‘যেও না, রজনি, আজি লয়ে তারাদলে! গেলে তুমি, দয়াময়ি, এ পরাণ যাবে!‘ মধুকবির বিখ্যাত সেই পংক্তি আজ রাজ্যের মেঘে মেঘে ভেসে বেড়াচ্ছে। কখনও কালো মুখ করে। কখনও হংসপাখার মতো। আজ নবমী। দুর্গাপুজোর শেষদিন। তাই ভোর থেকে বিরামহীন বাঙালি চেটেপুটে তুলে নিল পুজোর মজা। ভোরের দিকে খানিকটা মেঘ মেঘ ছিল। কিন্তু গুমোট গরমে হাঁসফাঁস অবস্থায় মণ্ডপে ভিড়ের কমতি ছিল না। তালিকায় যে কটা ঠাকুর দেখা বাকি রয়েছে, আজই বিকেলের মধ্যে শেষ করে ফেলতে হবে। এই চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে পাখা লাগিয়ে যেন উড়ে বেড়াল বঙ্গ তনয়-তনয়ারা।
আরও পড়ুন: Puja Adda Tollystars: জমাটি পুজোর আড্ডায় টলিস্টাররা
আজই নবরাত্রিরও শেষ। শুক্লপক্ষের প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত ন‘টি রাত্রি পর্যন্ত দুর্গার নয়টি রূপের পুজো চলে আসছে। প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত নয়রাত্রি ধরে দুর্গার নয়টি শক্তির যে পুজো হয়, তাকেই বলা হয়ে থাকে নবরাত্রি। দশমীতে শেষ হয় এই পুজো। পুরাণ অনুযায়ী, ত্রেতাযুগে রামচন্দ্র শারদীয়া দুর্গাপুজোর প্রচলন শুরু করেন। রাবণবধ ও সীতা উদ্ধারের জন্য রামচন্দ্র দুর্গতিনাশিনী দুর্গার অকালবোধন করে নবরাত্রিব্রত পালন করেছিলেন। ব্রহ্মা দুর্গার এই নয়টি রূপের নামকরণ করেছিলেন। এই নয়টি রূপের নাম হল- শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘন্টা, কুষ্মান্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী ও সিদ্ধিদাত্রী ।
অবাঙালিদের কাছে নবরাত্রি অত্যন্ত মহত্বপূর্ণ এক ব্রত। উপবাস, সংযম, পুজোআচ্চার পর এদিন রাত থেকে তাঁরা পুজো দেখতে বেরন। তাই নবমী রাতে প্রতিবারেই সব থেকে বেশি ভিড় হয়। সে কারণেই বিকেলের মধ্যেই বহু মানুষ অদেখা মণ্ডপগুলিতে ঢুঁ মেরে নিলেন। আর অকাতরে সেই ছবি পোস্ট করলেন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে। নবমীতেই বাঙালি একটু চড়া ধাঁচের সাজে। তাই এদিনও তার ব্যতিক্রম দেখা গেল না।
জরিবোনা শরতের রোদেও অক্লান্ত বাঙালি ট্রেনে ঝুলতে ঝুলতে শহরে এল। জেলার বড় শহরগুলির বিগ বাজেটের পুজোগুলিও এখন চোখ ধাঁধানো থিমে মোড়া। যাঁরা মহানগরীর ভিড়ে আসতে অপারগ, তাঁরা টোটোয় চেপে ঘুরুঘুরু করে নিলেন মহানন্দে। সন্ধ্যায় সূর্যদেব মুখ ফেরাতেই কল্লোলিনী তিলোত্তমা যেন জনসুনামিতে ভেসে গেল। মাঝে বৃষ্টি যে আনন্দে থাবা বসিয়েছিল, তাকে তুড়ি মেরে জনসমুদ্রে থইথই করে নেচে উঠল কলকাতা। এবারের মতো শেষ, অপেক্ষার শুরু ফের একটা বছরের। বুক ভরে সেই অক্সিজেন টেনেই দিনের শেষে ঘরে ফেরা।