কলকাতা: পঞ্চায়েত ভোটে (Panchayat Election) প্রাক্কালেই দুয়ারে সরকার প্রকল্পের ধাঁচে তৃণমূল কংগ্রেস দলীয় স্তরে ‘দিদির সুরক্ষাকবচ’ (Didir suraksha kabaj) নামে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করল। সামনে আনা হল ‘দিদির দূত’ (Didir Doot App) নামে নতুন অ্যাপ। নতুন সুরক্ষাকবচ প্রকল্পে বলা হল, দলের তিন লক্ষ কর্মী দু কোটি পরিবারের ১০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছবেন। আগামী ৬০ দিন ধরে চলবে এই কর্মসূচি। সর্বস্তরের মানুষ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পের সুয়োগ-সুবিধা পাচ্ছেন কি না, তা খতিয়ে দেখবেন দলের ওই কর্মীরা। সুযোগ-সুবিধা না পেলে মানুষকে তাঁরা সাহায্য করবেন। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, ৩৫০ জন কর্মীকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রাত্রিবাস করতে হবে। পাশাপাশি আরও জানানো হয়েছে, দিদির দূত নামে এই নয়া অ্যাপের মাধ্যমে ১৫টি সরকারি প্রকল্পের সুবিধা মিলবে। তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস (TMC Foundation Day) উপলক্ষে সোমবার নজরুল মঞ্চে এক সভায় এই নতুন কর্মসূচি এবং অ্যাপ চালু করার কথা ঘোষণা করেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। একটি নতুন লোগো উদ্বোধন করেন তৃমমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
এদিনের এই সভা ঘিরে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছিল তুঙ্গে। শাসকদলের তরফে আগেভাগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, ২ জানুয়ারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন খুব বড় ঘোষণা করা হবে। পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগেইএই ধরনের জনসংয়োগ কর্মসূচি গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়ল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বিষয়টি খোলসা করে দেন। তিনি বলেন, দুয়ারে সরকারের কাজ তিন চতুর্থাংশ হয়ে গিয়েছে। আরও কিছু মানুষের কাছে আমরা পৌঁছতে পারিনি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা ১০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাব। এটা তো ভালো কর্মসূচি। অনেকেই লিখতে, পড়তে জানেন না। ঠিকমতো ফর্ম ফিলআপ করতেও পারেন না। দলীয় কর্মীরা তাঁদের এ ব্যাপারে সাহায্য করবেন। দুয়ারে সরকার ছিল সরকারি কর্মসূচি, সুরক্ষাকবচ হল দলীয় কর্মসূচি।
আরও পড়ুন:SSC Scam: এসএসসির নিয়োগে স্বচ্ছতার দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ কোচবিহারের ববিতা, শুনানি বুধবার
সংক্ষিপ্ত ভাষণে মমতা বলেন, দু-একটি রাজনৈতিক দল অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কোনও কাজকর্ম নেই। সারাদিন শুধু কু-কথা বলে চলছেন কোনও কোনও নেতা। তাঁদের মনে করিয়ে দিতে চাই, বিরোধী দলে থাকাকালীন আমরা কোনও ধ্বংসাত্মক কাজ করিনি। আমরা চাই ইউনাইটেড ইন্ডিয়া। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যই আমাদের নীতি। তবে সাংবাদিক বৈঠকে বিতর্কিত কোনও প্রশ্নে জবাব দিতে চাননি মমতা।
এদিকে বিরোধীরা মমতার এই নতুন কর্মসূচিকে কটাক্ষও করতে ছাড়েননি। বিরোধী নেতারা বলেন, শিক্ষা দুর্নীতি, গরু ও কয়লা পাচার, আবাস যোজনা দুর্নীতিতে তৃণমূল জেরবার। তাই পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য নতুন কর্মসূচির নাটক করছে তৃণমূল। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, তৃণমূলের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। আমাদের অনুকরণে এইসব কর্মসূচি নিচ্ছে তৃণমূল। আসলে আই ওয়াশ ছাড়া কিছু নয়। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, তৃণমূল দলটাই আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। শুনলাম, তিনি নাকি দাবি করেছেন, বিরোধী দল থাকাকালীন তৃণমূল কোনও ধ্বংসাত্মক কাজ করেনি। এ থেকে বড় রসিকতা আর কী হতে পারে।