কলকাতা: প্রদেশ কংগ্রেস বিরোধিতা করলেও হাইকমান্ড মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) পাশে দাঁড়াল। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে (Congress president Mallikarjun Kharge) শনিবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর (Adhir Chowdhury) উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, তৃণমূল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধীর কেউ নন। হাইকমান্ড আছে। আমরা আছি। দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে। নাহলে বাইরে চলে যেতে হবে। কংগ্রেস সভাপতির কথা শুনে অধীর বলেন, আমি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির (Congress Working Committee) সদস্য। আমিও হাইকমান্ড। তৃণমূল সম্পর্কে আমার বিরোধিতা নৈতিক বিরোধিতা। এর মধ্যে কোনও ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নেই। কংগ্রেসকে যে খতম করবেন, আমি তাঁকে খাতির করব, তা তো হতে পারে না। তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমার লড়াই পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসকে রক্ষা করার লড়াই। তা আমি কোনও মতেই থামাতে পারি না।
এই মন্তব্য করে অধীর কার্যত কংগ্রেস হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিলেন। সাম্প্রতিক নির্বাচনী প্রচারে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের কংগ্রেসকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে চলেছেন। তিনি বারবার বলছেন, বাংলায় ইন্ডিয়া জোটে আমি নেই। বাংলার কংগ্রেস, সিপিএমের সঙ্গে কোনও জোট নয়। তবে জাতীয় স্তরে ইন্ডিয়া জোটে আমরা আছি। আমি ইন্ডিয়া তৈরি করেছি। ইন্ডিয়া নামটিও আমার দেওয়া।
গত বুধবার হুগলিতে এক নির্বাচনী সভায় মমতা বলেন, ইন্ডিয়া জোট (India Alliance) জিতলে আমরা বাইরে থেকে সমর্থন করব। সব রকমের সাহায্য করে সরকার গড়ে দেব। তৃণমূল নেত্রীর ওই বক্তব্য ঘিরে ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। অধীর বলেন, মমতাকে বিশ্বাস করা যায় না। তিনি অতীতে একাধিকবার বিজেপির হাত ধরেছেন। আবার কংগ্রেসের হাত ধরেছেন। আসলে মমতা দুই শিবিরকেই বার্তা দিয়ে রাখছেন। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, মমতা ইন্ডিয়া জোটের ট্রেনে উঠেছিলেন। আবার মাঝপথে নেমে গিয়েছেন। তিনি হাওয়া মোরগ। জাতীয় স্তরেও মমতার বক্তব্য নিয়ে নানা জল্পনা চলে। পরের দিন মেদিনীপুরের সভায় মমতা বলেন, আমার বক্তব্যে সর্বভারতীয় স্তর ভুল বুঝেছে। আমি বলেছি, বাংলায় কোনও ইন্ডিয়া জোট নেই। কারণ বাংলার কংগ্রেস, সিপিএম রয়েছে বিজেপির সঙ্গে। আমরা জাতীয় স্তরে ইন্ডিয়া জোটে ছিলাম, আছি, থাকব। এবার ইন্ডিয়া জোটই সরকার গড়বে।
আরও পড়ুন: স্বাতী মালিওয়াল কাণ্ডে গ্রেফতার কেজরিওয়ালের সচিব
প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তৃণমূল সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব দেখালেও হাইকমান্ড বরাবর নরম মনোভাব নিয়ে চলেছে। এই কারণেই লোকসভার কংগ্রেস দলনেতা হওয়া সত্ত্বেও বহরমপুরের দলীয় প্রার্থী অধীরের সমর্থনে দিল্লির কোনও কংগ্রেস নেতা প্রচারে আসেননি। প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, মমতাকে চটাতে চান না বলেই দিল্লির নেতারা অধীরদার হয়ে প্রচারে আসেননি। অধীর অবশ্য কাউকে আমন্ত্রণও জানাননি। তিনি একাই লড়ে গিয়েছেন তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে। তবে কংগ্রেস এবার রাজ্যে পাশে পেয়েছে বামেদের। বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ এবং জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেস কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে।
শনিবার লখনউতে ইন্ডিয়া জোটের এক সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতির কাছে মমতা এবং অধীরের বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, মমতা ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেই আছেন বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন। আর তৃণমূল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধীর কেউ নন। আমরা আছি, হাইকমান্ড আছে। দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে সকলকে। তা মানলে বাইরে চলে যেতে হবে। খাড়্গের এই মন্তব্যকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না রাজ্য কংগ্রেস নেতারা। অধীর তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
অন্য খবর দেখুন