বিনয় ভাস্কর। থাকেন দিল্লির উত্তমনগরে। ছোট্ট বিরাট কোহলির পাড়ার প্রতিবেশী ছিলেন। বয়স আনুমানিক ৬০ পেরিয়েছে। ছোট্ট থেকেই বিরাট তাঁকে ‘ভাস্কর আঙ্কল’ বলে ডাকেন। বিরাটের অনুরোধেই তাঁর ৫ নভেম্বরের ইডেনে আসা। এর আগে এই বিশ্বকাপে শুধু দিল্লিতে ভারত-আফগানিস্তান ম্যাচ স্টেডিয়ামে বসে দেখেছেন। ইডেন ম্যাচে আসার মূল কারণ কোহলির জন্মদিন। আগে প্রতি জন্মদিনের সন্ধ্যাতেই বিরাটদের বাড়িতে নিয়মিত হাজির থাকতেন। ধীরে ধীরে সেটা আর সম্ভব হত না। কোহলির বাবা প্রেম কোহলির অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন তিনি। দু’জনেই একই কোর্টে প্র্যাক্টিস করতেন। এবারের কোহলির জন্মদিন কোনও ভাবেই মিস করতে চান না তিনি। এই ৫ নভেম্বর একেবারেই চোখের সামনে থেকে কোহলিকে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি। ক্লাব হাউসের লোয়ার টায়ারে বসে কোহলির শুধু ব্যাটিংই দেখলেন না, এই বিশেষ শতরানের প্রতিটি শট কোন কোন পজিশনে খেলেছেন তা তিনি অনর্গল বলে দিতে পারছেন দেখছি। পাশে বসে ভাবছি এত তুখোড় স্মৃতিশক্তি কী করে এই ৬০ ঊর্ধ্ব ব্যক্তির!
এখন আসি আসল কথায়। বিনয় ভাস্কর ক্যান্সারে ভুগছেন। প্রচুর ডাক্তার দেখিয়েছেন। কিন্তু কোনও ডাক্তারই খুব বেশি আশা দেখছেন না। কোহলি আর্থিক দিক থেকে সাহায্যও করেছেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হওয়ার নয়। বারণ সত্বেও ইডেনে এসেছেন কোহলির হয়ে ‘বিরাট’ চিয়ার করতে। কারণ তিনি নিশ্চিত পরের বিশ্বকাপ যদি বিরাট খেলেনও তাঁর আর দেখা হয়ে উঠবে না। চলতি বিশ্বকাপই তাঁর জীবনে দেখা শেষ বিশ্বকাপ হতে চলেছে। এই কথাগুলি যখন তিনি বলছেন, তখনও মুখে হাসি লেগে আছে। দু:খের লেশমাত্র নেই। এই অবস্থাতেও বিরাটের প্রতিটি বাইন্ডারিতে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছেন। আর কোহলির হাফ সেঞ্চুরির পর থেকে বলছেন, ‘বিরাটের আজ শতরান নিশ্চিত, আমাকে খালি হাতে দিল্লি ফিরতে হবে না।’
রাবাডার বলে বিরাটের শতরান আসতেই একটু আবেগপ্রবণ দেখলাম মিস্টার ভাস্করকে। চোখ ভিজে আসছে। তবে বিরাটকে চিয়ার করা থামাচ্ছেন না। গলা ফাটিয়ে স্লোগান তুলছেন- ‘বি-রা-ট’ ‘বি-রা-ট’!
মনে মনে ভাবছি এত প্রাণের সঞ্চার কোথা থেকে পান দিল্লির উত্তমনগরের ভাস্করবাবু? আর কত ঘন্টা এ জীবনে পাবেন জানা নেই…কিন্তু জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড তিনি উপভোগ করছেন। যেন আজকের রাতটাই শেষ তাঁর। পরের দিনের সকাল নাও দেখতে পারেন। কানে অনুরণিত হচ্ছে সত্তর দশকের রাজেশ খান্না অভিনীত ‘আনন্দ’ সিনেমার সংলাপ- ‘বাবুমশাই…জিন্দেগি লম্বি নেহি, বড়ি হনি চাহিয়ে…’
ইডেন থেকে বেরনোর মুখে বললেন,’জানিনা কতঘন্টা সময় আছে আমার কাছে… তবে অন্য দেশে যদি বিরাটের বাবা প্রেমের সঙ্গে দেখা হয়, তাহলে ওঁকে বলব আজকের রাতের কথা…’ ভারতের ‘বিরাট’ জয়ের কারণে তখন ইডেনের আকাশ জুড়ে আলোর রোশনাই!