অক্টোবরে নোটবন্দি সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলায় সুপ্রিম কোর্টকে কেন্দ্র জানিয়েছিল, ওই বিষয়টি নাকি বাস্তব জীবনে আপাতত আর প্রাসঙ্গিক নয়। কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল ওই জনস্বার্থ মামলায় নিজের বক্তব্যে একথাও জানিয়েছেন, নোটবন্দি এখন নিছক একটি পাঠ্য বিষয়ে হয়ে গিয়েছে। দেশের আমজনতার বাস্তব অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য কথা বলছে। হয়তো একারণেই মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর নোটবন্দির সিদ্ধান্ত ঘোষণার ছয় বছরে বিরোধী দলগুলি ফের প্রশ্ন তুলল দেশ কি পেল ওই অত্যন্ত বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ফলে?
ইতিমধ্যে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ্যে আসায় যথেষ্ট চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে দেশের আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। যে তথ্য অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানাচ্ছে, নোটবন্দির দিন কয়েক আগেও দেশের মানুষের কাছে যে পরিমাণ নগদ টাকা ছিল, নোটবন্দির পর গত ছয় বছরে তা কমেনি। উপরন্তু সত্তর শতাংশের বেশি বেড়েছে। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর তাঁর সেই বিতর্কিত নোটবন্দি সংক্রান্ত ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আর জাল নোটের কারবারকে আটকানোর লক্ষ্যে নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার তথ্য জানাচ্ছে, ওই নোটবন্দির সময় নতুন করে চালু হওয়া দুহাজার টাকার জাল নোটের ব্যবহার ৫৫ শকাংশ বেড়েছে। আর পাঁচশো চাকার জাল নোটের ব্যবহার বেড়েছে একশো শতাংশের বেশি।
নোটবন্দির সময় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দাবি ছিল, তিন থেকে চার লক্ষ কোটি কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ করা যাবে। কিন্তু আরবিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী বাতিল হওয়া নোটের ৯৯ শতাংশ দেশের মূল ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মধ্যে ফিরে এসেছে। আবার নোটবন্দির পক্ষে আরও একটা যুক্তি ছিল দেশে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া বেআইনি নগদের ব্যবহার নাকি বন্ধ করা যাবে ওই পদক্ষেপে। কিন্ত ২০২১ এবং ২০২২ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা কমিটির কাছে দেশের তরফে জানানো হয়েছিল, জম্মু-কাশ্মীর এবং ওই রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় জঙ্গি কার্যকলাপ বিপজ্জনক আকারে বেড়েছে। বেকারত্ব কমবে, ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর রাত্রি আটটায় তাঁর বহুচর্চিত ভাষণে দাবি করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্যই জানাচ্ছে, দেশে বেকারত্বের হাল আরও খারাপ হয়েছে।
ছয় বছর আগের সেই ঘটনাকে মনে করে কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিরোধীরা। মঙ্গলবার রাহুল গান্ধী তাঁর টুইটে জানিয়েছেন, “কালো টাকা ফেরেনি। তবে দারিদ্র ফিরেছে। অর্থনীতি নগদহীন হয়নি। কিন্তু দুর্বল হয়েছে।” তৃণমূল মুখপাত্র আর রাজ্যসভার সদস্য ডেরেক ও ব্রায়েন তাঁর টুইটে লিখেছেন, “ছয় বছর আগে আজকের দিনে তৈরি করা একটা গিমিক দেশে অর্থনৈতিক হত্যাকাণ্ডে পরিণত হয়েছিল।” একইসঙ্গে ডেরেক-এর দাবি, ২০১৬ সালে ওই ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যে প্রথম বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এক সপ্তাহ পরে অন্যরা বুঝেছিলেন। আর এই যাবতীয় আক্রমণের কোনওরকমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের মতে সে যুক্তি বড় একটা ধোপে টিকছে না।