যত বার ডার্বি, তত বার হারবি। স্লোগানটা কোন দলের সমর্থকরা চালু করেছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু এখন যেন কথাটা মোহনবাগান সমর্থকদের মুখেই মানায়। আই লিগ, আই এস এল এবং ডুরান্ড কাপ মিলিয়ে পর পর ছটা ডার্বিতে জিতেছে সবুজ মেরুন দল। শনিবার এ বারের আই এস এল-এ আবার মুখোমুখি হতে চলেছে দুই প্রধান। সল্ট লেক স্টেডিয়ামের সেই ম্যাচ ঘিরে টিকিটের হাহাকার। এই প্রথম ইস্ট বেঙ্গল আর এটিকে মোহনবাগান আই এ এল-এর ম্যাচে কলকাতায় মাঠে নামবে। কারণ গত দুই মরসুম করোনার জন্য ম্যাচ হয়েছিল গোয়াতে। এবার তাই দুই দলের সমর্থকরাই ম্যাচ দেখতে মরিয়া। ৬৪ হাজার টিকেটের মধ্যে এদিক-ওদিক মিলিয়ে কোনও টিকিটই পড়ে নেই। আগ্রহ বেশি মোহনবাগান সমর্থকদের। তাদের গ্যালারির সব টিকিটই বিক্রি হয়ে গেছে।
কী হবে শনিবারের ডার্বিতে? এই ম্যাচে সব সময়ই যে হিসেব মিলবে তা বলা যায় না। বহুবার দেখা গেছে আন্ডারডগ টিমই টেক্কা মেরে বেরিয়ে গেছে। শক্তির বিচারে মোহনবাগানই এগিয়ে। তাদের সেট টিম। তিন বছর ধরে টিমটা এক সঙ্গে খেলছে। প্রথম একাদশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাইকার দিমিত্রি পেত্রাতোস, ডিফেন্ডার ব্রেন্ডন হামিল এবং গোলকিপার বিশাল কাইথ ছাড়া সবাই পুরনো। রয় কৃষ্ণ, ডেভিড উইলিয়ামস, অমরিন্দর সিং এবং সন্দেশ ঝিঙ্গনকে ছেড়ে দিয়েছে মোহনবাগান। তাঁরা এখন অন্য দলে। এর মধ্যে রয় কৃষ্ণের অভাব অনুভূত হচ্ছিল। তাই প্রথম ম্যাচে সল্ট লেক স্টেডিয়ামে চেন্নাইয়ান গোলএফ সি-র কাছে বাগানের হারের পর গেল গেল রব উঠে গিয়েছিল। কিন্তু পরের ম্যাচে কেরলের মাঠে গিয়ে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ৫-২ গোলে জয় শুধু বাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দোকে নয়, আশ্বস্ত করেছে তাদের সমর্থকদের। সেই ম্যাচে দিমিত্রির হ্যাটট্রিকে নতুন করে আশায় বুক বাঁধছে সবুজ মেরুন সমর্থকরা। তবে দিমিত্রি তো বক্স স্ট্রাইকার নন। একটু পিছন থেকে খেলেন। তবে গোলের জায়গাটা ঠিক চেনেন। এ রকম একজন গোল করার লোক থাকলে দলের জেতার কাজটা সহজ হয়।
তবে মোহনবাগানে গোল করার লোক তো কম নেই। হুগো বুমো, লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিং, জনি কাউকোরা বিভিন্ন ম্যাচে গোল করেই চলেছেন। এদের সঙ্গে আবার যোগ দিয়েছেন আশিক কুরুনিয়ন। আবার ডাগ আউটে বসে আছেন গত বারের আই এস এল ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করা কিয়ান নাসিরি। এতগুলো গোল করার লোক আছে মোহনবাগানে। তাদের কোচের স্ট্র্যাটেজি হল উইং ধরে দ্রুত গতিতে আক্রমণে যাওয়া। সেই কাজটা করতে পারেন লিস্টন কোলাসো, আশিক কুরুনিয়নরা। তাদের পিছনে জনি কাউকো এবং হুগো বুমোরা যথেষ্ট বল জোগানোর কাজটা করেন। তাই সব মিলিয়ে মোহনবাগান অ্যাটাককে সমীহ করতেই হবে। তা বলে মোহনবাগান যে হাসতে হাসতে ম্যাচ জিতে যাবে এ রকম ভাবা ভুল। কারণ ডিফেন্স নিয়ে বাগানে চিন্তা আছে। তিন ব্যাকে খেলছেন ফেরান্দো। প্রীতম কোটাল, শুভাশিস বসুর সঙ্গে ব্রেন্ডন হামিল। এই তিন ব্যাকের কম্বিনেশন এখনও ঠিক দানা বাঁধেনি। ডিফেন্সে প্রায়ই বড় বড় ফাঁক ফোকড় দেখা দিচ্ছে। শনিবার বাগানের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করছে তাদের ডিফেন্সের ভাল খেলার উপর।
সাদা চোখে মনে হচ্ছে, ম্যাচটা মোহনবাগানের অ্যাটাকের সঙ্গে ইস্ট বেঙ্গলের ডিফেন্সের। এই দায়িত্ব ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্স পালন করতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ইস্ট বেঙ্গল নতুন টিম। আই এস এল-এ সবে তিনটে ম্যাচ খেলেছে। প্রথম ম্যাচে কেরলের মাটিতে কেরালা ব্লাস্টার্সের কাছে হার, পরের ম্যাচে ঘরের মাঠে এফ সি গোয়ার কাছে শেষ মুহূর্তের গোলে হার। তার পর গুয়াহাটিতে গিয়ে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে তিন গোলে এগিয়ে গিয়েও আবার সংযুক্ত সময়ে গোল খাওয়া। এই ডিফেন্সকে কি ভাল বলা যাবে? সার্থক গোলুই, ইভান গঞ্জালেস, চুননুঙ্গা লাল এবং জেরির ডিফেন্স খুব খারাপ না হলেও খুব ভাল নয়। আসলে একটা ডিফেন্স দাঁড়াতে সময় নেয়। ইস্ট বেঙ্গল কোচ স্টিভন কনস্ট্যানটাইন তো সময়ই পাননি। তাঁকে দোষ দেওয়া যাবে না। ডুরান্ডে তাঁর টিম এক গোলে হেরেছিল। গোলটি মোহনবাগানের কারুর করা নয়। তাঁর দলেরই সুমিত পাসির করা। এই সুমিত পাসিকে অনেক জায়গায় খেলিয়েছেন স্টিভন। এখন তাঁকে প্রথম দলে রাখতে পারছেন না। তবে সুমিত পাসি তাঁর ভাবনার মধ্যেই আছেন বলে জানিয়েছেন স্টিভন।
নতুন একজন স্ট্রাইকার দুদিন হল প্র্যাক্টিস করছে ইস্ট বেঙ্গলে। তিনি হলেন ভারতের অনূর্ধ্ব ২০ দলের হিমাংশু জ্যাংরা। তাঁকে শনিবার নামানো হবে কি না তা নিশ্চিত নয়। তবে হিমাংশু নামতাই পারেন। ইস্ট বেঙ্গল ভরসা করছে দুই ব্রাজিলিয়ান ক্লেটন সিলভা এবং অ্যালেক্স লিমার উপর। দুজনেই আই এস এল-এর পোড় খাওয়া ফুটবলার। দুজনেই ইতিমধ্যেই গোল করে ফেলেছেন। ইস্ট বেঙ্গলের ম্যাচ জেতা নির্ভর করছে এদের দুজনের গোল পাওয়ার উপর। আর মাঝ মাঠে নির্ভরতা দেওয়ার জন্য ইস্ট বেঙ্গল তাকিয়ে কিরিয়াকুর উপর। মুশকিল হচ্ছে নতুন অস্ট্রেলীয় মিডফিল্ডার জর্ডন দেহারতি বেশ ভাল। কিন্তু তাঁকে খেলানোর কথা ভাবলে আ্যালেক্স লিমা ও ক্লেটন সিলভাকে এক সঙ্গে খেলানো যাবে না। সব মিলিয়ে স্টিভনের কাজটা বেশ কঠিন। তবে প্রথম একাদশ বাছা নিয়ে স্টিভন কী করবেন তা তিনিই জানেন। কিন্তু তাঁর কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল বাজিমাৎ করতে পারবে কি না তাই এখন দেখার। সব মিলিয়ে ধারে ভারে মোহনবাগান এগিয়ে থাকলেও ইস্ট বেঙ্গল কিন্তু পাশা উল্টে দিতে পারে।