ঋষভ পন্থ, মহম্মদ সিরাজ, ওয়াশিংটন সুন্দররা হয়ে ওঠেন ভারতের সিরিজ জয়ের অন্যতম কাণ্ডারি…

RELATED ARTICLES

Most Popular