কলকাতা: বাম ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন আমলা অর্ধেন্দু সেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংহতি মিছিলকে প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে ব্যাখ্যা করলেন। সিপিএমের রাজ্য কমিটির দৈনিক মুখপত্রে প্রাক্তন আইএএস অফিসার অর্ধেন্দু সেন রামমন্দির উদ্বোধন প্রসঙ্গে এক নিবন্ধে সোমবার লিখেছেন, অযোধ্যায় ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো যাচ্ছেনই না। তিনি অনুষ্ঠানের বিরোধিতায় একটা মিছিল করবেন সাম্প্রদায়িক ঐক্যের স্বার্থে। প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
কয়েকদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে বসে রামমন্দির সম্পর্কে বলেছিলেন, আমি এর প্রতিবাদ করছি না। পাল্টাও কিছু করছি না। তবে ২২ জানুয়ারি কলকাতায় সংহতি মিছিল করব। কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিয়ে হাজরা হয়ে পার্কসার্কাস পর্যন্ত মিছিল হবে। সিপিএম তথা বামেরা এবং কংগ্রেস যেমন আগেই জানিয়ে দেয়, তারা অযোধ্যায় যাবে না। কিন্তু তৃণমূল সরকারি ভাবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে না যাওয়ার কথা জানায়নি।
সিপিএম মমতার এই সংহতি মিছিলের প্রতিবাদ করেছিল। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম গত কয়েকদিন ধরেই বলে আসছেন, ধর্মীয় উন্মাদনা বাড়ানোর জন্যই এই মিছিলের ডাক দিয়েছে তৃণমূল। রবিবার কলকাতার মানিকতলায় দলের এক রক্তদান শিবিরে সেলিম বলেন, একদিকে মন্দির নিয়ে উন্মাদনা, জাঁকজমক, আলোর রোশনাই। অন্যদিকে ধর্মীয় ভাবাবেগ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটে পুজো দিয়ে মিছিল করা। এই চেহারাটাই কিন্তু দেশ এবং রাজ্যের প্রকৃত ছবি নয়। সেলিমের ওই বক্তব্য এদিন দৈনিক মুখপত্রের প্রথম পাতাতেই গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছে। বাম জমানার প্রাক্তন মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেনের নিবন্ধও সিপিএমের মুখপত্রে এদিনই প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি মাঝে মাঝেই ওই মুখপত্রে উত্তর সম্পাদকীয় নিবন্ধ লেখেন।
এদিকে সিপিএমের মুখপত্রের প্রথম পাতায় এদিন আরও একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেই খবরের শিরোনাম হল, রামের মূর্তি থেকে বজরংবলির মন্দিরের উদ্বোধন, রাজ্যে মিলেমিশে তৃণমূল-বিজেপি। ওই খবরে বলা হয়েছে, উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ, সঙ্ঘের রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার উদযাপন মিশে যাচ্ছে তৃণমূলের কর্মসূচির সঙ্গে। সেই খবরের নির্যাস হল, উত্তর ২৪ পরগনার কাঁকিনাড়ার জহর উদ্যানে আট লক্ষ প্রদীপ দিয়ে সাজানো হয়েছে রামের মূর্তি। সোমবারই সেটি জ্বালানো হয় রামমন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে। তার প্রধান উদ্যোক্তা ভাটপাড়ার তৃণমূল নেতা প্রিয়াঙ্গু পাণ্ডে।
সিপিএমের মুখপত্রে একদিকে বাম ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন মুখ্যসচিবের মমতার সংহতি মিছিলের প্রশংসা, অন্যদিকে দলের রাজ্য সম্পাদকের সেই মিছিলের নিন্দার খবর নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলাবলি করছে, সিপিএমের রাজ্য দৈনিক মুখপত্রের কোনটা মুখ, আর কোনটা মুখোশ, তা বোঝা মুশকিল।