কলকাতা: প্রায় ৭৫০ বছরের পুজো তৎকালীন ঝাড়গ্রামের রাজা রূপনারায়ণ মনোদেবের বাড়ির দুর্গাপুজো (Durga Puja 2023)। এখানে মা পুজিত হন গুপ্তমনি নামে। ঝাড়গ্রাম রাজ পরিবারের (Jhargram Rajbari) দেবী দুর্গা পূজিতা হন ঘটে। ঝাড়গ্রাম থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাজবাঁধের গুপ্তমণি । এখানেই রয়েছে মা গুপ্তমণির মন্দির । একসময় ঝাড়গ্রাম-সহ বেশ কিছু এলাকা ছিল রূপনারায়ণ মল্লদেবের বংশের অধীনে।
তৎকালীন রাজা নিজের রাজ্যকে রক্ষার জন্য রাজপ্রাসাদ থেকে বেশ কিছু গুপ্ত রাস্তা বানিয়ে ছিলেন তারমধ্যে অন্যতম ছিল সুখনি বাসার গুপ্ত রাস্তা, সেই রাস্তা দিয়ে একদিন রাজার প্রিয় হাতি চলে যায় এবং সুগনি বাসাতে গিয়ে পৌঁছায় রাজা খবর পেয়ে তৎক্ষণা সৈন্যবাহিনী নিয়ে গিয়ে তার প্রিয় হাতিকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে দেখেন, তার প্রিয় হাতি সেখানে ঘির অরণ্যের মাঝে লতা পাতা দিয়ে বাঁধা আছে, রাজা হাতিকে আনার জন্য শত চেষ্টা চালালে সফল হতে পারলেন নি, যে হাতি রাজার কথা শুনতো সেই হাতি রাজাকে চিনছে না, রাজা রাজপ্রাসাদ ফিরে আসেন।
সেই রাতে রাজা রূপনারায়ণ মাল্লদেব স্বপ্নাদেশ পান এক দেবী তাকে জানালেন তোমার যে গুপ্ত রাস্তা রয়েছে তার পাশেই আমি রয়েছি এখানে একজন আমাকে দীর্ঘদিন ধরে সেবা করে আসছেন সুগনি বাসার বাসিন্দা শবর পরিবারের নন্দ ভক্তা তার নাম, তার সঙ্গে তুমি গিয়ে যোগাযোগ করো তোমার হাতি তুমি ফিরে পাবে। সেই কথামতো তারপরের দিনই রাজা সুগনিবাসা গিয়ে পৌঁছায় এবং নন্দ ভক্তাকে সব কথা খুলে বলেন রাজা বাহাদুর, তারপরে নন্দ ভক্তা জঙ্গলে এসে তুলসী বেলপাতা জল দিয়ে মায়ের পুজো করেন এবং রাজ রূপনারায়ণ মাল্লদেবকে বলেন রাজা বাহাদুর এখন আপনার হাতিকে আপনি ডাকুন আপনার কথা শুনবে। তারপর রাজা তার প্রিয় হাতিকে রাজপ্রাসাদে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন, তখন থেকে এখানে মায়ের পুজো শুরু হয়েছিল।
আরও পড়ুন: অকাল বোধনের আগে কালবৃষ্টিতে মা দুগ্গা নাজেহাল
মা যেহেতু এখানে গুপ্ত জায়গায় রয়েছিলেন তাই মায়ের নাম গুপ্তমনি হিসেবে পরিচিত হল সমস্ত অঞ্চলে, এখানে কোন পুরোহিত দিয়ে পুজো হয় না গীতা পাঠ, চণ্ডীপাঠ, যোগ্য কিছুই হয় না তৎকালীন শবর পরিবারের নন্দ ভক্তা যেভাবে পুজো করতেন ঠিক একই রকমভাবে এখনও সবররা পুজো করে আসছেন। দুর্গাপূজোর সময় এখানে ঘট বসিয়ে পুজো হয়। যে মূর্তি এখানে আবির্ভাব হয়েছিল সেই মূর্তিকে পুজো করেন শবররা। এখানকার পুজোর একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, কোনও পুরোহিত পুজো করেন না । মায়ের পুজো করেন শবররাই । এখানে মা আসলে একটি পাথরে বিরাজমান।
কথিত আছে এই মন্দিরে আজও সন্ধ্যায় নিমজ্জিত হয় অন্ধকারে, মন্দিরের ভিতরে কোনওদিন আলো জালানো হয় না ।এখানে বলি প্রথা রয়েছে প্রতি সপ্তাহে বুধবার শনিবার বলি হয়। কারো কোন কিছু হারিয়ে গেলে হাতি ঘোড়ার মাটির মূর্তিতে সুতো বেঁধে দিয়ে এখানে মানসিক করলে তা পরে ফিরে পাওয়া যায়। এই সমস্ত অঞ্চলে কেউ গাড়ি কিনলে মা গুপ্তমনির কাছে প্রথম পুজো দেন। দুর্গাপুজো দেখতে তাই পুজোর এই কটা দিন এই মন্দিরের পূজোয় সাক্ষী হতে আপনিও আসতে পারেন মা গুপ্তমনির মন্দিরে। কলকাতা মুম্বাই গামী ছ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই অবস্থিত মা গুপ্তমনি মন্দির ঝাড়গ্রাম থেকে মাত্র ২৭ কিলোমিটার দূরত্ব এবং খড়গপুর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরত্ব মায়ের এই মন্দির।
আরও অন্য খবর দেখুন