১৯২২ সালে চৌরিচৌরার ঘটনা ঘটে, তার আগে মহাত্মা গান্ধীজি ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ পত্রিকায় তার লেখায় ব্রিটিশ সরকারের প্রতি অসন্তোষ উসকে দিয়েছিলেন। সে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল, তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯২২ সালের এই মামলায় তিনি ১২৪ এ ধারায় মানে দেশদ্রোহিতার অপরাধে অভিযুক্ত হন। গান্ধীজি আদালতে বলেছিলেন আমি দোষী। তিনি স্বীকার করেছিলেন যে হ্যাঁ, তাঁর লেখা সত্যিই ব্রিটিশ সরকারের প্রতি অসন্তোষকে উসকে দেয়, কিন্তু এটা ছিল অত্যাচারী শাসনের বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিবাদের একটি ন্যায্য উপায়। তাঁর এই বক্তব্য এবং মামলা ইতিহাসে তাঁর অহিংস প্রতিবাদ এবং নাগরিক অবাধ্যতার প্রতি অঙ্গীকারের একটি প্রতীক।
ঠিক এই সময়ে এই অবাধ্যতা দেখা যাচ্ছে সর্বত্র। দেশের শাসকদল চাইছে প্রত্যেক মানুষ ঘাড় নিচু করে সরকারের নির্দেশ মতো চলুক। বহু মানুষ তা মেনেও নিয়েছেন কারণ তাঁদের কথামতো চললে জীবন সহজ সরল হবে, সমস্ত ধরনের অপরাধ চুরি করার পরেও তাঁরা সফেদ ডিটারজেন্টে ধোওয়া এক নেতা, মন্ত্রী হয়ে উঠবেন, নির্বাচনে টিকিট পাবেন। কিন্তু সবাই কি সেরমকম নির্দেশ মেনেই চলছে? চলবে? এক তরুণ স্বাধীনতা সংগ্রামী, জানেন ফাঁসি অবধারিত, কিন্তু তিনি আদালতে দাঁড়িয়েই নিজের সওয়াল নিজেই করেছিলেন, বলেছিলেন “Revolution is the inalienable right of mankind. Freedom is the imprescriptible birthright of all.” বাল গঙ্গাধর তিলকের কথার সঙ্গে জুড়েছিলেন নিজের কথা, বলেছিলেন, “বিপ্লব মানবজাতির অপরিহার্য অধিকার। স্বাধীনতা হল সবার জন্মগত অধিকার।” না, একজনও জামিন চাননি, বিচার চেয়েছেন, এবং ইংরেজদের বিচারকে হাস্যকর প্রহসন বলেছেন। বাল গঙ্গাধর তিলকও আদালতে দাঁড়িয়ে শাস্তি ঘোষণার পরেই বলেছিলেন “জুরির রায় সত্ত্বেও, আমি নিজেকে নির্দোষ বলে মনে করি।”
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব ২৫)
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বার বার অবিচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছে। জওহরলাল নেহরু আদালতে দাঁড়িয়ে নিজের সপক্ষে বলেছেন। অনেকেই জানেন না অতুল্য ঘোষ ওই ব্রিটিশ আমলেই গ্রেফতার হওয়ার পরে নিজেই নিজের সওয়াল করেছিলেন। যখন অন্যায় প্রবল হয়ে ওঠে, অন্যায়টাই আইন হয়ে ওঠে তখন বিরোধিতা অনিবার্য। আজ আমাদের দেশে সেরকম এক সবলের, সরকারের প্রবল অন্যায়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। কিন্তু ব্রিটিশরাজের সঙ্গে ফারাকটা হল, ওঁরা গান্ধী, নেহরু, ভগৎ সিংকে তাঁদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য গ্রেফতার করেছিলেন, তাঁদের ইংরেজ শাসনের বিরোধিতার জন্য গ্রেফতার করেছিলেন, আর আজকের সরকার তাদের বিরোধিতার অভিযোগে গ্রেফতার করছেন না, অন্তত সেই অভিযোগ কাগজে কলমে আনছেন না, সবার সামনে বলছেন না। হেমন্ত সোরেন থেকে মণীশ সিসোদিয়া থেকে সঞ্জয় সিং থেকে প্রত্যেককে গ্রেফতার করা হচ্ছে আর্থিক অপরাধের অভিযোগ এনে, যে অভিযোগ কোনওদিনও প্রমাণ হবে না, হচ্ছেও না। কিংবা প্রতিবাদীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে উগ্রপন্থী বলে, দেশের প্রধানমন্ত্রীকে খুন করার চক্রান্তের অভিযোগ এনে। এই অভিযোগেই জি এন সাইবাবা জেলে কাটালেন দীর্ঘ চার বছরের বেশি সময়, শেষে জানা গেল একটা অভিযোগেরও প্রমাণ নেই। একইভাবে এক জেলখাটা আসামির ভুয়ো অভিযোগের ভিত্তিতেই আমাদের চ্যানেল সম্পাদককে গ্রেফতার করে জেলে পোরা হয়েছে, আসল কারণ সবার জানা। আজ যদি কলকাতা টিভি চ্যানেলে আরএসএস–বিজেপির গুণগান শুরু হয়, কাল জেল থেকে ছাড়া পাবেন আমাদের সম্পাদক। কিন্তু ওই যে শিরদাঁড়া টিকাউ হ্যায়, বিকাউ নহি। আমরা মাথা নোয়াব না। বিচারের দাবি করব, জাস্টিস। জাস্টিস ফর কলকাতা টিভি, জাস্টিস ফর কৌস্তুভ রায়।
দেখুন ভিডিও: