বনগাঁ: চিরাচরিত বাঁধাধরা ছক ভেঙে দিলেন প্রধান শিক্ষক। আর সেটা করলেন বাগদেবীর আরাধনার দিনে। সরস্বতী পুজোয় প্রথা ভেঙে এক নতুন পথ দেখাল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর বিদ্যাসাগর বাণী ভবন উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলের ছাত্রের হাতে গড়া সরস্বতী মূর্তি পুজো করলেন স্কুলেরই মাধ্যমিকের ছাত্রী শর্মিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়। পুরোহিতের ভুমিকায় এক ছাত্রীর এগিয়ে আসার এমন ভাবনা নিয়ে প্রশংসার সুর অনেকেরই গলাতেই।
ব্রাক্ষ্মণ পরিবারে বেড়ে ওঠা শর্মিষ্ঠা পুজোর বিষয়ে তালিম নিয়েছেন বাবার কাছ থেকে। সরস্বতী পুজোয় কিভাবে মন্ত্রপাঠ করা হবে, কিভাবে সাজানো হবে পুজোর উপাচার, তা নিয়ে প্রায় ৩ মাস ধরে অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছেন দশম শ্রেনির ছাত্রী। তার কথায়, এটা খুবই ইতিবাচক ভাবনা। আমাদের সমাজে অনেক কুসংস্কার আছে। সেগুলো ভেঙে যাতে এগিয়ে যেতে পারি, সেটা ভেবেই প্রধান শিক্ষক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কোনও শাস্ত্রে লেখা নেই উপনয়ন না হলে, পুজো করা যাবে না। নারীরাও সবকিছু পারেন, এটাই প্রমাণিত হচ্ছে।
নিজের স্কুলের পুজোতে ঠাকুর গড়ে দিতে পেরে যথেষ্ঠ উচ্ছ্বসিত উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র শুভদীপ শীল। ওই পড়ুয়ার কথায়, দেখে দেখেই মূর্তি বানানো শিখেছি। অনেকদিন ধরেই ইচ্ছা ছিল। প্রধান শিক্ষকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। প্রায় ২ মাস লেগেছে প্রতিমা তৈরি করতে। আর যার সিদ্ধান্তে গোটা বিষয়টি বাস্তবায়িত হল, সেই প্রধান শিক্ষক মনোজ ঘোষও উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, সমাজে নারী-পুরুষ সমানাধিকারের কথা বলা হলেও বাস্তবে তেমনটা হয় না। আমাদের স্কুলের এই সিদ্ধান্ত সমাজকে বার্তা দেবে। সেই কারণেই আমাদের ছাত্রীকে দিয়ে পুজো করার সিদ্ধান্ত।
আরও পড়ুন: Weather Forecast: সরস্বতী পুজোয় পরিষ্কার থাকবে দক্ষিণবঙ্গের আকাশ, জানাল হাওয়া অফিস
আধুনিক ভাবনার শরিক হতে পেরে শিক্ষক মনোজ ঘোষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শর্মিষ্ঠার বাবা শেখর চট্টোপাধ্যায়। তিনি নিজেও পুজো অর্চনা করেন। শেখরবাবু জানান, হিন্দু ধর্মে কোথাও লেখা নেই মেয়েরা পুজো করতে পারবে না। মেয়েকে দিয়ে স্কুলে সরস্বতী পুজো করানোর সিদ্ধান্তকে তিনি সাদরে গ্রহণ করেছেন বলে জানালেন। সরস্বতী পুজোয় পুরোহিতের আসনে স্কুলের ছাত্রীকে বসানোর এমন সাহসী ভাবনার জন্য প্রধান শিক্ষক মনোজ ঘোষকে কুর্নিশ জানিয়েছেন বহু মানুষ।