বিজেপির তলার সারির কিছু ভক্ত কর্মীদের কাছে শুনলাম তাদের কোট আনকোট দাদা দলের বৈঠকে বলেছে, বাংলা অচল করে দেব, সরকার চালাতে দেব না, ভোট মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী রেখে হবে না, সরকার ভেঙে দেওয়া হবে। তো এই দাদা মাঝেমধ্যেই ভাট বকেন, বিভিন্ন তারিখে কী কী হবে তাও জানান, অনেকটা নস্ট্রাদামুসের মতো, মেলে না তাতে কী? উনি বলেন। কিন্তু এই কথাটা অন্তত আমি সিরিয়াসলি নিচ্ছি। রাজ্যকে এমন একটা অবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়ার ছবি আমাদের সামনেই আছে। কেবল বিরোধী দলনেতা নয়, রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতি, যিনি নাকি আবার লোকসভাতে দলনেতা সেই বহরমপুর কংগ্রেসের নেতাও একই দাবি করেছেন। সব মিলিয়ে সরকার ভাঙার এক আবহ তৈরি, এবং এটাও ঘটনা যে সরকারে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাদের কাছে আবার মেসেজ যাচ্ছে, নরম ঘুঁটি দেখে আবার টোপ দেওয়া হচ্ছে, কিছু নেতা সেই আলোচনাতে অন্তত কান দিয়েছেন। সব মিলিয়ে বিজেপির ট্র্যাক রেকর্ড দেখলে নির্বাচিত সরকার ভাঙা তো ওনাদের বাঁয়ে হাত কা খেল। ২০১৪ থেকে এখন অবধি ১৩টা নির্বাচিত সরকার ওনারা ভেঙেছেন, নির্লজ্জভাবেই ভেঙেছেন, রিসর্টের সেলস টিম তো এখন মাঝেমধ্যেই রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। ওনারা গোয়ার সরকার ফেলেছেন, বিহারের সরকার একবার নয় বার দুয়েক ফেলেছেন, ঝাড়খণ্ডের সরকার প্রায় ভাঙার মুখে, হিমাচলপ্রদেশের সরকার আগে ফেলেছেন আবার ফেলবেন। মহারাষ্ট্রের সরকার, মধ্যপ্রদেশের সরকার, কর্নাটকের সরকার, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশের সরকার, মণিপুরের সরকার ভেঙেছেন। আপাতত দুটো সরকারের দিকে তাঁদের নজর, হিমাচলপ্রদেশ আর ঝাড়খণ্ড, ২০২৪-এ নির্বাচনের আগেই তাঁরা এ দুটো সরকার ভেঙে দিতেই পারেন। প্ল্যান বি-তে আছে বাংলার সরকার, দিল্লির সরকার, এ দুটো নিয়ে ওনাদের বিস্তর মাথাব্যথা। সন্দেশখালি নিশ্চয়ই এক জঘন্য এপিসোড, পক্ষে একটা কথা বলারও সুযোগ নেই। কিন্তু যাঁরা মণিপুর নিয়ে একটাও কথা বলেন না, যাঁরা হাথরস উন্নাও নিয়ে চুপ, যাঁরা বিলকিস বেগমের ধর্ষকদের মালা পরান তাঁদের কাছে আমরা সন্দেশখালির কথা শুনব কেন? সেই তাঁরা যারা গান্ধীকে গুলি করে মেরেছেন, যাঁদের আইডিওলজিকাল গুরুদেব সাভারকর এই ষড়যন্ত্রের মাথা ছিল সেই তাঁরা গান্ধীমূর্তির তলায় বসে প্রতিবাদ করছেন? হিপোক্রেসি কি ভি কোই সীমা হোতি হ্যায়, তাই না। সংসদীয় গণতন্ত্র এক রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে মানুষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন, সেই নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দেশের আইন কানুন তৈরি করেন, তাঁরা আগামী দিনে দেশ কোন পথে চলবে, অর্থনীতির দিশা থেকে শুরু করে দেশের মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের ব্যবস্থা করবেন। আমাদের দেশের সংসদীয় ব্যবস্থায় তাদের এক অংশ সরাসরি নির্বাচিত হবে, ৫৪২ জন লোকসভার সদস্য, আবার অপ্রতক্ষ্য নির্বাচনে ২৩৮ জন আর মনোনীত ১২ জন, মোট ২৫০ জন রাজ্যসভা সদস্য। এই পুরো ব্যবস্থাটাই আমাদের সংসদ, আমাদের শাসন ব্যবস্থা। নির্বাচিত সাংসদদের গরিষ্ঠ সমর্থন যে দলের থাকে, সেই দল সরকার তৈরি করে, তারা আইন সুপারিশ করে, ব্যবস্থার সুপারিশ করে সংসদে তা আলোচনা হয়, বিরোধী দল সেই আইন মানতে পারে, নাও মানতে পারে, না মানলে তারা সংসদে বিরোধিতা করে, সংসদের বাইরে মানুষের কাছে গিয়ে বলে, সরকারি দলও মানুষের কাছে গিয়ে ব্যাখ্যা করে তারা কী চায়। এই পুরো পদ্ধতিটাই সংসদীয় গণতন্ত্র। এর অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, আমাদের দেশে প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা নির্বাচিত নয়। প্রশাসন সরকারের নির্দেশে চলে, ডিএম থেকে এসপি, বিডিও থেকে এসডিপিও সরকারের নির্দেশ মেনে চলে, ওদিকে বিচার ব্যবস্থাও পরোক্ষভাবে সরকারের সুপারিশেই নিয়োজিত হয়, সেখানেও সরকার নির্ভরতা থাকে, এসব সীমাবদ্ধতা নিয়েই আমরা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। কিন্তু গত প্রায় দশ বছর ধরে, সেই ব্যবস্থার কিছু মৌলিক পরিবর্তন হয়ে চলেছে। গণতন্ত্রে বিরোধী দল, মানুষের আন্দোলন, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের দাবিদাওয়া নিয়ে সরকারের ভূমিকা, ওয়ান ওয়ে ট্রাফিকের মতো, মানে আমরা মনে করছি, এই বিল আপনাদের উন্নতির সহায়ক, এই বিল এলে আপনাদের উন্নতি হবে, বিল আনলাম, পিরিয়ড। এরপরে আর কোনও কথাই নেই। বিরোধী দল চিৎকার করছে? করুক। তারা রাস্তায় নামছে, নামুক। মানুষ ক্ষুব্ধ, হোক। ছাত্ররা বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে, করতে দাও, আমরা যা করেছি, তার থেকে পিছিয়ে আসার প্রশ্নই নেই।
এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, ক্রমশ আমাদের সীমাবদ্ধ গণতান্ত্রিক পরিসরও ছোট হয়ে আসছে, বিপক্ষ, বিরুদ্ধ মতের এতটা অবহেলা স্বাধীনতার পর থেকে কখনওই আমরা দেখিনি, এই অবস্থাটা ভারতীয়দের কাছে নতুন, কারণ আমাদের সংবিধানে যে জরুরি অবস্থার কথা বলা আছে, তা জারি করা হলে মানুষের অনেক মৌলিক অধিকারও কেড়ে নেওয়া হবে, তাও লিপিবদ্ধ করা আছে, ৭৪ থেকে ৭৭, সেই জরুরি অবস্থার চেহারাও দেশ দেখেছে। কিন্তু জরুরি অবস্থা না জারি করে, এক অঘোষিত জরুরি অবস্থাই লাগু হয়ে গেছে সর্বত্র, এ অবস্থা আমাদের কাছে সত্যিই নতুন। বিলের পর বিল পাশ করা হচ্ছে, আইন তৈরি করা হচ্ছে, আলোচনা ছাড়াই, বিরোধী দলকে সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না তাদের বক্তব্য বলার, আইন তৈরি হচ্ছে, লাগু করা হচ্ছে। ন্যূনতম সুযোগ থাকলে রাজ্য সরকারে শাসকদলের এমএলএ কিনে, নির্বাচিত সরকার ফেলে দেওয়া হচ্ছে। মাত্র দুজন সদস্য বিজেপির, অথচ সরকার বিজেপির হয়ে যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভেঙে চুরমার করা হচ্ছে। সংবিধান প্রণেতারা সংবিধান রচনার সময়েই নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন, রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়, কেন্দ্রে এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়, যুগ্ম মানে কেন্দ্র ও রাজ্যের যুগ্মভাবে এক্তিয়ার আছে তেমন বিষয়, সেই তালিকা আছে। সেই তালিকা সংশোধনও হয়নি। অথচ কেন্দ্র সরকার শিক্ষানীতি প্রকাশ করছে, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই, শিক্ষা যুগ্ম দায়িত্বের তালিকায় আছে। কৃষি রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়, কোনও আলোচনা ছাড়াই কৃষি বিল এনে ফেলছে, শ্রম যুগ্ম তালিকার অন্তর্ভুক্ত বিষয়, শ্রম বিল আনা হয়েছে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই। এমনকী পুলিশ ব্যবস্থা, যা নাকি রাজ্যের তালিকাভুক্ত, সেখানে তিনজন আইপিএস অফিসারকে কেন্দ্র থেকে সরাসরি ট্রান্সফারের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, মানে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভাঙা হচ্ছে। কোথাও বলা হচ্ছে কি, যে এই কাঠামোর দরকার নেই? বিজেপি কি সে কথা বলছে? না, কোথাও নয়। কিন্তু এটা তাদের দর্শন, একটাই দেশ, একজন নেতা, একটাই সরকার। তারা তাদের লক্ষ্য স্থির রেখেই চলছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো রাখবে না, তারা বিরোধী দল বলেও কিছু রাখবে না।
আরও পড়ুন: আবার সিএএ লাগু করার কথা, কাদের নাগরিকত্ত্ব থাকবে? কাদের চলে যাবে?
কোভিড সংক্রমণ যখন শীর্ষে তখন সরকার বাদল অধিবেশন ডাকল, এই অধিবেশনে ২৫টা গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করানো হল, তার মধ্যে ১৫টা বিল রাজ্যসভাতেও পাশ করানো হল, এই ১৫টা বিলের মধ্যে ৭টা বিল চার ঘণ্টার মধ্যে পাশ করানো হল। হ্যাঁ, এরই মধ্যে কৃষি বিলও ছিল, আলোচনা ছাড়াই তা পাশ করানো হয়েছিল। আবার চাপের মাথায় কোনও আলোচনা ছাড়াই তা ফেরত নেওয়া হয়েছিল। কেন বিল আনা হল, কেন বিল ফেরত নেওয়া হল, কেউ জানতেই পারলেন না।
প্রখ্যাত সাংবাদিক তভলিন সিংয়ের কিছুদিন আগে একটা লেখা পড়ছিলাম, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ, লেখার শীর্ষক ছিল, নরেন্দ্র মোদিজ ডেঞ্জারাস আইসোলেশন। লেখাতে তিনি বলছেন, ইন আ ডেমোক্রাসি, “ইউ জাস্ট কান্ট হিয়ার থ্রু দ্য ব্যালট বক্স”, কথাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, নির্বাচনে জিতে গেছি, ব্যস, আবার কী? যা ইচ্ছে তাই করব, এটা আর যাই হোক গণতন্ত্র নয়। কিন্তু মোদিজি এটাই মনে করেন, গণতন্ত্র নিয়ে তাঁর ধারণা, ঠিক এটাই। নির্বাচনের সময় মানুষের সঙ্গে মঞ্চ থেকে কথা বলব, মিত্রোঁ, মিলা কি নহি মিলা, হুয়া কি নহি হুয়া, হ্যায় কি নহি হ্যায়, ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক, মঞ্চের তলা থেকে পাবলিক গর্জন করবে, মিলা মিলা মিলা, হুয়া হুয়া, হুয়া। ভোট শেষ, কথাও শেষ। এরপর রেডিওতে কেবল মন কি বাত, উনি যা বলতে চান, মানুষ কী শুনতে চায় বয়েই গেছে, এবং ক্রমশ এক একলা রাজা হয়ে উঠছেন, আমি একা, আমি একক, আমি একমেবাদ্বিতীয়ম, হীরক রাজার দেশের জাদুকরের মতো। এবং অদ্ভুতভাবে এই তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে, বহু মানুষের মধ্যেও। সামান্য বিরোধিতা, ট্রোলিং শুরু, গালিগালাজ শুরু, কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন, ব্যস, আপনি শত্রু, চারিদিকে দেখুন বুঝতে পারবেন। অথচ আমাদের সমাজ এমনটা ছিল না, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের পরিমণ্ডলে দাঁড়িয়েই এক মানুষ, ভগবানের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছিলেন, তাঁকেও আমাদের সমাজ ঋষি বলেছিল, চার্বাক ঋষি। অথচ হিন্দুধর্মের উদগাতারা, হিন্দুত্বের কথা বোলনেওয়ালারা এতটুকু বিরোধিতাও সহ্য করতে রাজি নয়, এই ক’ বছরে এই বিষ সর্বত্র।
সরকারকে প্রশ্ন করলেই আপনি মাওবাদী, আপনি খলিস্তানি, আপনি টুকরে টুকরে গ্যাং, আপনি গুপকর গ্যাং, আপনি দেশদ্রোহী। কারা পড়ছে এই লিস্টে? বিজেপি বাদ দিয়ে সবাই, সব্বাই। দেশের সংখ্যালঘু মানুষ, প্রতিবাদী মানুষ, দেশের বিরোধী দল, দেশের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকদের সেই অংশ যারা মাথা নোয়াতে রাজি নন, দেশের প্রতিবাদী ছাত্র যুব, এমনকী দেশের শ্রমিক কৃষক, যারা সরকারের শ্রম আইন বা কৃষি বিল, নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে কথা বলছে, বলার চেষ্টা করছে। সরকার, দলের নেতা-মন্ত্রীরা প্রকাশ্যেই তাদের দেশদ্রোহী বলছেন, মানে হয় তুমি এধারে, নয়তো ওপারে, হয় তুমি বন্ধু নয় তুমি শত্রু। এই সরকার তাদের সঙ্গে কথা বলবে না, কারণ তারা দেশের শত্রু। এটা গণতন্ত্র নয়।
কৃষকরা আবার রাস্তায়। তারা খলিস্তানি, আমাদের রাজ্যের বিজেপি দলের সর্বোচ্চ নেতা বলে দিলেন। এক অভিনেত্রী বললেন পয়সা দিয়ে ভাড়া করা লোক আনা হয়েছে, মিডিয়া তা দেখাল। একজন বললেন, এসব কংগ্রেসের চক্রান্ত, একজন বললেন এরা আসলে মাওবাদী। যাঁরা বললেন, তাঁরা মন্ত্রী, বিজেপি দলের গুরুত্বপূর্ণ লোকজন। সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড় বয়ে গেল, এই একই কথা সেখানেও, মিডিয়াতেও একই প্রচার। ভিডিওর পর ভিডিও, তাতে দেখানো হচ্ছে, এরা কৃষক নয়, যদি বা কৃষক তাহলে এরা বিরাট ধনী, ইনকাম ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, এরা টাকা তুলছে। এসব ভিডিওর প্রত্যেকটা, হ্যাঁ প্রত্যেকটা মিথ্যে, মিথ্যে, মিথ্যে। কিন্তু তারা ভাইরাল, তাদের ভাইরাল করা হচ্ছে, মানুষ দেখছে, দেখেছিস? দেখেছিস? আর আমরা ভাবছিলাম এরা কৃষক? লক্ষ লক্ষ অন্নদাতা আবার আজও রাস্তায়, স্লোগান, এমএসপি চাই। সরকার প্রাথমিকভাবে কিছু কথা বলার ভান করে এখন চুপ, থাক পড়ে, কতদিন থাকবি, মোদিজি ডুবুরির পোশাক পরে জলের তলায় যাচ্ছেন, কিন্তু কৃষকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁর হচ্ছে না, অমিত শাহ ব্যস্ত বাংলার মসনদ নিয়ে। সরকার যা করেছে, ঠিক করেছে, এ নিয়ে কোনও কথা শোনা হবে না। এটা গণতন্ত্র?
এইখানেই সমস্যা। গণতন্ত্রের আবহে এই স্বৈরতান্ত্রিক চরিত্র আসলে ফ্যাসিস্ট দর্শনের। ফ্যাসিস্ট শাসনতন্ত্র মনে করে, তারা এবং তারাই একমাত্র মানুষের ভালো চায়, এবং সেই ভালো করার জন্য তাদের যা ইচ্ছে খুশি তারা করতে পারে, যে কোনও পদক্ষেপ নিতে পারে। ছোট্ট তথ্য, হিটলারের সময় ফিজিকালি চ্যালেঞ্জড তা সে যেরকমই হোক না কেন, অন্ধ, বধির, রিকেট, জড়, যে কোনও রকমের শারীরিক অক্ষমতাকে জেনেটিক, হেরিডিটরি বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। মনে করা হয়েছিল, এই মানুষেরাই আরও লক্ষ লক্ষ শারীরিক অক্ষম বা বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের জন্ম দেবে, তাই কেবল তাদের নয়, তাদের মা-বাবা, নিকট আত্মীয়দেরও মারা শুরু হয়েছিল। এর ফলে তারা থাকবে না, বংশানুক্রমে এই অক্ষমতাও থাকবে না, বৈজ্ঞানিকভাবে তাদের তত্ত্ব খুব ভুলও নয়। যুদ্ধ পরবর্তী আধুনিক জার্মানিতে শারীরিক অক্ষমতার সংখ্যা নগণ্য, কিন্তু পদ্ধতিটা ভাবুন, এই অমানবিক পদ্ধতি, এই দানবীয় পদ্ধতি যে সরকার গ্রহণ করে, তারা কি মানুষ? আজ এই কথা ভাবার সময় এসেছে, এই সরকার এক বিরাট অংশের গরিব, না খেতে পাওয়া মানুষকে ক্রমাগত ঠেলে দিচ্ছে আরও দূরে আরও দূরে, তারা মরে যাবে, তাদের কবর খোঁড়া হচ্ছে, মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের উন্নততর জীবনযাত্রার জন্য, তাদের ফুর্তি, ভোগবিলাসের জন্য। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচিত সরকার ফেলে দেওয়ার চক্রান্ত করছে, এ আমরা হতে দিতে পারি না, রুখে দাঁড়ান।