কলকাতা: মঙ্গলবার মনোনয়ন (Nomination) প্রত্যাহারের শেষ দিন। মনোনয়ন পর্বে রাজ্য জুড়ে ছিল দুর্বৃত্তের রাজত্ব। স্ক্রুটিনির (Scrutiny) পর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনেও অশান্তি অব্যাহত। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রত্যাহার করা নিয়ে প্রার্থীদের চাপ দেওয়ার একাধিক অভিযোগও উঠে এসেছে। এদিন ভাঙড়ের ২ নম্বর ব্লকের বেওতা ২ নম্বর গ্রামের সিপিএম প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। কাঁঠালবেড়িয়া গ্রাম সংসদে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন সন্ন্যাসী মণ্ডল। মনোনয়ন প্রত্যাহারে চাপ, রাজি না হওয়ায় প্রার্থীর বাড়ি, দোকান ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের (TMC) বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তৃণমূলের চাপের মুখেও মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় গতকাল সিপিএম প্রার্থীর বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূলের দুষকৃতীরা।
বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) বিরুদ্ধে খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন শিবঠাকুর মণ্ডল। সেই শিবঠাকুর মণ্ডলের স্ত্রী লিপিকা মণ্ডল হয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থী। অভিযোগ, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের চাপ দিতেই শিবঠাকুরের উপর হামলা চালিয়েছে তাঁর কাকা ও কাকার অনুগামীরা। অভিযুক্তরা বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। দুবরাজপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি।
আসানসোলের রানীগঞ্জের এগরা পঞ্চায়েতে সোমবার দুপুরে এগরা পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থী রাজু কেওড়াকে তুলে নিয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের চাপ দেওয়ার অভিযোগ শাসক দলের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগকে সামনে রেখে রানীগঞ্জের বল্লভপুর পার্টি অফিস থেকে মিছিল বের করে বল্লভপুর পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম নেতৃত্ব থেকে কর্মী সমর্থকরা। তাদের দাবী অবাধে সুষ্ঠ ভাবে এবং নির্বিঘ্নে পঞ্চায়েত ভোট করতে হবে। জোরপূর্বক মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করানো চলবে না।
প্রার্থী চিন্ময় তেওয়ারী ও তার কাকু সজল তেওয়ারীকে মারধর করার অভিযোগ উঠলো তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। তবে সজল তেওয়ারী নিজেও তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী। তবে এই নির্বাচনে তার ভাইপো চিন্ময় তেওয়ারী বিজেপি দলের হয়ে জেলা পরিষদের প্রার্থী হন এবং তার স্ত্রী সিঙ্কু তেওয়ারী সমিতির প্রার্থী হয়। ঘটনা প্রসঙ্গে চিন্ময় তেওয়ারী অভিযোগ করেন গতকাল রাতে আছড়ার উপপ্রধান হরেরাম তেওয়ারী ও সঞ্জয় সুকুল কিছু দুষ্কৃতীদের নিয়ে গিয়ে তাকে এবং তার কাকুকে বাড়ি থেকে ফোন করে ডেকে মারধর করে এবং মনোনয়ন প্রত্যাহার করার হুমকি দেয়। তবে এই প্রসঙ্গে সঞ্জয় সুকুল বলেন তার প্রতি ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তবে এই ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা ভোলা সিং জানান এটা পারিবারিক ঝামেলা এতে দলের কোনো হাত নেই।
আরও পড়ুন: Panchayat Election | টিকিট না পেয়ে দলকে হারাতে মাঠে নামলেন তৃণমূলের সহ সভাপতি
সিপিএম জমানায় আরামবাগ কেশপুর প্রভৃতি এলাকায় পঞ্চায়েত ভোট এলেই অনেক বিরোধী প্রার্থীর বাড়িতে সাদা থান পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠত। এর অর্থ ছিল, বিরোধী দলের কেউ প্রার্থী হলে তার স্ত্রীকে বৈধব্যের বেশ ধরতে হবে। তারই অ্যাকশন রিপ্লে এখন দেখা যাচ্ছে তৃণমূল জমানায় পঞ্চায়েত ভোটে। এমনটাই দাবি বিরোধীদের। ফের থান সংস্কৃতি দেখা গেল দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর। তার পরে হুগলির ধনেখালি। সব ক্ষেত্রেই অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ধনেখালিতে সাদা থানটি কিন্তু রাখা হয়েছে সিপিএমেরই বাড়ির সামনে। সিপিএমের অভিযোগ, ওই ব্লকের ভাস্তারা পঞ্চায়েতে তাদের প্রার্থী বরুণ গোস্বামীর বাড়িতে তৃণমূলের ১৫-২০ জনের বাইক বাহিনী হামলা চালায়। জানলার কাচ ভেঙে সেখান দিয়ে সাদা থান ঘরে ঢুকিয়ে দেয়।
মনোনয়ন পর্ব থেকে রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাসের ছবি ধরা দিয়েছিল। ভাঙড়, ক্যানিং, মুর্শিদাবাদ, চোপড়া মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। রাজনৈতিক হিংসায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬জন। অশান্ত ক্যানিং ও ভাঙড় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। অভিযোগ জানানোর জন্য রাজভবনে খুলে ছিলেন সেফ রুম। রাজ্যের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনে নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য ও নির্বাচন কমিশন শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়। এদিন সুষ্টু নির্বাচনে হাইকোর্টের নির্দেশকেই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট।