লখনউ: রাত পোহালেই আরও একটি বাংলা নববর্ষ (Bengali New Year)। পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) এবং বাংলাদেশে (Bangladesh) এই দিনটি পালিত হয় আনন্দ উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আঙ্গিকে। হিন্দি বলয়ের মানুষ বাংলা নববর্ষের আঁচ পান, যদি তাঁরা এই শহরে বা রাজ্যে থাকেন। কিন্তু এবার অন্যরকম। বাংলার নববর্ষের ছোঁয়া লখনউতেও (Lucknow)।
কলকাতার (Kolkata) মতো গা জ্বালানো রোদ নেই তবে আর্দ্রতা বেশি থাকায় অসহ্য আবহাওয়া। বেলা ১১টার পরে রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। তখন বিকেল। বাল্মীকি রঙ্গশালা, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি অডিটোরিয়ামের সামনে যেন এক টুকরো বাংলা। কারণ, এই প্রথম লখনউয়ের বুকে ধ্রুপদী লয়ে উদযাপিত হল বাংলার নববর্ষ ‘উত্তরী ধ্রুব’। ক্লাসিক্যাল নাচ ও গানে যেন বৈশাখ এল যোগীরাজ্যে। সন্তোষপুর আগন্তুকের আয়োজনে বাংলার সংস্কৃতির আবেশ পেলেন লখনউয়ের সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ। শুধু বাংলার সংস্কৃতি নয়, মিলেমিশে একাকার হল লখনউ ঘরানা, জয়পুর ঘরানাও। কলকাতার কথক শিল্পী তথা পিয়ার এডুকেটর ও নৃত্য থেরাপিস্ট টুসি নস্করের (Tusi Naskar) মাথায় আসে এই সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের ভাবনা, লখনউয়ে বাংলার নববর্ষ পালন।
আরও পড়ুন: Poyla Baishakh | পয়লা বৈশাখের সঙ্গে হালখাতার সম্পর্ক কী? জানুন ইতিহাস
এই অভিনব ভাবনার রূপায়ণ ঘটাল সন্তোষপুর আগন্তুক (Santoshpur Agantuk)। সঙ্গী লখনউ শহরের শিল্পী মহল। মুছে গেল সংস্কৃতির সীমারেখা। কলকাতা যে ধ্রুপদী চর্চার পীঠস্থান তা আরও একবার প্রমাণ হল যোগীরাজ্যে। প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী এমিলি ঘোষ এখন কাজের সূত্রে থাকেন নবাবদের শহরে। তিনি সুচারুভাবে আয়োজনে ছিলেন। এদিন সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমির মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেন কলকাতার শিল্পী দীপান্বিতা গঙ্গোপাধ্যায়, সরোদ পরিবেশন করেন সিরাজ আলি খান। কথক পরিবেশন করেন রাজীব রঞ্জন প্রমুখ। তবে যাঁর ভাবনা থেকে ভিনরাজ্যে বাংলার নববর্ষ পালন, সেই টুসি নস্করের একক নৃত্যে উঠে এসেছে ভারতীয় সংস্কৃতির চিরাচরিত ঐতিহ্য ও ভক্তিরস।
মঞ্চে বোল পরন্ত-এ ছিলেন লখনউ ঘরানার ন্যাশনাল স্কলার কলকাতার প্রখ্যাত কথক শিল্পী সায়নী চাওড়া। বিশেষ অতিথি উত্তরপ্রদেশের চিফ মেডিক্যাল অফিসার অমরেন্দ্র কুমার বলেন, এই অভিনব উদ্যোগ নিশ্চিতভাবেই আমাদের একসূত্রে বাঁধবে। এই ধরনের ভাবনাকে সাধুবাদ। খুব ভালো কাজ হল। পণ্ডিত রামমোহন মহারাজ বলেন, এখানে বাংলার নববর্ষ পালনের এই উদ্যোগ পথ প্রদর্শক হিসাবে থেকে যাবে। নবীন কথক শিল্পী টুসি নস্করের এই উদ্যোগকে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাতে বিভেদ কমবে। আয়োজক সন্তোষপুর আগন্তুকের সম্পাদক অরিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, মেলবন্ধনের পাশাপাশি আমাদের সংস্কৃতির পরম্পরা ধরে রাখতে আরও যত্নশীল হতে হবে আমাদের। বাংলার নববর্ষ ধ্রুব হোক।