চেন্নাই থেকে গৌতম ভট্টাচার্যের সুইচ হিট
দ্য নেশন ওয়ান্টস টু নো –শুভমন গিল কি ভারতীয় বিশ্বকাপ অভিযানের উদ্বোধনীতে অংশ নিতে পারবেন? উত্তরে রাহুল দ্রাবিড় বিদেশ দফতরের মুখপাত্রের মতো ঘুরিয়েফিরিয়ে যা বললেন তাতে মনে হল, ডেঙ্গু আক্রান্ত আধুনিক ভারতীয় ব্যাটিং সেনসেশনকে হিসেবের বাইরে রেখে বিকল্প একাদশ ভেবে রেখেছেন। মুখে যদিও হেঁয়ালি অব্যাহত রাখলেন,”ডাক্তাররা তো ওকে দেখছে। এখনও তাঁরা ঘোষণা করে দেননি যে ও পারবে না।”
একটা সময় বিশ্বকাপের আগে শচীন তেন্ডুলকরের পিঠ বা কোমরের চোট নিয়ে দেশজুড়ে হাহাকার পড়ে যেত যে বিশ্বকাপের আগে সারবে? পারবেন শচীন নামতে? শচীন নিয়ে সেই আশঙ্কা যদি গভীর দুর্যোগ সংবলিত বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি হয় তাহলে তুলনায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শুভমনের খেলা নিয়ে উদ্বেগ, চেন্নাইয়ের আজকের জলবায়ু। চড়চড়ে রোদ মাঝে দু’ঘন্টার বৃষ্টি। শচীনের আমল আলাদা ছিল। তখন জাতীয় আতঙ্ক ধরা পড়ত সম্পাদকের কাছে পাঠানো চিঠি বা খবরের কাগজ দফতরে আসা ফোনে। শুভমন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশিত হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং হোস্ট ব্রডকাস্টারকে পাঠানো অনুরাগীদের মেলে। প্রেসার মাপার মতো আতঙ্ক নির্ণয়ের তো কোনও সর্বজনসম্মত পদ্ধতি নেই। তবে বোঝাই যাচ্ছে — মিনি শচীন!
আর একটু কাজের কথা আসি। ইংরেজি বর্ণমালায় ‘সি’ আর ‘টি’ যে কাছাকাছি নয়, চেন্নাই এলে কে বলবে? লোকে কেন কষ্ট করে গোয়া আর কেরালার বিচগুলোয় পুড়তে যায় কে জানে। চেন্নাইয়ের মেরিনা বিচেও কষ্ট করে বালির মধ্যে হাঁটার দরকার নেই। তামিল সিনেমার বড় বড় হোর্ডিংগুলো দেখতে দেখতে চেন্নাইয়ের রাস্তা দিয়ে একটু হাঁটলেই হবে। পুরো ট্যান। ভারত যদিও বেলা গড়িয়ে প্র্যাকটিসে এল। শুভমনকে এমন ওয়েদারে বার করা মানে মোটামুটি ১৪ তারিখের পাকিস্তান ম্যাচটাও বসিয়ে দেওয়ার তোড়জোড়।
আরও পড়ুন: Exclusive Emiliano Martinez | প্রোলেতারিয়েতের দুর্গরক্ষক
টিম ইন্ডিয়া অবশ্যই সেই পাগলামি করেনি। কিন্তু প্রশ্নের কাঁটা থাকছে, তখন ওপেনিং কম্বিনেশন কী হবে? ঈশান কিষান? স্টার্ককে সামলাতে বাঁ হাতির সুবিধে হবে। নাকি রাহুল ওপরে গিয়ে ভেতরে সূর্য কুমার যাদব? দ্রাবিড় এদিন সূর্যের ব্যাটিং একটা ইন্টারেস্টিং কথা বললেন। “সূর্য মূলত খেলে স্কোয়ার অফ দ্য উইকেট। বা উইকেটের পেছনে। টি টোয়েন্টিতে সেই মডেলেই রান করে। আমি ওর সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছি যাতে উইকেটের সামনের শটগুলোতেও উন্নতি করা যায়। ওয়ানডেতে নিয়মিত রান করতে হলে ওই শটগুলোও লাগবে।” শুনে মনে হচ্ছিল বিক্রম রাঠোর ফালতু এতদিন ব্যাটিং কোচ হিসাবে মোটা টাকা পেয়ে যাচ্ছেন? হাতের কাছে দ্রাবিড় থাকতে আবার কাকে চাই?
শেষ সকালে প্লেন থেকে নামা মাত্র চেন্নাইয়ের হল্কা মিচেল স্টার্কের চেয়েও বেশি গতিতে ধেয়ে এল। দ্রুত মনে পড়ল এখানেই তো ডিন জোন্স ঐতিহাসিক টাই টেস্টে ব্যাট করার সময় এমন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে স্যালাইন দিতে হয়েছিল। অস্ট্রেলীয়দেরও কি হবে না? পরক্ষণেই মনে হল শচীনের আমল যদি প্রাচীন হয়, গাভাসকরের সময় তো আরও পিছনে। তখন আইপিএল বলে কোনও বস্তু ক্রিকেটফিকশনে ছিল না। এই অস্ট্রেলিয়ার অন্তত ছয়জন শুধু গরমে অভ্যস্ত নয়। কোন কাবাবটা রুমালি রুটির সঙ্গে ভালো যাবে সেটাও বলে দিতে পারবে।
এঁদেরই একজন মিচেল মার্শকে প্র্যাকটিসের পর এক ঝলক দেখলাম। সেই মুখচোখে ভিনদেশে হোস্টদের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ আবির্ভাবের কোনও টেনশন স্বেদবিন্দু নেই। চেহারাতে বরঞ্চ সেই প্রত্যয় যাকে আমেরিকায় কাউকে কাউকে বলতে শুনেছি, দ্য ভেগাস লুক। কাছাকাছি বাংলা অনুবাদে দাঁড়ায় –ফ্ল্যাম্বয়েন্সের সঙ্গে নিটোল আত্মবিশ্বাস। ভারতের বিরুদ্ধে টানা দুটো ওয়ানডে ম্যাচ হারা অস্ট্রেলিয়া এরা নয়। এরা বরঞ্চ সেই আগুন থেকে উত্থিত নতুন দল। যারা এখনো স্টিভ স্মিথকে দুই না তিনে খেলাবে — সেই মডেল তৈরিতে মগ্ন। বোলিংয়ের ছাচ তৈরি হয়ে গিয়েছে। শুভমন না খেললে কামিন্সের দুঃখিত হওয়ার কারণ নেই।
শ্রেয়স আইয়ারকে রাতের চিদম্বরম স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে এক দর্শক চিৎকার করে বলছিলেন, তুমি হবে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ। তুমি। শ্রেয়াস হাত তুলে ধন্যবাদ দিলেন। দ্রুত সেই মুহূর্তটা এক সাংবাদিক বন্দিও করলেন। ইউটিউবে পোস্ট করবেন বলে। কিন্তু শ্রেয়স কি গিল-তে পারবেন অস্ট্রেলিয়াকে? আটচল্লিশ ঘন্টা পরে জানা যাবে।
যা জানা-বোঝার জন্য কোনো অপেক্ষার প্রয়োজন হচ্ছে না। বিশ্বকাপ হয়ে, এত বড় দুই টিমের সংঘাত হয়েও ঐতিহ্যের চিপকের আকাশে বাতাসে কিসের অভাব? কী যেন নেই? তিরিশ সেকেন্ডে উত্তর পাওয়া যাবে। আসলে গত বিশ্বকাপেও যিনি উইকেটের পেছনে এবং সামনে বটগাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকতেন সেই লোকটি নেই।
সিএসকে-র থালা। আরব্য উপন্যাসের মত এত সব অবিস্মরণীয় আইপিএল রজনীর পরেও মাঠটার নাম যে এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়াম থেকে বদলায়নি সেটা শুভমনের ডেঙ্গির চেয়েও বেশি অসহ্য!
দেখুন আরও খবর: