প্রতিবাদীদের জেলে পোরা, যে কোনও অছিলায় তাদের আটকে রেখে দেওয়া কি আজকের ব্যাপার? একমাত্র এই ভারতবর্ষেই কি তা হয়েছে? আসলে প্রতিবাদীদের মুখ বন্ধ করাটা স্বৈরাচারীদের প্রথম কাজ। তার কারণ যে কোনও স্বৈরাচারী আসলে ভীষণ ভিতু, তারা ভয় পায়, সর্বক্ষণ মনে করে তাদের গদি কেউ কেড়ে নিল? তাদের ক্ষমতাকে কেউ চ্যালেঞ্জ করছে। যে প্রশ্ন করছে সে আসলে তার বিরোধী তাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিতে চায়। সেই ভয় থেকেই তারা যে কোনও প্রতিবাদকে স্তব্ধ করার জন্যেই প্রতিবাদীদের জেলে পাঠায়। কে একজন অমন প্রতাপশালী কংস রাজাকে গিয়ে বললো যে দেবকী, যে নাকি তাঁরই বোন, তার অষ্টম গর্ভের সন্তান আপনাকে হত্যা করবে। ব্যস, দেবকী, তার স্বামী বসুদেবকে পোরা হল জেলে।
অষ্টম গর্ভ কেন, পুরাণ কাহিনি বলছে, প্রথম থেকে অষ্টম সব সন্তানকেই ওই কারাগারেই মারার চক্রান্ত করেছিলেন কংসরাজা। কিন্তু ওই যে গান আছে না, কৃষ্ণকে কি কংস কারায় বেঁধে রাখা যায়? দেখো মাঠে মাঠে লক্ষ কৃষ্ণ অগ্নি বাঁশের বাঁশি বাজায়। সে পুরাণের পরে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল থেকে কোপার্নিকাসকে পোরা হয়েছে জেলে, জোয়ান অফ আর্ককে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। আমাদের মধ্যযুগের ইতিহাসে সামন্ত রাজা, সম্রাট নবাব তাদের কারাগারের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। দারাশুকো বলেছিলেন, ভাই, আমি তো সম্রাটের আসনে বসতেও চাই না, আমি তো আমার পুঁথি নিয়েই শেষ দিনগুলো কাটাতে চাই, কিন্তু আওরঙ্গজেব কি তা শুনেছিল? চোল রাজাদের আমলে বড়সড় যজ্ঞের আগের দিনে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিদ্রোহীদের রাজপথের ধারে মেরে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হত। অশোক তাঁর প্রত্যেক ভাইকে খুন করেছিলেন, ক্ষমতার সামনে যেন একটাও নুড়ি না পড়ে থাকে। এটা স্বৈরাচারের দর্শন।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব-১১)
ব্রিটিশ রাজত্বে আমরা তো দেখেছি একটা লেখার জন্য দু’ বছর জেল খাটতে, আমরা তো দেখেছি বিপ্লবীদের ফাঁসিতে চড়তে আবার আমরা এও দেখেছি সেই ব্রিটিশ জমানায় মাথা ঝোঁকালেই, মুচলেকা দিলেই বিশ্বাসঘাতকদের জেল থেকে ছাড়া পেতে। আজ সেই স্বৈরাচার আমাদের দেশে মাথাচাড়া দিয়েছে। সাংবাদিক থেকে বিরোধী রাজনীতির মানুষজন, সমাজকর্মী থেকে ছাত্র জেলে, কারণ তাঁরা প্রতিবাদী। যুগে যুগে স্বৈরাচার চায় জো-হুজুর তৈরি করতে, চারপাশে মোসায়েব নিয়েই ঘুরে বেড়াতে, মোদিজি তার ব্যতিক্রম নয়। নয় বলেই বিরোধীরা হয় জেলে না হলে মাথা নিচু করে মোদিজির জয়গান করছেন, সেটাও না সম্ভব হলে চুপ করে বসে আছেন। আমরা প্রতিবাদ করছি, হ্যাঁ, কলকাতা টিভি প্রতিটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে, সংবিধানকে অমান্য করে যে স্বৈরাচারী রাজত্ব তৈরি হচ্ছে তার কথা মানুষকে বলে যাচ্ছে, আর সেই কারণেই আমরা আক্রান্ত, আমাদের সম্পাদক জেলে আজ ২২৭ দিন হয়ে গেল। কিন্তু ওই যে কৃষ্ণকে কি কংস কারায় বেঁধে রাখা যায়, এই জেলে থাকা প্রত্যেক মানুষ একদিন বের হবে, একদিন সত্যের জয় হবে, একদিন স্বৈরাচারীদের পতন হবেই।
দেখুন ভিডিও: