নদীয়া: শান্তিপুরের সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে বৃহস্পতিবার লোকসভা নির্বাচনে (Loksabha Vote) মতুয়াদের ভোট চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। মতুয়া অধ্যুষিত শান্তিপুরে (Santipur) মমতা ফের ঘোষণা করলেন, তিনি রাজ্যে সিএএ এবং এনআরসি কার্যকর করতে দেবেন না।
সাম্প্রতিক জেলা সফরে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে সিএএ এবং আনআরসির বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন। সব সভাতেই তিনি বলছেন, মতুয়াদের আবার নতুন করে নাগরিকত্ব দেওয়ার কী আছে। আপনারা ভোট দেন। আপনাদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সবই আছে। আবার নাগরিকত্ব কীসের। এবারকার জেলা সফরে মমতা বিএসএফের বিরুদ্ধেও সরব হচ্ছেন। সভাগুলিতে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, বিএসএফ সীমান্তে আলাদা করে কার্ড দিচ্ছে। স্থানীয়দের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ওই কার্ড আপনারা নেবেন না। তাহলেই বিজেপি আপনাদের এনআরসিতে ঢুকিয়ে দেবে।
আরও পড়ুন: প্রধানের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত সদস্যকে মারধরের অভিযোগ
শান্তিপুর বিধানসভা আসনটি রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। গত লোকসভা ভোটে রানাঘাট কেন্দ্রে জয়ী হন বিজেপির জগন্নাথ সরকার। তিনিও মতুয়া সম্প্রদায়ের লোক। শুধু রানাঘাটই নয়, নদিয়া জেলার একটা বড় অংশই মতুয়া অধ্যুষিত। বনগাঁ লোকসভা আসনটিও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি দখল করে। বনগাঁ-সহ উত্তর ২৪ পরগনার একটা অংশেও বহু মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্তের বাস। গত লোকসভা ভোটে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। তার আগে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটেও প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তবে তা বিশেষ গতি পায় গত লোকসভা ভোটে। তার জেরে উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া এমনকী উত্তরবঙ্গের মতুয়া প্রভাবিত এলাকাগুলিতে ভালো ফল করে বিজেপি। ২০১১ সাল থেকে তৃণমূলের বড় ভোটব্যাঙ্ক ছিল মতুয়া গোষ্ঠী। মতুয়াদের বড়মা বীণাপানি দেবীর সঙ্গে মমতার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই মমতার সঙ্গে রেশন দুর্নীতিতে জেলবন্দি প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিকের সূত্রে বড়মার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তাঁর অসুখবিসুখেও মমতা সাহায্য করতেন। জেলায় জেলায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বড়মার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া ভোট বিজেপির দিকে ঢলে পড়ে। বিজেপি ১৮টি আসন পেয়ে যায়। পরবর্তীকালে মতুয়াদের মধ্যে ঘরোয়া বিবাদ দেখা দেয়। ২০১৯ সালের ভোটে বিজেপি বনগাঁ কেন্দ্রে প্রার্থী করে বড়মার নাতি শান্তনু ঠাকুরকে। তিনি জিতে কেন্দ্রের প্রতিমন্ত্রী হন। তিনি মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই সিএএ কার্যকর হবে বলে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। দিন তিনেক আগে কাকদ্বীপের এক সভায় শান্তনু দাবি করেন, এক সপ্তাহের মধ্যে সিএএ চালু হবে। রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীও বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে সিএএ হবে।
এরপর থেকেই মমতা সিএএ নিয়ে উচ্চৈস্বরে কথা বলছেন। এদিন শান্তিপুরের সরকারি সভা থেকে জনতাকে বলেন, রানাঘাট কেন্দ্রে আপনারা আমাদের ভোট দিন। বিজেপি ভয় দেখাচ্ছে। আপনাদের নাগরিকত্বের পরীক্ষা দিতে হবে না।
আরও খবর দেখুন