নয়াদিল্লি ও কলকাতা: অর্থের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন তোলা সম্পর্কিত অভিযোগে চাপের মুখে তৃণমূল সাংসদ (TMC MP) মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra)। যে ব্যবসায়ীর হয়ে তিনি আদানি (Adani) গোষ্ঠী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চাপে ফেলতে চেয়েছেন বলে অভিযোগ, তা প্রায় মেনে নিয়েছেন সেই ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানি (Darshan Hiranandani)। স্বাক্ষর করা হলফনামায় হীরানন্দানি মেনে নিয়েছেন যে তিনি মোদি সরকার এবং আদানি গোষ্ঠীকে অস্বস্তিতে ফেলার মতো প্রশ্ন তোলার ক্ষেত্রে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়াকে ব্যবহার করেছেন। বিষয়টি সংসদের এথিকস কমিটিতে (Ethics Committee of Parliament) গেলেও তার প্রধান বিনোদ সোনকার শুক্রবার জানান, তিনি এখনও ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির চিঠি পাননি।
এই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়তেই বৃহস্পতিবার রাতে পাল্টা বিবৃতি প্রকাশ করেন মহুয়া। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, হীরানন্দানির যে বয়ান প্রকাশ্যে এসেছে, তা কি আদৌ তাঁর লেখা? না কি সেই বয়ানের খসড়া তৈরি হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দফতর থেকে? মহুয়ার বক্তব্য, হীরানন্দানির হলফনামা সাদা কাগজে লেখা হয়েছে। তাতে কোনও ‘অফিসিয়াল লেটারহেড’ বা ‘নোটারি’ করা নেই।
আরও পড়ুন: আজ ষষ্ঠী, উমা এল মায়ের কোলে
তৃণমূল সাংসদের প্রশ্ন, মাথায় বন্দুক ঠেকানো না হলে কি হীরানন্দানির মতো একজন সম্মাননীয় এবং শিক্ষিত ব্যবসায়ী কখনও এ রকম সাদা কাগজে সই করবেন? হীরানন্দানির হলফনামায় কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী এবং শশী থারুরের কথাও উঠে এসেছে। তার প্রেক্ষিতে প্রেস বিবৃতিতে মহুয়ার মন্তব্য, সব কা নাম ঘুসা দো, অ্যায়সা মওকা ফির নেহি আয়েগা!
দুবাই-কেন্দ্রিক ব্যবসায়ী হীরানন্দানির কাছ থেকে নেওয়া অর্থ ও উপহারের বিনিময়ে মহুয়া লোকসভায় প্রশ্ন করেছেন এমন অভিযোগ তুলে গত রবিবার লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি পাঠান বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। স্পিকারের কাছে মহুয়াকে সাংসদ পদ থেকে সাসপেন্ড করার আর্জিও জানিয়েছেন নিশিকান্ত। আবার আইনজীবী জয় অনন্ত দেহাদ্রাই মহুয়ার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলে সিবিআই প্রধানকে চিঠি দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই মঙ্গলবার লোকসভা স্পিকার মহুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কতটা সত্যি, তা খতিয়ে দেখতে বলেছে লোকসভার এথিক্স কমিটিকে। তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে এল দুবাইকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী হীরানন্দানির হলফনামা।
নিশিকান্ত এবং দেহাদ্রাইয়ের একই অভিযোগ। তাঁদের দাবি, ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির থেকে অর্থ, উপহার নিয়ে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন মহুয়া। সেই সঙ্গে মোদf এবং শাহের নাম জড়িয়েছেন তিনি। এই সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার আইনি চিঠিও পাঠিয়েছেন মহুয়া। তাতে নিশিকান্ত এবং দেহাদ্রাইয়ের বিরুদ্ধে পাল্টা বিস্তর অভিযোগ তুলেছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ। দু’জনেই তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে জানিয়ে মহুয়ার দাবি, প্রতিশোধ স্পৃহা থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।
হীরানন্দানি হলফনামায় স্বীকার করেছেন যে তিনি মহুয়াকে ব্যবহার করে লোকসভায় আদানি গোষ্ঠী সম্পর্কিত প্রশ্ন তুলেছেন সংসদে। মহুয়া শিল্পপতিকে সংসদের লগ-ইন আইডি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন নিশিকান্ত। সেটাও স্বীকার করেছেন হীরানন্দানি। মহুয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন উপহার নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তাতেও মান্যতা দেওয়া হয়েছে হীরানন্দানির হলফনামায়। বলা হয়েছে, মাঝে মাঝেই নানা আবদার করা হত। দাবি থাকত বিলাস সামগ্রী, দিল্লির সরকারি বাসভবন সংস্কার করিয়ে দেওয়া, ছুটি কাটানো বা বেড়ানোর খরচের জন্যও দাবি করা হত। সেটা যেমন দেশের বিভিন্ন জায়গায়, তেমন বিদেশেও।
হীরানন্দানি আরও জানিয়েছেন, মহুয়ার সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয় ২০১৭ সালে। বেঙ্গল বিজনেস সামিটে যোগ দিতে তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। পরবর্তীকালে মহুয়ার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। মনে হতে থাকে যে মহুয়ার মাধ্যমে তিনি বিরোধী দলশাসিত রাজ্যগুলিতে কাজের সুযোগ পেতে পারেন। কারণ রাহুল গান্ধী, শশী থারুর, পিনাকি মিশ্রর সঙ্গে মহুয়ার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
মহুয়া অবশ্য আগেই এই সব অভিযোগকে অসত্য বলে দাবি করেছেন। প্রথম থেকেই তাঁর অভিযোগ, আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। আইনি নোটিসে মহুয়া এটাও বলেন যে, তিনি নিশিকান্ত দুবের ভুয়ো ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। সিবিআই ও নিশিকান্তের কাছে অভিযোগ জানানো আইনজীবী দেহাদ্রাইও মহুয়ার ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ ছিলেন। পরে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
তার পরে দেহাদ্রাই মহুয়াকে হুমকি দিয়ে মেসেজ করেন। তাঁর সরকারি বাসভবনে বিনা অনুমতিতে ঢুকে মহুয়ার পোষা কুকুর ও অন্যান্য জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যান। পরে কুকুর ফেরত দেন।
বারবার হেনস্থা করায় মহুয়া দেহাদ্রাইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগও জানিয়েছিলেন। সূত্রের বক্তব্য, রবিবার মহুয়ার কিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তা দেহাদ্রাইয়েরই কাজ বলে সন্দেহ। কারণ, এর মধ্যে কিছু ছবিতে তিনি নিজেই মহুয়ার সঙ্গে ছিলেন।