শেষ পর্যন্ত অনেক টালাবাহানা, অনেক রকম ওজর আপত্তি করে এটিকে মোহনবাগান জানিয়ে দিয়েছে তারা কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের সুপার সিক্সের ম্যাচে খেলবে না। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, সুপার সিক্সের খেলা শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয়ে যাবে আই এস এল-এর খেলা। আর একবার আই এস এল-এর খেলা শুরু হলে সেই প্লেয়াররা আর অন্য কোনও টুর্নামেন্টে খেলতে পারবে না। এই মোক্ষম যুক্তিতে এটিকে মোহনবাগান এবারের আই এফ এ-র প্রিমিয়ার লিগের কোনও ম্যাচে খেলবে না। বড় ক্লাবগুলির স্বার্থ দেখতে আই এফ এ ইতিমধ্যেই নিয়ম করেছে প্রিমিয়ার লিগের এ গ্রুপে কোনও অবনমন হবে না। তাই মোহনবাগানকে যে নামিয়ে দেওয়া হবে তার কোনও উপায় নেই। নিজেদের গড়া নিয়মে নিজেরাই আটকে গেছে আই এফ এ।
ইমামি ইস্ট বেঙ্গল ও মহমেডান স্পোর্টিং অবশ্য সুপার সিক্সে খেলছে। রবিবার নৈহাটিতে ইস্ট বেঙ্গল গোল শূণ্য ড্র করছে খিদিরপুরের সঙ্গে। আর মহমেডান ৩-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে এরিয়ানকে। ইস্ট বেঙ্গলও আই এস এল-এ খেলবে। তারা সে জন্য জোরদার টিম গড়েছে। কিন্তু কলকাতা লিগকে উপেক্ষা করেনি। সে জন্য তারা রিজার্ভ টিম গড়েছে। এই রিজার্ভ টিমই খেলছে কলকাতা লিগে। এই টিম থেকে ভাল কাউকে চোখে পড়লে তাঁকে আই এস এল-এ খেলানো হবে। রিজার্ভ টিমের কোচ হয়েছেন বিনো জর্জ, যিনি আসলে স্টিভন কনস্ট্যানটাইনের সহকারি কোচ। গোলকিপার কোচ সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়। আর মহমেডানের একটাই টিম। তারা এই টিম নিয়েই ডুরান্ড কাপে খেলছে। এখন লিগ খেলছে। এবং এই টিম নিয়েই তারা খেলবে আই লিগে। মহমেডান গত বছর কলকাতা লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এ বছর যা অবস্থা তারা চ্যাম্পিয়নও হতে পারে। রবিবার তাদের হয়ে গোল করলেন মার্কাস জোসেফ, ওসমানে এনডিয়ে এবং ফজলু রহমান। পুজোর আগে আর একটি করে ম্যাচ খেলতে হবে পাঁচটি দলকে। সোমবার মোহনবাগান মাঠে না নামায় ওয়াক ওভার পেয়েছে ভবানীপুর।
মোহনবাগান লিগ থেকে নাম তুলে নেওয়ায় লিগের জৌলুস অনেক কমে গেল। লিগের ডার্বি হবে না। মহমেডান যদি চ্যাম্পিয়ন হয় তাদেরকেও মিনি ডার্বি খেলতে হবে না। আই এফ এ-র সচিব অনির্বান দত্ত সবে দায়িত্বে এসেছেন। এখন সব ক্লাবেরই উচিত ছিল তাঁকে সাহায্য করা। মোহনবাগান প্রথম থেকেই অসহযোগিতা করে গেছে। শেষ পর্যন্ত লিগ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিল। তাদের যুক্তি ২৫ জন ফুটবলার নিয়ে দল গড়েছে তারা। এর মধ্যে ছয় জন বিদেশি। তাদের রিজার্ভ টিম বলে কিছু নেই। আসলে ফুটবল টিমটা সঞ্জীব গোয়েঙ্কার হাতে তুলে দিয়ে সবুজ মেরুন কর্তারা কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ। মুখে তাঁরা যাই বলুন না কেন, আদতে তাদের কোনও ক্ষমতাই নেই। সঞ্জীব গোয়েঙ্কা দল গড়েছেন আই এস এল-এর জনয়। ডুরান্ড এবার কলকাতায় হওয়ায় তাদের খেলতে বাধ্য হতে হয়েছে। কারণ সেনাবাহিনীর হাতে ময়দানের মালিকানা। তাদেরকে চটানোর কোনও মানে হয় না। কিন্তু আই এফ এ তো একটা অক্ষম সংস্থা। তারা চটল কি চটল না তাতে সঞ্জীব গোয়েঙ্কাদের কিছু যায় আসে না। কিন্তু মোহনবাগানের তো বিরাট ঐতিহ্য আছে। এটিকে তো সেদিনের একটা ফ্রাঞ্চাইজি। তাদের ময়দানে কোনও তাঁবুও নেই। তাদের লিগ না খেললে কিছু যায় আসে না। কিন্তু দেবাশিস দত্তরা নিজেদেরকে তাদের কাছে বিক্রি করে দিয়ে ইতিহাসের কাছে নিজেদের দায়ী করে গেলেন। এর ফল যদি তাদের ভুগতে হয় তার দায়িত্ব কিন্তু এই কর্তাদেরই নিতে হবে। কলকাতা লিগ না খেলে তারা অন্যায়ই করল। এর ফল তাদের ভুগতে হবে।