Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeIPL 2024সুইচ হিট। প্রোটিয়া-ধ্বংসের রাজত্বে জ্যোৎস্নার ময়ুর সিংহাসন

সুইচ হিট। প্রোটিয়া-ধ্বংসের রাজত্বে জ্যোৎস্নার ময়ুর সিংহাসন

Follow Us :

শচীন যখন ব্যাট করতে নামেন হাইওয়েতে ট্র্যাফিক বন্ধ হয়ে যায়।

শচীন যখন ব্যাট করতে নামেন দুধওয়ালা দুধ বিক্রি থামিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।

শচীন যখন ব্যাট করতে নামেন ফুটপাথে হাঁটাহাঁটি স্তব্ধ হয়ে যায়।

শচীন যখন ব্যাট করেন টিভির দোকানের সামনে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় যেখানে রাস্তায় দাঁড়ানো পথচারী তাঁর খেলা দেখছে।

শচীন যখন ব্যাট করেন ভারতীয় জনজীবন সব কিছু ফেলে তাঁকেই দেখে।

তা রোববার বিরাট কোহলি যখন একানব্বই বছর পুরোনো ইডেনে নবতিপর রানের পৃথিবীতে প্রবেশ করলেন ,ইডেনের ক্লাবহাউস পৃথিবীতে কেউ যেন ‘পজ ‘বাটন প্রেস করে দিয়েছিল। নইলে সব কিছু স্বল্পকালীন ভাবে এমন স্তব্ধ হয়ে যাবে কেন ?

প্রেস বক্স থেকে ভালো ভিডিও তোলা সম্ভব নয়। একে তো পনেরতলা হাইট । তারপর কাঁচ ভেদ করে ভালো ভিডিও হয়না । অগত্যা নেমে আপার টিয়ারে। কিন্তু সেখানে ওপর দিকটায় জব্বর ভিড়। পাশাপাশি প্রায় দাঁড়ানো যাচ্ছে না। নামলাম নিচে। ঠিক যে মুখটায় আপারের দক্ষিণ দিকের সিঁড়ি থেকে নিচে নামার। সেখানে পুলিশ -দর্শক মিলে এত ভিড় যেন সুরুচি সংঘের প্যান্ডেল।

বিরাট ততক্ষণে ৯৩। দ্রুত ঢুকে গেলাম সিএবির আপার বক্সে। মাঠের যেটুকু সেই সিঁড়ি থেকে দেখা যায় সেখানে তিলধারণের জায়গা নেই। লাউঞ্জে কাল পাঞ্জাবিতে মদন মিত্র। এই প্রথম ওহ লাভলী বলতে শুনলাম না। কারণ তিনি খুঁজছেন সুনীল গাভাসকারকে। পেয়েই বললেন “আপনার গলায় বেকরার করকে হামে ইউ না জাইয়ে আবার কবে শুনবো ? সেই যে আমি-আপনি-অনুপ জালোটা রাত তিনটে অবধি আড্ডা মেরেছিলাম। ” গাভাসকারের শোনার মতো একেবারেই অবস্থা নেই। কোহলি ৯৭। তিনি ছুটছেন মাঠে। সেঞ্চুরির পরেই তাঁকে টিভিতে ধরবে। মন্তব্য নেবে ষ্টার স্পোর্টস। এখন গানটানের সময় কোথায় ?

ক্লাবহাউসের যে দিকটা ইডেনের ঘন্টা –তার পেছনেও থিকথিকে ভিড় যেন কৌতূহলী জনতা লেবুতলার রামমন্দির দেখছে। সেখানেও ছবি তোলার মতো জুতসই জায়গা পেলাম না। এটুকু ফাঁক দিয়ে দেখা গেল যে ইডেন গ্যালারি চতুর্দিকে মোবাইল টর্চ জ্বালিয়ে দিয়েছে। কোহলির রেকর্ড স্পর্শকারী সেঞ্চুরি তুলে রাখবে।

দ্রুত ছুটলাম লোয়ার টায়ারের দিকে আরও একটা গলতায়। সেখানেও একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের সোজা হয়ে দাঁড়াবার জায়গা নেই। কর্তব্যরত সব পুলিশকর্মী মাঠের দিকে তাকিয়ে। কেউ এই মুহূর্তে দর্শক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভাবিত নন। বরং দর্শকের সঙ্গে গা লাগিয়ে ঐতিহাসিক মুহূর্ত প্রত্যক্ষ্ করতে চান। শচীনেরটা না হয় বিজ্ঞাপনী স্লোগান ছিল। ভারতীয় জনজীবনে যার অনেকটা সত্যি হয়ে ঘটলেও ইডেন গার্ডেন্সে এভাবে রেকর্ডেড নয়।
বিরাটের সেঞ্চুরি ভিডিওতে তুলতে শেষমেশ যে কর্নারে পৌঁছলাম সেখানেও সামনে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। সমস্যা হল তিনি ৯৯। এখুনি ব্যাপারটা ঘটবে। মনে হল অনেক আগেই যুবরাজ সিং-য়ের টুইটটা সিরিয়াসলি নেওয়া উচিত ছিল। বিরাট ৩৭। কিন্তু যুবরাজের তখনি মনে হয়েছিল শচীনকে ৪৯তম সেঞ্চুরিতে স্পর্শ করাটা আজ ঘটতে পারে। তাই টুইট করে দেন।

যা হোক এখন দেখছি ভিড়ের মধ্যে সামনে যাওয়ার জন্য চূড়ান্ত ঠেলাঠেলি। লোকেশন ক্লাবহাউসের আর এক দিকে। মনে রাখতে হবে ইডেনের সেই অংশগুলো স্থবির হয়ে গিয়েছে সেঞ্চুরি প্রতীক্ষায় , যা সবচেয়ে হাই সিকিউরিটি জোন। শেষ পর্যন্ত সামনে থাকা সিএবির এক কর্মী প্রস্তাব পেশ করলেন যে পেছনে থাকা আমাদের সবাইকে তিনি সেঞ্চুরি ভিডিও শেয়ার করবেন। ভিড় মুহূর্তে রাজি হয়ে গেল।

কোহলির বায়োপিকে থাকা উচিত এই টুকরো টুকরো ছবিগুলো। যা ফিল্মি নয় সাররিয়াল। কোনো মানুষের কীর্তি-আকাঙ্খার সঙ্গে দেশবাসী কী পরিমান একাত্ম হয়ে গেলে এমন সমর্পণ সম্ভব। মাঠের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফোয়ারার মতো আবেগ তৈরি হয়ে যেন ভালোবাসার জ্যোৎস্না হয়ে ঝরে পড়ছিল কোহলির ওপর। গোটা ভারত চায় তাঁর রেকর্ড স্পর্শকারী সেঞ্চুরি। আর বাংলা চায় আজই ইডেনে। এক তরুণ বাইরে পোস্টার নিয়ে ঘুরছে ,বিরাট তোমার একশো সেঞ্চুরি না হলে আমি অবিবাহিত থাকব। ভক্তরা কেক কাটছে তালতলা টেন্টের সামনে । স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর জানানো জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তা পোস্টারের মাধ্যমে ইন্ডিয়ান টিম হোটেল থেকে ক্লাবহাউসের গায়ে সর্বত্র ছড়ানো। ভারতের আর কোন শহরে জন্মদিনের কেক , শতশত বিরাট মুখোশ -জার্সি এমন ভালোবাসার ফুলকি হয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে।

গড়পড়তা কেউ হলে সেই আবেগের ঢেউতেই চাপা পড়ত। একে বিশ্বকাপ। তারপর দক্ষিণ আফ্রিকার মতো টিম। সর্বক্ষণ ঘ্যানঘ্যানে সেই আলোচনা যে কবে রেকর্ড স্পর্শ করবে ? কেউ শুনতেই রাজি নয় যে উনি তো ৪৫২ ইনিংস পেয়েছিলেন। আমার সবে ২৭৭তম ম্যাচ আজ। তারা আজ জন্মদিনেই সেঞ্চুরি চায় যেন লেক মার্কেট থেকে মাছ কেনা বা ফ্যাব ইন্ডিয়া থেকে পাঞ্জাবি নেওয়ার মতোই সহজ। যাও। টাকা দাও। তুলে নাও। অথচ এমন পরীক্ষা যেখানে প্রতিদিন শূন্য থেকে শুরু করতে হয়। ক্ষমাহীন এক বলের খেলা। রিটেক নেই।

কোহলির সেঞ্চুরির পর পর বিশ্বের দুই গোলার্ধে বসবাসকারী দুই শচীনভক্তের কাছে কাছাকাছি রকমের টেক্সট পেলাম। ডোনাল্ড ,আক্রম ,শোয়েব, বন্ড, ওয়ালশ ,ইমরান ,হ্যাডলি , আমব্রোজ ,পোলক ,ওয়াকার ,ম্যাকগ্রা, ব্রেট, বিশপ ,বোথাম,মার্শাল ,ওয়ার্ন ,মুরলি খেলেছেন শচীন। কোথায় সেই মাপের বোলার খেললেন বিরাট ? তর্কের একটা পর্যায় পর্যন্ত একমত হওয়া যায় যে শচীনের আমল তাঁর ব্যাটিং প্রতিভার কঠিনতম পৰীক্ষা নিয়েছিল। শচীন মানে শুধু ক্রিকেট মাঠ নয়। উন্নতি করতে থাকা দেশের নকশি কাঁথার মাঠ। তিনি মানে শুধু ভারতীয় রান রেকর্ড বা ট্রফি নয়। তা বলে সাদা বলের কোহলিরাজকে পিছিয়ে রাখবেন কী করে ? এমন সভ্যতা ভারতীয় ক্রিকেটে আর আসেনি।

কোহলি দেখাচ্ছেন এবং রোববার আবার দেখালেন , বন্যার মতো ধেয়ে আসা আবেগ ব্যাট থেকে সরিয়ে চূড়ান্ত ফিটনেসনির্ভর দুনিয়ার সাফল্যে তাঁর পাশে রাখার মতো কোনো নাম নেই। আগে তো নেই-ই। সবচেয়ে বড় গুণ নিজের ইগোকে কখনো ব্যাটিংয়ের ওপর চড়তে না দেওয়া। আধুনিক ব্যাটিংয়ের রাজাধিরাজ হয়েও এমন নম্র ভঙ্গিতে প্রতিদিন ইনিংস শুরু করেন যেন দিনমজুর। ডেইলি পেমেন্টে খান। জীবনের যে কোনো ক্ষেত্রেই শেখার মতো বৈশিষ্ট্য। উইশ লিস্ট দিয়ে ইডেন ওভার দ্য কাউন্টার ডেলিভারি পেয়ে যাচ্ছে এমন ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে একমাত্র কোহলি।

ভুল বললাম রোববারের ভারতও । কলকাতাবাসীর যুগ্মউপহার। ২৪৩ রান এবং যে ভঙ্গিতে তারা টুর্নামেন্টের দাদা টিম দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দিল তা আশির ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা পরবর্তী সময়ে স্টিভের অস্ট্রেলিয়া করত। ভাবাই যায় না দ্রাবিড়ের যে ভারত দু মাস আগেও এত জনগঞ্জনার মুখে ছিল তারা এই কান্ড করে দেখাচ্ছে।

মার্করাম ,ক্ল্যাসেন ,মিলার ,কুইন্টন ডি কক। এঁদের রানগুলো গোটা টুর্নামেন্টে দেখুন এবং পাশাপাশি আজকে আউট হওয়ার বিবর্ণ ভঙ্গি। তাহলে রোহিতরাজের অনায়াস সাম্রাজ্য স্থাপন বুঝবেন। দক্ষিণ আফ্রিকাই যদি ৮৩ ল আউট হয় তাহলে শিশুপাল শ্রীলংকা কী দোষ করে ছিল ?

মহম্মদ সামি যখন এলেন ২৭-২ এবং খেলার মোটামুটি ভাগ্যদর্শন হয়ে গিয়েছে ? তা বলে সামি কী করে অফ ডে নেন ? দ্রুত তিনি কাজ শুরু করে দিলেন এবং যুক্ত হয়ে গেলেন জাদেজা। এইধরণের পিচ দেখলে জাদেজা আবার ডিসনি ওয়ার্ল্ডে নিয়ে যাওয়া বাচ্চার মতো উৎফুল্ল হয়ে পড়েন। উল্টোদিকে কুলদীপ। মনে হয়েছিল আজ পরিস্থিতি এত সহজ যখন ,রোহিত সিক্সথ বোলারকে বাজিয়ে দেখতে পারেন। কিন্তু তিনি প্রোটিয়াদের পিষে মারতে চান। শেষ দিকে একটা ওভারথ্রো-এর জন্যও ফিল্ডারকে চোখ পাকাচ্ছেন। তাই পরীক্ষায় গেলেন না। বোঝা যাচ্ছে ভারত পাঁচ বোলারের ঝুঁকিপূর্ণ মডেলেই বাকি বিশ্বকাপ খেলবে। যার জন্য অদম্য সাহস চাই।

আর সেই সাহসের ভিত তৈরি করে দিচ্ছেন অধিনায়ক নিজে। বিরাট ১২৩ বলে ১০১-র জন্য যে পুরস্কার নিলেন তা পাওয়ার সম্ভাব্য তালিকায় প্রাক ম্যাচ ছিলেন মার্কো জানসেন। প্রায় সাতফুট ওপর থেকে তাঁর ডেলিভারি পাওয়ার প্লে -তে এযাবত শিহরণ ছড়িয়েছে বাকি দলগুলোর মধ্যে। ১২ উইকেটে আরো দীর্ঘকায় দেখাতে থাকা সেই জানসেনকে পরিকল্পিত ভাবে মারা শুরু করেন রোহিত। ২৪ বলে তাঁর করে যাওয়া মারকুটে ৪০ রান রেট এমন বাড়িয়ে দিয়েছিল যে পরে বিরাট বা শ্রেয়শের অনেক সুবিধে হয়। মাঝের ওভারগুলোয় বেশ কিছু ডট বল ক্ষতি করেনি।

কেকেআর ক্যাপ্টেন তাঁর ঘরের মাঠে দৃপ্ত ৭৭ করে যাওয়াটা বিরাটের রাজত্ব স্থাপনে ভরা নেটওয়ার্ক দিয়েছে । কিন্তু ইনিংসের মোমেন্টাম তৈরির কৃতিত্ব এককভাবে রোহিতের। অন্য কোনো অধিনায়ক হলে এই সুইসাইড বম্বারের কাজ নিজে না করে শুভমানকে দিয়ে করাত। কিন্তু তাঁর আর রাহুল দ্রাবিড়ের মধ্যে আশ্চর্য মিল …দুজনেই নিঃস্বার্থ আর দুজনেরই ইডেন লাক খুব
ভাল।

নইলে এত গুরুত্বপূর্ণ টস ভারত জেতে না। প্রোটিয়া – ধ্বংস আর জ্যোৎস্নায় উজ্জ্বল ময়ূর সিংহাসন -দুটো উইশ লিস্টেও একই দিনে টিক পড়ে না।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
বাংলার ৪২ | বারাসতে কোন দল এগিয়ে?
05:05
Video thumbnail
চতুর্থ স্তম্ভ | Fourth Pillar | ২৫শে বৈশাখ, হে নূতন
12:55
Video thumbnail
আজকে (Aajke) | শুভেন্দু বলেছিলেন বোমা ফাটিবে, সে বোমা কোথায় ফাটিল?
10:04
Video thumbnail
Politics | পলিটিক্স (08 May, 2024)
12:46
Video thumbnail
বাংলা বলছে | রাহুলকে নিশানা, মোদির মুখে অম্বানি-আদানি, কত কালো টাকা নিয়েছে কংগ্রেস, প্রশ্ন মোদির
38:28
Video thumbnail
Beyond Politics | সন্দেশখালি, মণিপুর এবং নারীসম্মান
07:58
Video thumbnail
SSC Scam | নিয়োগ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সংক্ষিপ্ত রায়ে স্বস্তিতে রাজ্য সরকার
03:01
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | আবার শুভেন্দুকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান
02:33
Video thumbnail
Narendra Modi | আম্বানি-আদানি নিয়ে রাহুল কেন নীরব, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রী মোদির
05:16
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধে রণহুঙ্কার | রায় শুনে আমার মনস্নিগ্ধ হয়েছে : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
04:19