আজ চাঁদের প্রতিপদ। ক্ষীণ-কটির মত শুভ্র এক চন্দ্রমা শোভা দেবে আজ সন্ধেয় চৈত্রের আকাশে। বসন্ত ঋতু অবসানের দিকে যাবে। আর ধীরে ধীরে সেই চাঁদ ক্রমশ প্রকাশিত হতে থাকবে। চাঁদের এই বিস্তার দেখেই পূবের মানুষেরা একদিন দিনক্ষণ, তিথির সূচনা করেছিলেন। চৈত্রের এই ক্ষীণ চাঁদের তিথিটি তাই স্মরণযোগ্য। আজ গুঢি পাডওয়া (Gudi Padwa)। আজ উগাডি (Ugadi)। আজই ঝুলেলালকে স্মরণ করবেন সিন্ধি হিন্দুরা। যে ঝুলেলাল মৎস্যের উপরে পদ্মাসনে অধিষ্ঠান করছেন। সুফি মুসলিমদেরও পিরবাবা তিনি। জিন্দাপির। খাজা খিজির তিনি। আজ সিন্ধিদের চেটি চাঁদ। চেটি অর্থাৎ চৈত্র। চৈত্রের চাঁদের এই যে অবস্থান, যে প্রতিপদ। তাই আবার রমজান মাসের সূচনা করবে। ফজরের নমাজ থেকে মাগরিব পর্যন্ত আত্ম-অনুশাসনের অধ্যয়ন শুরু হবে।
‘হো লাল মেরি পত রখিয়ো বলা ঝুলে লালন।’ এই লালই হচ্ছেন ঝুলেলাল। খাজা খিজির। ‘ও লাল মেরি পত রাখিয়ো বলা ঝুলে লালন।’ হে লাল আমাকে সর্বক্ষণ আগলে রেখো। ‘দমা দম মস্ত কলন্দর’, হে নাথ, আমার সমস্ত শ্বাস সবই তোমায় উৎসর্গীকৃত… এ আধ্যাত্মিক সংগীত তো আমির খসরুর প্রার্থনা বাহিত। সিন্ধু নদের তীরে এক জিন্দা পিরের জীবন দর্শন। ‘আলি দা পহেলা নম্বর’। শূন্যের পরেই এক। আর এক হচ্ছেন আলি। আমির খসরুর চাঁদ একদিন বুল্লে শাহ্-এর উঠোনে আলো রেখেছিল। পরে এই সংগীতের স্বরে যোগ হয় শাহবাজ কালান্দারের শ্বাস। সুফি ও মরমিয়াবাদের শুদ্ধ-সাধনা। যুগ যুগান্তর ধরে মানুষে মানুষে, সম্প্রদায়ে-ধর্মে-বর্ণে মিলনের রামধুন।
রঘুপতি রাঘব রাজারাম পতিত পাবন সীতারাম। রামধুন। এক আধ্যাত্মিক ভজন। আমাদের দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মহাত্মা গান্ধীর হাত ধরে। পতিত পাবন। অর্থাৎ পাপীকে পরিত্রাণ দেন যিনি তিনিই সীতারাম। তাই রাম একা না। নামের সঙ্গে জুড়ে রয়েছেন সীতা। স্খলিত যিনি, দুর্দশায় যাঁর জীবন প্রাণহীন, তাঁকে ত্রাণ দেবেন, রক্ষা করবেন সীতারাম। লাল যেমন প্রার্থনায় সর্বক্ষণ আগলে রাখেন আর্তকে। সুন্দর বিগ্রহ মেঘশ্যাম গঙ্গা তুলসি শালগ্রাম। মহাশূন্য থেকেও দেখা যায় যে অবিরাম গঙ্গা। তার মাথার উপর ঝুঁকে রয়েছে মেঘ। শ্যামবর্ণ মেঘ। শ্যাম আবার কৃষ্ণের নামও। ‘ঈশ্বর আল্লাহ্ তেরো নাম, সবকো সম্মতি দে ভগবান’। নাম অনেক ধ্রুব এক। শূন্যের পরেই এক। আর এক হচ্ছেন আলি। মহাত্মা গান্ধীর বুকে পর পর তিন বার গুলি করেন নাথুরাম গডসে। মৃত্যুর আগে গান্ধীর শেষ স্বর ছিল, ‘হে রাম’।
চৈত্রের সন্ধের প্রতিপদে যে এক ফালি ক্ষীণ চাঁদ। তার চরকায় কাটা যে সুতো, তার গায়ে যেন লেগে যায় রক্তছোপ। রামের শরীর থেকে সীতাকে ছিন্ন করে ধর্ম বাঘনখ বার করে ফেলে। মিথ্যে হয়ে যায় ভজন। মিথ্যে হয়ে যায় বুল্লে শাহ্-এর দর্শন। হৃদয় নিঙড়িয়ে ভালবাসা দিয়ে যদি তুমি প্রত্যাশা করো, তা হলে জেনে রেখো তা ভালবাসা নয়। ‘দিল দে কে দিল লেন দি অস রাখি, ভে বুল্লেয়া প্যায়ার এহো যেয়া কিতা…
আল্লাহ্ ভব সম্ দূরে তরাইয়া লও মোরে/ পড়িয়া দরিয়ার পাকে ডাকি হে তোমারে… প্রথম পক্ষের চাঁদ-জ্যোৎস্না এসে পড়ে। চৈত্রের অবসান শেষে এসে পড়ে তীব্র দহনের বৈশাখ।