অব কি বার দোশ পার… অব কি বার আশি পার, অবকি বার চারশো পার…। বিজেপিতে এমন স্লোগান চালু করেছিলেন আমাদের ছোটা মোটা ভাই অমিত শাহ। এমনিতে বিজেপির নেতাদের স্টুডিওতে ডেকে বা চলতা ফিরতা ধরে ফেলে প্রশ্ন করা উঠেই গেছে, আর করলেও তা হল এত উন্নয়ন কী করে করেন? কতক্ষণ জাগেন কতক্ষণ কাজ করেন? আম চেটে খান না চুষে খান। বিদেশে গিয়ে এই যে বিপুল অভ্যর্থনা তা কি আসলে দেশের আজকের এই বিরাট উচ্চতার জন্য? এই জাতীয় প্রশ্ন থাকে। কিন্তু এর মধ্যেই এক ফিচেল সাংবাদিক অমিত শাহকে প্রশ্ন করেছিলেন, এই যে অব কি বার দোশ পার বলে বাংলাতে চেল্লালেন, হাতে তো ৭৭, একশোওও তো পার হলনিকো। মুখ পুড়ল না? তো মোটা ভাই বলেছিলেন, ওসব নির্বাচনের সময়ে বলতে হয়, কর্মীদের জোশ বাড়ানোর জন্য বলতে হয়, ওগুলো বললে ভোটারদের মধ্যে প্রভাবও পড়ে। তার মানে খুব পরিষ্কার, উনি কিন্তু জানেন কত ধানে কত চাল, হিসেব ওনার জানা আছে, কিন্তু কর্মীদের মাঠে নামানোর জন্য ওরকম কিছু হিসেব দিচ্ছেন। তো সেই নিয়ম মেনেই তিনি সেদিন জনসভাতে বললেন, ৩০টা আসন চাই-ই চাই, কি দেবেন তো? বেলুরঘাট দেবেন তো? ওনার সাধের বেলুরঘাটের জনসভাতেই ৩০টা আসনের কথা বললেন। মঞ্চে উপস্থিত বিজেপি নেতারা একে অন্যের মুখ দেখছেন, ৫টা কম বলিলেন কেন? কোন পাঁচটা তাহলে বাদ পড়িল? কারণ মাত্র কিছুদিন আগে এসে ওনাদের কারিয়াকর্তা, মানে কর্মীদের বৈঠকে বলে গেছেন, আমার ৩৫টা চাই। মাসখানেকের মধ্যে সেই ৩৫ এখন ৩০, আর ক’দিনে এই হিসেব কোথায় গিয়ে ঠেকবে কে জানে আর আজ এটাই বিষয় আজকে, অমিত শাহ নিজেই বিজেপির আসন কমাচ্ছেন। আসলে ক’টা আসন জিতবে বিজেপি?
বিজেপির ১৮টা আসন ছিল। একটা বাঘে খেল, মানে বাবুল সুপ্রিয় মন্ত্রিত্ব না পেয়ে দল ছেড়ে সে আসন তুলে দিলেন তৃণমূলের হাতে। কে দাঁড়াবে সেই আসনে ঠিক করতেই রাত কাবার বিজেপির। পবন সিংকে টিকিট দিলেন, তাঁর বাঙালি বিদ্বেষের কথা ছড়িয়ে পড়তেই ওনাকে অনুরোধ ইত্যাদি করে সরে দাঁড়াতে বলা হল, এবার ওনার জায়গাতে কে? অনেক ছড়িয়ে বর্ধমান দুর্গাপুরের সিটিং এমপি সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়াকে আনা হল? কেন উনি জেতা আসন থেকে সরলেন? কারণ ওই আসনে মেদিনীপুর থেকে দিলীপ ঘোষকে এনে লড়তে দেওয়া হয়েছে। কেন দিলীপ ঘোষকে মেদিনীপুর থেকে সরাতে হল? কারণ মেদিনীপুরে শুভেন্দু অধিকারীর প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পলকে দেওয়া হবে বলে।
আরও পড়ুন: Aajke | নির্বাচনের আগে হানাদারি চলছে গ্রামে গ্রামে, মোদিজির নয়া কায়দা
তিনটে আসনই ঘেঁটে আছে। মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষ দাঁড়ালে, ওটা বিজেপির শিওর সিট ছিল, এখন তিনটের দুটো সামলানো কঠিন, আর বর্ধমান দুর্গাপুরও ওই দিলীপবাবু বলেই লড়াই হবে। ওদিকে দেখুন রায়গঞ্জে দেবশ্রী রায়, জিতেছিলেন, মন্ত্রীও হয়েছিলেন, কিন্তু আসন ছেড়ে চলে এসেছেন দক্ষিণ কলকাতায়, রায়গঞ্জে এবারে বিজেপি তিন নম্বরে থাকবে। অমন সাধের রানাঘাট, ওই মুকুটমণি একলাই ঘেঁটে দিয়েছে, জগন্নাথের সামনে জোর লড়াই। এমনকী কোচবিহারে নিশীথ প্রামাণিকও স্বস্তিতে নেই, অনন্ত মহারাজ বেঁকে বসে আছেন, রাজবংশীদের ভোট সরে যাচ্ছে। সিএএ বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে খোদ বনগাঁতে, শান্তনু ঠাকুরের আসন টলমল করছে, মতুয়াদের মধ্যে সিএএ নিয়ে তৃণমূলের প্রচার সবে ছাপ ফেলছিল তার মধ্যে দিল্লিতে ধনখড় সাহেব মমতা বালা ঠাকুরের শপথের সময়ে হরিচাঁদ গুরুচাঁদের নাম করে শপথ বাতিল করে দিয়ে নতুন বখেড়া খাড়া করেছেন। হুগলি এবারে লকেট চ্যাটার্জি জিতলে এক বিস্ময়কর ব্যাপার হবে, সংগঠন থেকে সাংসদ সবটাই সমস্যায় পড়ে আছে। ডায়মন্ডহারবারে মিঠুন চক্রবর্তী না রুদ্রনীল ঘোষ, এই নিয়েই পরেশান কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ওদিকে বালুরঘাট কখন যে বেলুরঘাট হয়ে গেছে জানাই যায়নি, চা বাগানে অন্য সুর। দার্জিলিংয়ে হামরো অন্য জোটে, তৃণমূল সমতলে শক্তিশালী, ওদিকে রাজু বিস্ত গোর্খাল্যান্ডের দাবি তুলতে পারছেন না, কেবল জয় গোর্খাল্যান্ড বলে দার্জিলিং জেতা যাবে? সন্দেহ আছে। সব মিলিয়ে ৩৫ ছেড়েই দিন, ৩০-ও গুলগল্প, গোটা পাঁচ ছয় পাবে বিজেপি? সেই হিসেব চলছে মুরলী ধর লেনে। এবং এমন এক গরু হারানো অবস্থায় মাকে বউ আর বউকে মা বলাটাই যখন স্বাভাবিক তখন ৩৫ এক লাফে ৩০ হয়ে গেল। এ তো অস্বাভাবিক কিছু নয়, ওনার কানে যা এসেছে তা তো আরও সাংঘাতিক। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে রাজ্যে বিজেপির প্রচার, সংগঠন দেখে কি একবারও মনে হচ্ছে যে বিজেপি গতবারের ১৮টা আসনও জিততে পারবে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
এবারের নির্বাচনে অন্তত বাংলাতে বিজেপিকে অসংলগ্ন লাগছে, কোথাও সুর কেটেছে বলেই মনে হচ্ছে। দিল্লি থেকে মোদি-শাহ আসছেন, অন্যান্য মন্ত্রীসান্ত্রীরা আসছেন কিন্তু হোয়ার ইজ দ্য জোশ? সেই রণহুঙ্কার কোথায়? এক শুভেন্দু অধিকারী ছাড়া রাজ্য জুড়ে প্রচার করার মতো একজন স্থানীয় নেতাও নেই, দিলীপ ঘোষ বা সুকান্ত মজুমদার নিজেদের আসনেই ব্যস্ত। প্রচার শুরু হয়েছে, জমেনি। সব মিলিয়ে যথেষ্ট কারণেই অমিত শাহ নিজের টার্গেট নিজেই নামাতে শুরু করেছেন, ভোট শেষ হতে হতে তা যদি ১০-এ নামে, আমি অবাক হব না।