কলকাতা: রাজ্যপালের (Governor) ভাষণ নিয়ে সোমবার ফের একবার রাজ্য বিধানসভা (WB State Assembly) উত্তপ্ত হয়ে উঠল। এদিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলতে উঠে প্রথমেই বলেন, রাজ্যপালের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নই। রাজ্যপালের বক্তব্যে সত্যতা থাকা উচিত। পরিসংখ্যান নির্ভুল থাকা উচিত।কিন্তু এই বক্তব্যে অসত্য ভরে আছে। ভাষণে বলেছেন, রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলার কথা। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসন চলে না, শাসকের আইন চলে। শুভেন্দু আরও বলেন, রাজ্য সরকার তাদের প্রকল্পের কথা প্রচার করতেই পারে। কিন্তু, অভিযোগ তোলেন বিভিন্ন খাতের টাকা অন্য খাতে খরচ হচ্ছে। সন্দেশখালির মিটিংয়ে ও বগটুইতেও একই রকম কাজ হয়েছে। শুভেন্দুর এই বক্তব্যের সময় বিধানসভায় প্রবল হইহট্টগোল শুরু হয়ে যায়।
স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় (Speaker Biman Banerjee) বিরোধী নেতাকে বারবার সতর্ক করে দেন। তখন হায় হায় করে স্লোগান দিতে থাকেন বিজেপি বিধায়করা। ওয়েলে নেমে স্লোগান দেন বিরোধী দলনেতা সহ বিজেপি বিধায়করা (BJP MLAs)। তারপর তাঁরা সভাকক্ষ ত্যাগ করেন। এরপর বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনেন স্পিকার।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) জবাবি ভাষণ বলেন, এমন কোনও ভাষা নেই, যেখানে মা বলে না। বিরোধী দলনেতা একটা লজ্জাজনক ব্যক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওদের হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি। পরে বিধানসভার তরফে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী দলনেতার হয়ে ক্ষমা চাওয়ায় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে সাসপেনশন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন স্পিকার। মমতা বলেন, গান্ধীজির হত্যাকারীরা বলতে পারে না। ওরা ভাষা জানে না। ওরা জোতদার, জমিদারদের কায়দায় মানুষ হয়েছে। আমি কারও নাম করতে চাই না, বাবাকে মন্ত্রী করা হবে বলে বাবার শপথে যায়নি। মমতার প্রশ্ন, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় কোথায় ছিল? আমাকে অনেক বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। ১৪ মার্চের গুলি চলার দিন ওরা ছিল না। বাবা ও ছেলে কেউ ছিল না। আমি সব পরিবারকে শ্রদ্ধা করি। দেশের সব পরিবারকে শ্রদ্ধা করি। একটা পরিবারকে ধ্বংস করে দেব, এটা একটা রাজনৈতিক ব্যক্তির কথা হতে পারে।
মমতা তাঁর বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সরকারকেও তুলোধনা করেন। বলেন, পিএম কেয়ারের টাকা কোথায় গেল, ব্যাঙ্কের টাকা কোথায় গেল? কোচবিহারের ওই ছেলেটিকে কীভাবে গুলি করেছে। আমাদের ছেলেরা না গেলে জানতেই পারত না। বাংলায় একমাত্র আইনশৃঙ্খলা ঠিক আছে। শেষ ১১ বছরে কোনও ভায়োলেন্স হয়নি, কেএলও-র কোনও অ্যাকটিভিটি নেই। এত প্ররোচনা সত্ত্বেও সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় মমতা বলেন, বাবুমশাই আমরা যদি এতই খারাপ হই, তাহলে দুয়ারে সরকারে পুরস্কার পেলাম কী করে, ইউনেস্কোর পুরস্কার কীভাবে এল।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কুৎসা, অপপ্রচারের পরও কাজ হচ্ছে। কৃষকদের বিমার টাকা আমরা দিচ্ছি। ন্যায্যমূল্যে কৃষকদের থেকে ধান আমরা নিজেরা কিনি। আমরা চাল দিই, চিকিৎসার ব্যবস্হা করছি বলে বেঁচে আছে। আর ওরা চাইছে আধার লিঙ্ক, মোদিবাবুর ছবি চাই। কর্মসংস্হান বাড়াতে ডিম, দুধ উৎপাদন করা হচ্ছে। মাতৃমা সারা দেশে মডেল হয়ে গিয়েছে। উন্নয়নের আরও ফিরিস্তি দিয়ে বলেন, সামাজিক সুরক্ষা ফ্রিতে, রেশন ফ্রিতে, চিকিৎসা, শিক্ষা, উচ্চশিক্ষার জন্য লোনের ব্যবস্হা করেছি। কেন্দ্রীয় সরকার স্কলারশিপ কেটে দিয়েছে। নবম শ্রেণিতে উঠলেই সাইকেল। বারো ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের স্মার্ট ফোন।
বিধানসভায় বিরোধীদের উদ্দেশে মমতার দাবি, যতই চেষ্টা করো, চাকরি আমরা দেবই। দেউচাপাচামিতে লক্ষ লক্ষ চাকরি হবে। বিজেপি তুমি কোথায় থাকবে? কয়লা কয়লা করে চিৎকার করছ? কয়লা, ইসিএল কার অধীনে? রানিগঞ্জে বাড়ি ধসে যাচ্ছে, টাকা দিচ্ছে না। অমর্ত্য সেনের মতো লোককে অপমান করছে, আমাদের কাছে চাইলে আমরা নতমস্তকে দিয়ে আসতাম। মমতার অভিযোগ, জগাই-মাধাই এক হয়ে কাজ করছে। ওরা চাকরি খাচ্ছে, চাকরি দিতে পারছে না আবার চাকরি খাচ্ছে। চলবে না অন্যায়। প্রাণে না মেরে ফেললে দেখে নেব, কোনও অন্যায় করতে দেব না।
তিনি বলেন, দিল্লিতে লোডশেডিং হলেও বাংলায় ১ মিনিটের জন্য লোডশেডিং হয় না। এমএসএমই সেক্টরে আমরা দেশে ১ নং। ১ কোটি ৬৫ লক্ষ লোক কাজ করে। বানতলা লেদার কমপ্লেক্সে ৩ লক্ষ চাকরি হয়েছে আরও ৩ লক্ষ চাকরি হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নামের মধ্যে বৈচিত্রের বাহার। আমরা নতুনত্বের জন্ম দিই। সমস্ত বিধায়করা গিয়ে দেখে আসুন আলিপুরে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ইতিহাস। বাংলা না থাকলে স্বাধীনতা আসত? বাংলার ঐতিহ্য অনেক ছাত্রছাত্রী জানে না। তাদের জানাতে হবে, জানতে হবে।