২০ মার্চ ২০২৩, সোমবার,
1
2
3
4
5
6
7
8
9
10
11
12
K T V Clock
Yellow Journalism in Bengal: আবোল তাবোল, পাগলা দাশু সুকুমারের সৃষ্টি, সাংবাদিকের কলমজুড়ে হলুদ অ্যাসিড বৃষ্টি...
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  শুভেন্দু ঘোষ
  • আপডেট সময় : ২৯-০১-২০২৩, ৮:৫৮ পূর্বাহ্ন
প্রতীকী ছবি

কলকাতা: আগেকার দিনে সাংবাদিকরা (Journalist) কপি লেখার সময় ব্যবহার করতেন কলম। বর্তমানে কলম আর কাগজের জায়গায় ঠাঁই পেয়েছে কম্পিউটার (Computer)। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে কৃত্রিম মেধা যা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Artificial Intelligence) বলেই সমাজে প্রচলিত। কম্পিউটার মানুষকে চালাবে, না মানুষ কম্পিউটারকে, সেই নিয়ে একাধিক হলিউড সিনেমা (Hollywood Movies) হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত বর্তমানে বাংলা সাংবাদিকরা (Bengali Journalists) তাঁদের নিজস্ব মেধাকে ব্যবহার না করে কৃত্রিম মেধার অনুশীলন করছেন। দ্রুত খবর দেখানোর বা ধরানোর তাগিদে সাংবাদিকতার প্রথম পাঠ খতিয়ে দেখা, সেটাই তাঁরা ভুলে গিয়েছেন। অনুসন্ধান সাংবাদিকতার (Investigative Journalism) একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সেটি না করে দ্রুত খবর ধরানোর তাগিদেই জন্ম দিচ্ছে হলুদ সাংবাদিকতার (Yellow Journalism)।

আরও পড়ুন: Union Budget 2023: এবার কেন্দ্রীয় বাজেট থেকে দেশের শিক্ষা ক্ষেত্র কী কী প্রত্যাশা করছে?

সরস্বতী পুজোর দিন রাজভবনে বাংলায় হাতেখড়ির পরে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস রওনা (CV Ananda Bose) দিলেন দিল্লির উদ্দেশে। এক প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার এই সূচি ছিল পূর্বনির্ধারিত। ‌কিছু সংবাদমাধ্যম রাজনীতির চশমায় দেখে প্রচার করল, রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে নয়া রাজ্যপালের দহরম মহরম ভালো চোখে নেয়নি কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। সেই জন্যই দিল্লিতে জরুরি তলব রাজ্যপালকে।

সেই ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফের একপেশে রাজনৈতিক প্রচার কিছু সংবাদমাধ্যমের। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর টুইট ধরে কার্যত কাঠগড়ায় তোলা হল নবান্নকে। বিরোধী দলনেতা টুইটে অভিযোগ তুলেছিলেন, গত বছরের মার্চ মাসে রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে গণহত্যার পরে রাজ্য সরকারের তরফে ক্ষতিপূরণ ও গৃহনির্মাণ বাবদ যে আর্থিক সাহায্য করা হয়েছিল তা কেন্দ্রীয় অনুদান মিড ডে মিলের টাকায়। এই টুইট ধরেই প্যানেল বসিয়ে দিনভর চলল রাজনৈতিক বিশ্লেষণ।

ওয়াকিবহাল মহল বলে, রাজনীতির কারবারিরা তাঁদের রাজনীতির স্বার্থে যে কোনও অভিযোগ করতেই পারেন। কিন্তু সাংবাদিকতার স্বার্থে সেই অভিযোগের তুল্যমূল্য বিচার এবং বাদী-বিবাদী দু'পক্ষের বক্তব্য শোনা ও শোনানো জরুরি। কিন্তু রাজ্যপালের দিল্লিযাত্রা কিংবা অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতিপূরণ, কোন ক্ষেত্রেই সাংবাদিকতার আবশ্যিক পাঠ মানা হল না।
তবে কি একেই বলে হলুদ সাংবাদিকতা? নাকি পেশাগত প্রতিযোগিতায় জিততে চাঞ্চল্যকর খবর পরিবেশন করে নিজের সংবাদ সংস্থাকে জনপ্রিয় করার তাগিদে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে অর্ধসত্য খবর পরিবেশন করা হয়।

ইয়োলো জার্নালিজম বা হলুদ সাংবাদিকতা এই শব্দবন্ধনী একবিংশ শতকে জনপ্রিয় হলেও এর শিকড় বিংশ শতকের গোড়ায়। কার্যত, হলুদ সাংবাদিকতার জন্ম সংবাদ জগতের দুই চিরস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব জোসেফ পুলিৎজার ও উইলিয়াম রুডলফ হার্স্টের মধ্যে পেশাগত বিবাদের কারণে। আমেরিকার ওই দুই সম্পাদক ব্যবসায়িক স্বার্থে একে অন্যকে ডিঙোতে মনের মাধুরী মিশিয়ে খবরে রং চড়িয়ে সে সব প্রকাশ করা শুরু করেছিলেন। সেই প্রতিযোগিতায় স্থান পেত মূলত ব্যক্তিগত কেচ্ছা কেলেঙ্কারি। জোসেফ পুলিৎজারের নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড ও রুডলফ হার্স্টের নিউ ইয়র্ক জার্নালের বিকৃত খবর এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, সত্য থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছিল প্রকৃত সাংবাদিকতা। এটাই হলুদ সাংবাদিকতার সংজ্ঞা।

গণতান্ত্রিক কাঠামোয় প্রত্যেকেরই অধিকার আছে আত্মপক্ষ সমর্থনের। সেই আপ্তবাক্যে বিশ্বাস রেখে সাংবাদিকতার নিয়মবিধি মেনে অভিযুক্ত ও অভিযোগকারী দু'জনেরই বক্তব্য প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সেই ত্রুটিমুক্ত সাংবাদিকতার ধার ধরে না সংবাদ মাধ্যমের একাংশ। যেমনভাবে কাঠগড়ায় তোলা হল বগটুই হত্যালীলায় মৃত পরিবারদের পাশে দাঁড়ানোর সরকারি প্রক্রিয়াকে। 

২০২২ সালের ২১ মার্চ গণহত্যার রাত দেখেছিল রামপুরহাটের বগটুই গ্রাম। স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান ভাদু শেখ খুনের অব্যবহিত পরে পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল একের পর এক বাড়ি। পুড়ে মৃত্যু হয়েছিল ১০ জনের। আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছিল বহু পরিবার। পোড়া বাড়ির ক্ষত নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল বগটুই। পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজধর্ম পালন করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা নবান্ন থেকে পৌঁছেছিল বীরভূমের জেলাশাসকের অফিসে। ‌অগ্নিদগ্ধ পরিবারগুলির হাতে চটজলদি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য নিজের ত্রাণ তহবিল থেকে ওই টাকা পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরের দিন অর্থাৎ ২৪ মার্চ নিজেই বগটুইয়ে হাজির হয়েছিলেন মমতা। ঘোষণা করেছিলেন ক্ষতিপূরণ। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো সেই টাকার সংস্থান করতে অর্থ অনুমোদন করেছিল নবান্ন এবং দ্বিতীয় দফায় পাঠানো হয়েছিল ৪৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনে মিড ডে মিলের বরাদ্দ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল সাময়িকভাবেই। 

২৮ মার্চ সেই টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হওয়ার তিন দিন আগেই টাকা ফেরত যায় কেন্দ্রীয় অনুদানের তহবিলে। সরকারি আধিকারিকদের একাংশের মত, এ ক্ষেত্রে কোনও অন্যায় করেনি নবান্ন। কারণ, আইনেই রয়েছে সেই সংস্থান। বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৬৫ নম্বর ধারা বলছে, কোন ঘটনা বা দুর্ঘটনাকে বিপর্যয় বলে চিহ্নিত করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের। সেই পরিস্থিতি দ্রুত সামাল দিতে কোনও প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তি নিজের সম্পদ কাজে লাগাতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত সচিবদেরও একাংশ জানাচ্ছেন, আর্থিক বিধি মেনে সরকার চললেও অনেক ক্ষেত্রে কনভেনশন বা প্রথায় চলে প্রশাসন। এক খাতের টাকা সাময়িকভাবে অন্য খাতে ব্যবহার করাটাও এ রকমই কনভেনশন। সেই কনভেনশন মেনেই বগটুইয়ে বিপর্যয় মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ করে ঠিক কাজই করেছে নবান্ন।

Tags : Yellow Journalism Investigative Journalism Artificial Intelligence Bengali Journalists Hollywood Movies হলুদ সাংবাদিকতা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বাংলা সংবাদমাধ্যম

0     0
Please login to post your views on this article.LoginRegister as a New User

শেয়ার করুন


© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.