কলকাতা: শুক্রবার রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে ১১ জন উপাচর্যকে নিয়োগ করেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, তাঁদের মান্যতা দিচ্ছে না রাজ্য সরকার। শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সে কথা সাফ জানিয়ে দিলেন। তিনি এদিন রাজভবনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলেন। ব্রাত্য দাবি করেন, উপাচর্যদের নিয়োগ সম্পর্কিত কোনও আলোচনা রাজভবনের সঙ্গে হয়নি রাজ্য সরকারের। এমনকী রাজভবনের সব বক্তব্যকে মিথ্যে বলে অভিযোগ করেন ব্রাত্য।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাজ্যের ১১ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিয়োগপত্র দেন রাজ্যপাল বোস। রাজ্যের তরফে তখনই জানানো হয়েছিল, নবান্ন এই বিষয় কিছুই জানত না। এই ঘটনার জেরে বেজার চটেছে রাজ্য সরকার। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, এই নিয়োগ বেআইনি। এরপর থেকেই নবান্ন এবং রাজ্যভবনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাতের মাত্রা একবারে চরমে ওঠে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস রাতেই বিবৃতি দিয়ে রাজ্যে বক্তব্য খণ্ডন করেন। শুক্রবারই রাজভবনে এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে তিনি বলেন, আলোচনা করা মানেই যে সহমত হতে হবে তার কোনও মানে নেই। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই কথা বলে রাজ্যপাল রাজ্যকে বার্তা দিতে চাইলেন, তিনি তাঁর মতোই চলবেন।
আরও পড়ুন: Mithun Chakraboty | ৬ মাসের মুখ্যমন্ত্রী হলে রাজ্যটাকে বদলে দেবেন, দাবি মিঠুনের
এদিক সাংবাদিক বৈঠকে ব্রাত্য বলেন, গতকাল যাঁরা নিযুক্ত হয়েছেন, তাঁদের কাছেই পুরো প্রক্রিয়াটা ধোঁয়াশায় ভরা। আমার কাছেও বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। নিয়োগপত্র দিয়েছেন রাজ্যপাল, অথচ তাতে মেমো নম্বর নেই। বিষয়টি নিয়ে আমার আইনি পরামর্শ নিচ্ছি।
ব্রাত্য আরও বলেন, গতকাল রাজভবন থেকে যে বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে, তার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাব রাজ্যপালকে। রাজভবন এই প্রথম স্বীকার করল যে, উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে আলোচনা আইনিভাবে প্রয়োজনীয়। আইন অনুযায়ী, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে আচার্যের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ শিক্ষা দফতরের প্রধান সচিব মারফত করতে হয়।
এদিন শিক্ষামন্ত্রী আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি প্রত্যেকটিই স্বশাসিত। সরকার উপাচার্যদের কাছে সাপ্তাহিক কাজের রিপোর্ট চায় না। রাজভবন কেন চাইবে, সেটাই প্রশ্ন। তিনি বলেন, আমরা রাজ্যপালকে সম্মান দিতে চেয়েছিলাম। তবে উচ্চশিক্ষা দফতরকে এড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, প্রাক্তন রাজ্যপাল জকদীপ ধনখড়ের সময় নবান্ন এবং রাজভবনের মধ্যে সুমধুর সম্পর্ক না থাকলেও বর্তমান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস যখন প্রথমদিকে কলকাতা আসেন, তখন তাঁর সঙ্গে নবান্নে সুমধুর সম্পর্কের ছবি দেখতে পেয়েছে রাজ্যবাসী। এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌজন্যে বার্তা দিয়ে একাধিকবার একই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল বর্তমান রাজ্যপালকে। ধীরে ধীরে সেই সম্পর্কে যে ফাটল ধরেছে তা আগেই আঁচ করা গিয়েছিল। তবে রাজ্য সরকারের মতামত ছাড়া ১১ জন উপাচার্যের নিয়োগের ঘটনা সেই দূরত্বটাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।