পূর্ব বর্ধমান : পূর্ব বর্ধমানের রায়নায় ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় কলকাতা থেকে গ্রেফতার সুপারি কিলার সহ ২। ঘটনাটি ঘটেছিল ২২ অক্টোবর। হেলমেটে মুখ ঢেকে দামি হাইস্পিড মোটর বাইকে করে যাচ্ছে দুই যুবক। তাঁদেরই পিছন পিছন যাচ্ছে একটি চারচাকা গাড়ি। গত ২২ অক্টোবর বিকালে তাঁরা যাওয়ার সময়ে কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি ওই বাইকে রয়েছে সুপারি কিলাররা। ওই দিন সন্ধ্যে বেলায় পূর্ব বর্ধমানের রায়নার দেরিয়াপুরের বাড়িতে কলকাতা থেকে বেড়াতে এসেছিলেন সব্যসাচী মণ্ডল নামে এক ব্যবসায়ী। ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে জামালপুরের হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুর টোল ট্যাক্স অফিসের সামনের রাস্তায় থাকা সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল সেই ছবি। তারই সূত্র ধরে ব্যবসায়ী খুনের ঘটনার তদন্তে কলকাতা থেকে এক সুপারি কিলার সহ ২ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তাদের জিজ্ঞেসাবাদ করে পুলিশ ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় জড়িত বাকিদেরও নাগাল পেতে চাইছে ।
খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে শনিবার রাতে কলকাতার নারকেলডাঙা এলাকা থেকে পুলিশ ওই ২ জনকে আটক করে। তাদের নাম জনিসর আলম ওরফে রিকি ও মহম্মদ সাদ্দাম। জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন জানিয়েছেন, “দু’জনকে আটক করে প্রথমে রায়না থানায় নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর রবিবার দুপুরে তাদের দু’জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশী চালানো হচ্ছে”। পারিবারিক শত্রুতার জেরেই খুন হতে হয়েছে সব্যসাচী মণ্ডলকে বলে জানিয়েছিলেন তাঁর বাবা দেবকুমার মণ্ডল। তিনি রায়না থানায় অভিযোগে জানিয়েছিলেন, তাঁর ছোট ভাই ও ভাইপোরা ‘লোক লাগিয়ে’ সব্যসাচীকে খুন করিয়েছে। সুপারি কিলার ধরা পড়ার পর এই অভিযোগকে সত্য বলে অনুমান করছে পুলিশ।
সব্যসাচীকে খুনের জন্য রিকি ’৫০ লক্ষ টাকা ’ সুপারি পেয়েছিল বলে জানায় পুলিশ। খুনের ঘটনার পর রিকি নারকেলডাঙার বদলে আনন্দপুরের গুলশন কলোনীতে ডেরা নিয়েছিল। পুলিশ সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করে। এরপরে ধরা হয় মহম্মদ সাদ্দামকে। এই সাদ্দামের গাড়িতে চেপেই অভিযুক্তরা ঘটনার দিন গিয়েছিল রায়নার দেরিয়াপুরে অবস্থিত সব্যসাচীর দেশের বাড়িতে। যে গাড়িতে করে খুন করতে যায়, গত দু’মাস আগে সাদ্দাম সেটি কিনেছিল। গাড়িটির ১৯তম মালিক ছিল সাদ্দাম। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন ওই গাড়িতে করে রিকি, সাদ্দাম সহ আরও কয়েকজন ছিল।
ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডলকে খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুর টোল ট্যাক্স অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে। সেই ফুটেজেই হাইস্পিড মোটর বাইকের পিছন পিছন চারচাকা ওই গাড়িটি যাওয়ার দৃশ্য ধরা পড়ে। এরপর জামালপুরের মসাগ্রামের একটি দেকানের ও ডানকুনির এক বাসিন্দার বাড়ির সিসি ক্যামেরায় এই একই ছবি ধরা পড়ে। পালসিট ও ডানকুনি টোল প্লাজা থেকেও ঘটনার দিনের রাতের সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করে পুলিশ।
হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুর সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ জানতে পারে, ঘটনার দিন দুপুর ২ টো ৩৯ মিনিট নাগাদ সব্যসাচী তাঁর গাড়িতে চেপে হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুর টোল ট্যাক্স পার হয়ে সোজা রায়নার দিকের রাস্তা ধরে চলে যায়। এরপর ওইদিন বিকাল ৪ টে ৫৯ মিনিটে বাইক আরোহীদের পিছন পিছন একটি চারচাকা গাড়ি হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুর টোলট্যাক্স অফিসের সামনে এসে দাঁড়ায়। সব্যসাচী তাঁর গাড়িতে চড়ে রায়নার দিকে সোজা চলে গেলেও ওই চারচাকা গাড়িটি সেই পথে যায় না। গাড়িটি টোল ট্যাক্স অফিসের ডান দিকে ঘুরে কালড়াঘাট ও জানকুলি গ্রামের রাস্তা ধরে এগিয়ে যায় দেরিয়াপুরের দিকে। কিছুক্ষণ বাদে সন্ধ্যা ৬ টা ৪০ মিনিট নাগাদ রায়নার দিক থেকে এসে হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুর টোল ট্যাক্স পেরিয়ে শুধুমাত্র বাইক আরোহীরা জামালপুরের দিকে সোজা চলে যায়। তারপর ওই সন্দেহজনক চারচাকা গাড়িটি রাত ৮টা ৪২ মিনিট নাগাদ দ্রুত গতীতে কালাড়াঘাট গ্রামের দিক থেকে ফিরে হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুর টোল ট্যাক্স অফিসের পিছনের রাস্তা দিয়ে রায়নার দিকে চলে যায়। বহিরাগত সুপারি কিলারদের কারা রাস্তা দেখিয়ে সব্যসাচীর দেশবাড়ি রায়না দেরিয়াপুরে নিয়ে গেল, এই প্রশ্ন পুলিশকেও ভাবিয়ে তুলেছে। এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম খান জানিয়েছেন ,তদন্ত এখনও চলছে। সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে।