দেশের প্রধানমন্ত্রী ভাষণে হিন্দি সিনেমার ডায়ালগ দিচ্ছেন, এ প্রজন্মেরও অনেকেই দেখেছেন শোলে, সেখানে ধর্মেন্দ্রর ডায়ালগ ছিল, চুন চুন কর মারুঙ্গা, চুন চুন কর মারুঙ্গা। মানে ডাকাতরা যেখানেই লুকিয়ে থাক, আমাদের নায়ক বীরু তাদের বেছে বেছে মারবে। তো এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স পড়া আমাদের প্রধানমন্ত্রী রোজই নিজের শিক্ষাদীক্ষা আর জ্ঞানের নয়া নয়া মাইলস্টোন খাড়া করেন। উনি জানালেন রেজাল্টটা কেবল বের হতে দিন, চুন চুন কর জেল মে ডালেঙ্গে। এক্কেবারে পরিষ্কার হুমকি, যাঁরা বিরোধিতা করছেন করুন, মাথায় রাখুন আমরাই ক্ষমতায় আসছি এবং তখন সবকটাকে জেলে পুরব। এরকম কথা প্রকাশ্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলা যায়? নির্বাচনী বিধি কী বলে? আসলে নির্বাচনী বিধি নিয়ে উনি আর ভাবেন না, ওসব এখন তাঁর কন্ট্রোলে। এখান থেকে মানে এই বাংলা থেকে খবর যাচ্ছে ওই অঞ্চলে আমাদের একটু অসুবিধে আছে, কিছু লোককে তুলে নিতে হবে। তো সেই বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের ২০২২ সালের এক মামলা খুঁজে বের করা হল, ঠিক নির্বাচনের আগে এন আই এ সক্রিয় হল, বা তাদের সক্রিয় করা হল, তাদের সঙ্গে রীতিমতো বৈঠক হল, বুঝিয়ে দেওয়া হলো কাকে কাকে জেলে পুরতে হবে, কাকে কাকে জেলে পুরলে এলাকাতে বিরোধী শক্তিকে খানিক হলেও দমিয়ে দেওয়া যাবে। ব্যস, এনআইএ মাঝরাতে হাল্লা চলেছে যুদ্ধে। বলা নেই কওয়া নেই মাঝরাতে এমন হানাদারি হলে গ্রামের মানুষ, এলাকার মানুষ তো আসবেই, তাদের সঙ্গে তেড়িয়া হয়ে কথা বলার নির্দেশ আছে, উসকানি দেওয়ার নির্দেশ আছে। এবং সেই উসকানিতে পা দিয়ে গ্রামবাসীরা উত্তেজিত হলেই, পিছনের গাড়ি থেকে অপেক্ষমাণ চোখে চোখ রাখা চ্যানেলের রিপোর্টারেরা হাজির হবে, দেখেছেন দেখেছেন এ রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা বলে কিছুই নেই, যারা দেশদ্রোহী তাদেরকেও ধরতে দিচ্ছে না তৃণমূল, এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাদেরকে আড়াল করছে, দ্য নেশন ওয়ান্টস টু নো। আজ সেটাই বিষয় আজকে, নির্বাচনের আগে হানাদারি চলছে গ্রামে গ্রামে, মোদিজির নয়া কায়দা।
দেশের প্রধানমন্ত্রী মঞ্চ থেকে বলে যাচ্ছেন চুন চুন কর জেল মে ডালেঙ্গে। আরে বাবা অত বাছাবাছির কী আছে? বাছাবাছি হচ্ছে নাকি? খোঁজা হচ্ছে নাকি? গ্রেফতারির তো একটাই শর্ত, বিরোধী দলের হতে হবে, এখনও ঘাড় না নোয়ালে তাকে আগে গ্রেফতার করো, যে কোনও অজুহাতে গ্রেফতার করো। তারপর আইন আইনের পথ ধরে চলবে, তারিখ পে তারিখ, তারিখ পে তারিখ। বিরোধী নেতারা জেলে, না হলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, দেশে, সর্ববৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্রের খ্যামটা নাচ হচ্ছে, নির্বাচন হচ্ছে।
আরও পড়ুন: Aajke | বিজেপি সাংসদকে লস্কর ই তইবার লেখা বিনীত চিঠি
দেশের দু’ দুজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী জেলে, ইডি আর সিবিআই-এর অভিযান চলছে, ধরা হচ্ছে, জেলে পোরা হচ্ছে দেশের ৯৯ শতাংশ রাজনৈতিক বিরোধীদের, এরমধ্যে আবার বাছাবাছির কী আছে, অতবার চুন চুন বললে মুখে চুনকালি পড়বে তো। এ তো উট নয় যে প্রশ্ন করা যাবে, কাঁটা বেছে খায় কি খায় না? বিজেপি সাড়ে চারশোর মতো প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে, তার মধ্যে ১২০ জনের মতো প্রার্থী টার্ন কোট মানে আমাদের কাঁথির খোকাবাবুর মতো দলবদলু। সব দল থেকে, কংগ্রেস, তৃণমূল, টিডিপি, এডিএমকে, জেডিএস এমনকী সিপিএম থেকেও দলবদলুরা বিজেপিতে কেবল গেছেন নয়, এবারের নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন। মানে যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই যে ৪০০ জন জিতে আসবে ওই এনডিএ জোটের, তাহলে ১০০ জন থাকবেন ওই দলবদলুরা। মানে একটা দল ক্ষমতাতে আসবে, তাঁদের প্রতি চারজনের একজন হলেন দলবদলু। মনে পড়ে যাবেই ১৯৯৬-এ অটল বিহারী বাজপেয়ীর সেই বিখ্যাত বক্তৃতা, তিনি বলেছিলেন, “পার্টি তোড়কর সত্তা কে লিয়ে নয়া গঠবন্ধন করকে অগর সত্তা হাত মে আতি হ্যায় তো ম্যায় ইয়ে সত্তা চিমটে সে ভি ছুনা পসন্দ নেহি করুঙ্গা।” দল ভেঙে ক্ষমতায় থাকার জন্য জোট তৈরি করে যদি ক্ষমতা পেতে হয়, তাহলে সেই ক্ষমতাকে আমি ছুঁয়েও দেখব না। কিন্তু সেদিন তো কবেই গেছে, এখন তো মোদি যুগ। আর তাই ভোটের আগে পাড়ার ছেনো মাস্তানদের মতো হুমকি দিচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী, প্রকাশ্যেই বলছেন, রেজাল্ট বেরোনর পরে বেছে বেছে জেলে পাঠাব। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, খুব বাছাবাছি করে দেশের প্রধানমন্ত্রী গত ১০ বছরে যত ইডি অভিযান চালিয়েছেন তার ৯৯ শতাংশই বিরোধী নেতাদের ঘরে। মামলার ৯৯ শতাংশ বিরোধী নেতা, সাংবাদিক, সমাজকর্মীদের বিরুদ্ধে। এবারে নির্বাচনের আগে প্রচারমঞ্চ থেকেই নির্বাচনের পরে গ্রেফতার করার হুমকি দিচ্ছেন, এটা কি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে মানানসই? শুনুন দর্শকরা কী বলেছেন।
এমন হুমকি নতুন কিছু নয়, অন্তত যাঁরা এই দেশে গত দশ বছরের ইতিহাস জানেন, এখানে নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী অনায়াসে হুমকি দেন বুলডোজার পাঠিয়ে ঘর ভেঙে দেওয়ার, এনকাউন্টার করে মেরে ফেলার, প্রকাশ্য জনসভা থেকেই বলেন ঠোক দেঙ্গে। এখানে নির্বাচিত বিধায়ক নির্বাচিত হবার পরের দিনই আমিষ বিক্রি করা, মাছ মাংসের দোকানদারদের ব্যবসা বন্ধ করার হুমকি দেন। এখানে মুখ্যমন্ত্রী এনআরসি করে মিয়া ভাইদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর হুমকি দেন। আসলে ভয় দেখাতে চান, এঁরা প্রত্যেকেই ভয় দেখাতে চান, কেন? কারণ তাঁরা নিজেরা খুব ভিতু, প্রচণ্ড ভয়ে থাকেন, প্রতিটা সময় ভাবেন, এই বুঝি চলে গেল সাধের সিংহাসন।