Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | তাহলে সেই ২০০০ মানুষকে মারল কে? নাকি তাঁরা মরেননি,...

Fourth Pillar | তাহলে সেই ২০০০ মানুষকে মারল কে? নাকি তাঁরা মরেননি, স্রেফ উবে গেছেন?   

Follow Us :

২০০০ মানুষ মরেছিলেন, কারও গায়ে কেরোসিন দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কেউ রক্তাক্ত হয়ে পড়ে ছিলেন রাস্তায়, কাউকে রাস্তার ধারে ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে পিটিয়ে মারা হয়েছিল। কোথাও বাড়ি ঘিরে আগুন লাগানো হয়েছিল, বের হওয়ার চেষ্টা যারা করেছিল তাদেরকে তলোয়ার, ছুরি, লাঠি দিয়ে খুন করা হয়েছে, বাকিরা ভিতরে জ্যান্ত পুড়ে মরেছেন। সঠিক সংখ্যাটা হল ১৯২৬। এমন মনে করার কোনও কারণ নেই যে এঁরা সবাই মুসলমান ছিলেন, না, কিছু সংখ্যক হিন্দুও মারা গেছেন, বেশিরভাগটাই মুসলমান। কিন্তু আমরা আলোচনা শুরুই করেছি ২০০০ জন মানুষের মৃত্যু নিয়ে। হ্যাঁ, ২০০২-এ গুজরাত দাঙ্গায় মানুষ মারা গেছে। কিন্তু এটাই তো প্রথম নয়, এরকম দাঙ্গা বা এর থেকেও হিংস্র দাঙ্গা হয়েছে। আমরা তো ১৯৮৪তে দিল্লি এবং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে শিখ হত্যাও দেখেছি, ওটা তো দাঙ্গাও ছিল না, স্রেফ ম্যাসাকার। আমরা নেলি ম্যাসাকার দেখেছি, আমরা লালকৃষ্ণ আদবানির রথযাত্রার ম্যাপ ধরেই দাঙ্গা দেখেছি। অসংখ্য মানুষ মারা গিয়েছেন। গোটা পৃথিবীর মতোই আমাদের দেশেও ১৯৪৭ থেকে ধর্মীয় দাঙ্গায় যত মানুষ মারা গেছেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও তত মানুষ মারা যাননি। মানুষকে জীবনের মন্ত্র শেখানোর জন্য যে ধর্মের উদ্ভব তা মানুষের মৃত্যু ডেকে এনেছে বারবার। 

কিন্তু সেটা তো আমাদের আলোচনার বিষয় নয়, আজ আমাদের আলোচনার বিষয় হল ১৯২৬ জন মানুষকে যদি কেউ না মেরে থাকেন, তাহলে কি তাঁরা নিজেরাই মরেছেন? আত্মহত্যা করেছেন? আগুন লাগিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন? নিজেরাই ধর্ষিতা হয়েছেন? নিজেরাই নিজেদের সন্তানকে আছড়ে মেরেছেন? কেন এ কথা বলছি? তার কারণ হল গত কয়েকবছর ধরে লাগাতার গুজরাতের বিভিন্ন আদালত রায় দিচ্ছে, যে রায়ের ফলে এইসব হত্যার মামলায় অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস হয়ে যাচ্ছেন। আদালতের বাইরে জয় শ্রীরাম ধ্বনি উঠছে, ঠিক সেইরকম ভাবেই যেরকমটা আমরা এই মানুষগুলোর খুন হওয়ার সময়েই শুনেছিলাম, বা যাঁরা খুন হতে হতে বেঁচেছিলেন, তাঁরা শুনেছিলেন। সেই রকমই গেরুয়া ফেট্টি বাঁধা যুবকের দল আদালতের সামনে হাজির হয়ে লাড্ডু বিতরণ করছেন, যাদের আমরা সেই দাঙ্গার বিভিন্ন ছবিতে দেখেছিলাম, অবিকল ওই রকম মাথায় ফেট্টি, হাতে লাঠি, তলোয়ার, ত্রিশূল। ছাড়া পাচ্ছেন কেবল অভিযুক্তরা? তাও নয়, যাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল, তাঁরাও বেকসুর খালাস হচ্ছেন। ধরুন শিখ ম্যাসাকার, সব মৃত্যুই যে বিচার পেয়েছে তা বলব না, কিন্তু বহু মানুষ অভিযুক্ত হয়েছেন, অপরাধী ঘোষিত হয়েছেন, সাজা হয়েছে, সজ্জন কুমারের মতো এমএলএ এখনও জেলে। মনমোহন সিং অনেক পরে হলেও সংসদে দাঁড়িয়ে এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন, কংগ্রেস দল ক্ষমা চেয়েছে, নেলির ম্যাসাকার থেকে অযোধ্যা, আলিগড়, কানপুর বা মুজফফরপুর, সমস্তিপুর, দারভাঙ্গার দাঙ্গার অনেক অপরাধী এখনও জেলে। সাজা হয়ে যাওয়ার পরে কেউ বেকসুর খালাস হয়েছেন, এমন খবর নেই, সাজা হওয়ার পরে তাঁদের মাফ করে দিয়ে জেল থেকে বের করে গাঁদা ফুলের মালা পরিয়ে মিষ্টি খাওয়ানো হয়েছে, এমন খবরও নেই। গুজরাত এদিক থেকে অনবদ্য রেকর্ডের অধিকারী। গুজরাতের বিভিন্ন মহামান্য আদালতের রায়ে অভিযুক্ত কেবল নয়, দণ্ডিত অপরাধীরাও বেকসুর খালাস হচ্ছেন, কাজেই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, হু কিলড দিজ ওয়ান নাইন টু সিক্স পিপল? কারা মারল এই ১৯২৬ জনকে? 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন, উল্টোদিকে মোদি-শাহের গেমপ্ল্যানটা কী?    

আসুন দেখে নেওয়া যাক কারা ছাড়া পেল? কাদের ছেড়ে দেওয়া হল? মাত্র গত সপ্তাহে গুজরাত আদালত ৬৬ জন অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস বলে ঘোষণা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ১১ জন মানুষকে খুন করার। হ্যাঁ, তারা সবাই মুসলমান ছিল। অভিযুক্ত ছিলেন বিজেপি মন্ত্রী বিধায়ক নেতা মায়া কোদনানি, বাবু বজরঙ্গি সমেত ৬৬ জন, নারোদা গামে এই ঘটনা ঘটেছিল। সেই ৬৬ জন বেকসুর খালাস পেলেন। একই সময়ে ঘটেছিল নারোদা পাটিয়া গণহত্যা, সেখানে সেদিন কারফিউ ছিল, তারপরেও গোধরা ট্রেনে পুড়ে যাওয়া হিন্দুদের মৃতদেহ নিয়ে মিছিল হয় আর তারপরেই শুরু হয় হত্যা। দাঙ্গা নয়, বেছে বেছে মানুষ খুন করা হয়েছিল। ৯৭ জনকে খুন করা হয়েছিল এবং এই ঘটনার তদন্তের পরে ওই মায়া কোদনানি এবং বাবু বজরঙ্গিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ২০১৮তে মায়া কোদনানি বেকসুর খালাস হয়ে যান। বাবু বজরঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে আজীবন কারাবাসের সাজা দেওয়া হয়। এখন দাবি উঠছে সেই সংস্কারী হিন্দু সন্তানকে বেকসুর খালাস করার, শোনা যাচ্ছে তাও নাকি সময়ের অপেক্ষা। প্রান্তিজ শহরের কাছে তিনজন ব্রিটিশ মুসলমানকে কুপিয়ে খুন করা হয়, তাঁরা চারজনে একটা গাড়ি করে আগ্রায় তাজমহল দেখতে গিয়েছিলেন। রাস্তায় তাঁদের ধরা হয়, একজন প্রাণে বেঁচে যান। তিনি জানাচ্ছেন, নিজেদের শহরে ঢুকে তাদের ড্রাইভার বলেছিল, আর কোনও বিপদ নেই। তারপরে তাদের গাড়ি আটকানো হয়, জামাকাপড় খুলে তারা মুসলমান কি না তা দেখা হয়, তারপর তাদের খুন করা হয়। তিনিও আঘাত পেয়েছিলেন, কিন্তু প্রাণে বেঁচেছিলেন, এই ঘটনায় জনকে অভিযুক্ত করে মামলা চালু হয়, সাবরকণ্ঠা জেলা আদালত ২০১৫তে এই ছ’ জনকেই বেকসুর খালাস বলে ঘোষণা করে। কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরি সমেত ৬৯ জন মানুষকে খুন করা হয়, জ্যান্ত জ্বালিয়ে মেরে ফেলা হয়। প্রাক্তন সাংসদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল মানুষ, এহসান জাফরি নাকি মোদিজিকেও ফোন করেছিলেন, থানাতেও ফোন করেছিলেন, কোনও সাহায্য আসেনি। ৩৬ জন অভিযুক্তকে আদালত বেকসুর বলে খালাস করার রায় দিয়েছে ২০১৬তে। 

মেহসানা জেলার সর্দারপুরা গণহত্যায় মারা গিয়েছিলেন ৩৩ জন, অভিযুক্তদের ৩১ জনের মধ্যে ১৪ জন ছাড়া পেয়ে গেছেন, বাকিদের মামলা চলছে। এক বিশেষ আদালত এই ৩১ জনকেই খালাস করার রায় দিয়েছিল, হাইকোর্টে সেই খালাস বাতিল করা হয়। কিন্তু সেই মামলার আবার নতুন করে শুনানি শুরু হয়েছে, কারণ আবার নাকি নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। কালোল জেলার পালিয়াদে সম্পত্তি ভাঙচুর, লুঠ, আগুন লাগানোর অভিযোগে ২৮ জন অভিযুক্ত ছিলেন, ২০১৭তে গান্ধীনগর আদালত এদের প্রত্যেককেই বেকসুর খালাসের রায় দেন। আনন্দের ওদে গণহত্যায় অভিযুক্ত নয় দণ্ডিত তিনজনকেই বেকসুর খালাস করার রায় দেয় গুজরাত হাইকোর্ট ২০১৮ সালে। পাঁচমহলে ২ শিশু সমেত ১৭ জন মানুষকে খুন করার অভিযোগে ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, এই বছরের, ২০২৩-এর জানুয়ারি মাসে তাদের খালাস দেওয়া হয়। এই বছরেই ২ এপ্রিলে ২২ জন অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয় যারা গান্ধীনগরের কাছে কালোলে ধর্ষণ, মারপিট, আগুন লাগানো ইত্যাদি মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন, কারণ কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিলকিস বানোর ধর্ষণ আর হত্যাকারীদের কথা তো আগেই বলেছি, তাদের সংস্কারী ব্রাহ্মণ বলেই জেলখাটা মুকুব করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বিধায়ক তাঁদের মালা পরিয়ে, মিষ্টি খাইয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। তাঁরা এখন স্থানীয় বিজেপি নেতা। এই সমস্ত মামলার একটা কমন ফ্যাক্টর হল, হয় মামলা দীর্ঘদিন ধরে চলার পরে সাক্ষী অনুপস্থিত বা প্রমাণ লোপাট, একই ঘটনা সাজাপ্রাপ্ত দণ্ডিতদের ব্যাপারেও, সেখানে হঠাৎই মামলা রি-ওপেন হচ্ছে, আগের সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছে না, বা সাক্ষ্য পালটে যাচ্ছে। কাজেই তারা ছাড়া পাচ্ছে, বেকসুর খালাস, বাইরে লাড্ডু বিতরণ এবং জয় শ্রীরাম। সারা বিশ্ব তাকিয়ে দেখছে গুজরাতের দাঙ্গা বা গণহত্যা যাই বলি না কেন, মারা তো গিয়েছিলেন ২০০০-এর মতো মানুষ। সারা বিশ্ব এখন তাকিয়ে দেখছে না যে এই মাদার অফ অল ডেমোক্র্যাসি ভারতবর্ষে সেই হত্যার বিচার হচ্ছে না, হলেও হত্যাকারীদের চিহ্নিতই করা যাচ্ছে না। মহামান্য আদালতের রায় এবং বিচার নিয়ে একটা কথাও আমরা বলছি না, আমরা আদালতের রায় মেনে নিয়েই বলতে বাধ্য যে এই মায়া কোদনানি, বাবু বজরঙ্গিরা নিরপরাধ, দেবশিশু, সংস্কারী, সনাতন। কেবল একটা প্রশ্ন তো থেকেই যাচ্ছে ধর্মাবতার, এই ১৯২৬ জনকে তাহলে মারলটা কে? তারা কারা? নাকি এরা আত্মহত্যা করেছিল সেদিন? জ্বলন্ত আগুনে ঝাঁপ দিয়েছিল? মরার আগে তারা শুনেছিল জয় শ্রীরাম, রামচন্দ্রের নামে পাপ দূর হয়, এটাই জানা ছিল ধর্মাবতার, কিন্তু তাঁরা জয় শ্রীরাম শুনে স্বর্গে গেলেন না নরকে সেটাও জানার ইচ্ছে আমার নেই। কেবল জানতে চাইছি তাঁদের মারল কারা? হু কিলড দিজ ওয়ান নাইন টু সিক্স হিউম্যান বিইং?

    

 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Kolkata Rain | অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি কলকাতায়, দেখুন ভিডিও
00:40
Video thumbnail
Stadium Bulletin | কোন ৫ কারণে প্লে-অফের দোরগোড়ায় KKR? দেখুন দর্শকদের জন্য ক্যুইজ
13:48
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধে রণহুঙ্কার | পাতাল থেকেও খুঁজে বের করব, মমতাকে কটাক্ষ অমিত শাহের
04:20
Video thumbnail
Garia News | গড়িয়ার ৫২ পল্লিতে ৩০ রাউন্ড কার্তুজ, ৫ কেজি বারুদ, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার
02:21
Video thumbnail
Amit Shah | 'মমতার সাহায্যে সরকার চালিয়েছে কংগ্রেস', বিস্ফোরক দাবি শাহের
03:58
Video thumbnail
Sandeshkhali | সন্দেশখালিতে মুখোমুখি রেখা-হাজি নুরুল, বিজেপি প্রার্থীর হয়ে বাজি ধরছেন সুজয় মাস্টার
03:31
Video thumbnail
Lalbazar | 'রাজভবন- অনুসন্ধান ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়', রাজভবনকাণ্ডে বিবৃতি লালবাজারের
03:13
Video thumbnail
Sukanta Majumder | সাংবাদিক বৈঠক থেকে তৃণমূলকে তোপ সুকান্ত মজুমদারের
05:28
Video thumbnail
৪টেয় চারদিক | বিজেপি চাকরিখেকো বাঘ, দুর্গাপুর থেকে হুঙ্কার মমতার
43:57
Video thumbnail
Abhijit Ganguly | 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার রাজ্য কোষাগারের টাকা' : অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
02:29