বহরমপুর: কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া নষ্ট হওয়ার জন্য এবার সিপিএমকে দায়ী করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বুধবার মালদহের পর বহরমপুরে সরকারি পরিষেবা প্রদানের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী (CM) বলেন, কংগ্রেসের (Congress) সঙ্গে আমাদের ভালোই বোঝাপড়া হচ্ছিল। কিন্তু নষ্টের গোড়া হল সিপিএম। ওরা এখন বিজেপির সবচেয়ে বড় দালাল হয়েছে। মমতা বলেন, ওদের (গান্ধী পরিবার) সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক, রাজনৈতিক নয়।
মমতার অভিযোগ শুনে বিস্মিত সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, আমরা সংবাদমাধ্যমের সূত্রেই জানতে পেরেছিলাম, কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের আলোচনা চলছে। তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাহুল গান্ধীর বাড়িতেও ছুটে গিয়েছিলেন। তবে তাঁদের মধ্যে কী কথা হয়েছে, জানি না। এর মধ্যে সিপিএম এল কোথা থেকে। আসলে উনি (মমতা) এখনও সব জায়গায় সিপিএমের ভূত দেখতে পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ইডির বিরুদ্ধে এফআইআর ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের
এদিন মালদহ এবং বহরমপুরে সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিরোধীদের জোট নিয়ে অনেক রাজনৈতিক কথা বলেন। মালদহে তিনি বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, ভোটের সময় একদল নেতা দিল্লি থেকে বসন্তের কোকিলের মতো বাংলায় আসেন। আমি উত্তরবঙ্গে কখনও রাজনীতি করতে আসি না। আমি উত্তরবঙ্গকে ভালোবাসি বলে বারবার আসি। দুই সভাতেই মুখ্যমন্ত্রী লোকসভা ভোটে বাংলায় একা লড়াইয়ের বার্তা দেন। তিনি বলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া ভালোই এগচ্ছিল। কিন্তু সব নষ্ট হয়ে গেল সিপিএমের জন্য। মালদহে মমতা বলেন, কংগ্রেস এখন বিজেপির হাত ধরেছে। এতে বিজেপির হাত শক্ত হবে। কংগ্রেসকে বলেছিলাম, মালদহে তোমাদের দুটি আসন দিচ্ছি। আমরাই জিতিয়ে আনব। ওরা বলল, বেশি চাই। আমি বললাম, বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশটাই চাই? তাহলে তো বিজেপিই সব জিতে যাবে। দিল্লি থেকে ওরা এসে সব লুটে নিয়ে যাবে। প্রাণ থাকতে আমি তা হতে দেব না। বিজেপিকে ঠেকাতে তৃণমূলই পারে।
মমতার সঙ্গে গান্ধী পরিবারের সম্পর্ক অনেক দিনের। প্রয়াত রাজীব গান্ধীই তাঁকে প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি করেছিলেন। তিনি সব সময় তাঁর খোঁজ নিতেন। পরবর্তীকালে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বিরোধের কারণে মমতা দল ছেড়ে তৃণমূল গঠন করেন। তারপরেও সনিয়া গান্ধীদের সঙ্গে মমতার সম্পর্কে চিড় ধরেনি।
সম্প্রতি জেলা সফরে গিয়ে কপালে চোট পাওয়ার পরেও সনিয়া এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মেসেজ করে তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন। ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার শুরুতে অসমে বসে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী বলেন, মমতার সঙ্গে আমাদের এবং কংগ্রেসের সম্পর্ক বেশ ভালো। তৃণমূলের সঙ্গে আসন নিয়ে আলোচনা এগোচ্ছে। তিনি এই দাবি করলেও পরে মমতা বলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের কোনও আলোচনা হয়নি। আসন নিয়ে তাদের সঙ্গে একটি কথাও হয়নি। গত রবিবার ডায়মন্ড হারবারের আমতলায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও অভিযোগ করেন, গত ২১০ দিনে কংগ্রেসের কেউ আসন নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে একটি কথাও বলেননি।
প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, মমতা এক এক সময় এক এক কথা বলেন। এতদিন বলছিলেন, আসন নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। আজ আবার তিনি স্বীকার করে নিলেন যে, আসন নিয়ে দুই দলের মধ্যে কথা হয়েছে। তিনি আমাদের মালদহের দুটি আসন ছাড়তে চেয়েছিলেন। তাহলে কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যে।
আরও খবর দেখুন