ইম্ফল: মণিপুরে (Manipur) দুই মেইতি (Meitei) পড়ুয়া খুনের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের (CM N Biren Singh) বাড়িতে হামলার চেষ্টা। ৫০০-৬০০ জনের একটি বিশাল দল মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব বাড়িতে হামলার চেষ্টা করে। ইম্ফলের (Imphal) হেইনগং এলাকায় ওই বাড়িতে আগে থেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। সে কারণে উন্মত্ত জনতা আক্রমণ করলেও বাড়িতে ঢুকতে পারেনি। যদিও হামলার সময় বাড়িতে কেউই ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী বেশ কিছুকাল ধরেই রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি সরকারি বাংলোয় আলাদা বসবাস করছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, দুটি দলে ভাগ হয়ে আন্দোলনকারীরা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দিকে এগিয়ে আসে। কিন্তু, বেশ কিছুটা দূরেই তাদের আটকে দেওয়া হয়েছে। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে বেশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। রাজ্য বিজেপি সভাপতি অধিকারীমায়ুম শারদা দেবী এবং ইম্ফল পূর্বের বিজেপি বিধায়ক সোরাইসাম কেবির বাড়িতেও হামলার চেষ্টা চালানো হয়।
আরও পড়ুন: রাজ্যপাল দুর্গা সম্মান দেওয়ার কে, প্রশ্ন ফিরহাদের
অন্যদিকে, হিংসা কবলিত মণিপুরে ফের বিতর্কিত আফস্পা (AFSPA) বা সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা জারির কড়া ভাষায় নিন্দা করেছেন মানবাধিকার কর্মী ইরম শর্মিলা (Iram Sharmila)। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, রাজ্যকে শান্ত করতে এই দমনমূলক আইন কোনও সমাধান নয়। মণিপুরের ‘লৌহমানবী’ শর্মিলা আরও বলেন, বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রস্তাব এনে দেশের বৈচিত্রকে সম্মান দিচ্ছে না। সকলের জন্য এক আইনের তুলনায় এ দেশের বৈচিত্রকে রক্ষা করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত বুধবার মণিপুরে আরও ৬ মাসের জন্য আফস্পা লাগু করা হয়েছে। ইম্ফল উপত্যকা ছাড়া পার্বত্য মণিপুরে চালু করা হয়েছে আফস্পা। এই আইনে কোনও ওয়ারেন্ট ছাড়া অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক, গ্রেফতার, তল্লাশির অধিকার দেওয়া রয়েছে বাহিনীকে। জঙ্গি উপদ্রুত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে আফস্পা কার্যকর ছিল। তার প্রতিবাদে দীর্ঘ অনশন আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন শর্মিলা। এদিন তারই নিন্দা করে বলেন, আফস্পার মেয়াদ বাড়ালেই সমস্যা মিটবে না। এই অঞ্চলের সমস্যা বুঝতে হবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে।
এখানে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন মূল্যবোধ, ধর্মাচরণ, সংস্কৃতি এবং রীতিনীতি আছে। সেসবকে সম্মান করা উচিত। শর্মিলার কাছে জানতে চাওয়া হয়, মণিপুরে এত কিছু ঘটলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন এখনও এলেন না? তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি ব্যস্ত মানুষ। দেশের নেতা। তবুও তিনি যদি রাজ্যে একবার আসতেন। মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন। তখনই সব সমস্যা গলে জল হয়ে যেত। এই সমস্যা মিটতে পারে সহানুভূতি, ভালোবাসা এবং মানবিক মুখে। কিন্তু, বিজেপি এই সমস্যা মেটাতে চায় না। যাতে এই হানাহানি চলতে থাকে, সেটাই চায়।
মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়েরও সমালোচনা করেন শর্মিলা। তাঁর অভিযোগ, রাজ্য সরকারের ভুল নীতিই রাজ্যকে বেনজির সমস্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই রক্তারক্তিতে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজ্যের যুবসমাজ। দুটি অল্পবয়সি ছেলেমেয়ের মৃত্যু শর্মিলার চোখে এনে দিয়েছে।
দেখুন আরও খবর