Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ: জাতের নামে বজ্জাতি

চতুর্থ স্তম্ভ: জাতের নামে বজ্জাতি

Follow Us :

এই কয়েক বছর আগে উত্তর প্রদেশে গিয়েছিলাম, এক কপ্তান সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে। ইউপিতে এসপি, মানে সুপারিনটেন্ডেন্ট অফ পুলিশকে কপ্তানসাহেব নামেই ডাকা হয়। এক খবর সংক্রান্ত কাজে সেখানে গিয়ে দেখি, কপ্তান সাহেব ব্যস্ত। তাঁর অধীনস্ত ২৩ জন দারোগাকে নিয়ে বৈঠক করছেন। জানালেন একটু বসুন, লাঞ্চ খেয়ে যাবেন, লাঞ্চের পর তিনি আমার সঙ্গে কথা বলবেন। আমি এধার ওধার ঘুরে দেখছিলাম, প্যান্ডেল খাটানো হয়েছে, দু জায়গায় খাবারের আয়োজন, সম্ভবত একধারে আমিষ, অন্যধারে নিরামিষ খাবার হবে। খাসির মাংসের গন্ধ আসছিল, মিনিট ৪০ পরে বৈঠক শেষ, কপ্তান সাহেব বেরিয়ে এলেন, আরে কিতনা দিন বাদ মুলাকাৎ, দিদি ক্যায়সে হ্যাঁয়? মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেমন আছেন? কিছু কথার পর বললেন, বাকি কথা পরে হবে, চলুন, খিদে পেয়েছে। গেলাম। ওনার সঙ্গে বসলাম, আমার পাতে খাসির মাংস, ওনার পাতে মিক্সড ভেজ, পনির, উনি পানডে, ব্রাহ্মণ, নিরামিষ। জিজ্ঞেস করলাম তাহলে ওধারে? বললেন ওটা ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসের জন্য, আপার ক্লাসের কন্সটেবল, ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসের দারোগার সঙ্গে বসেও খাবে না, তাই এই ব্যবস্থা, এবং এ নিয়ে কোনও ঝামেলাও নেই, এটাই স্বাভাবিক, এটাই উত্তর প্রদেশ, এটাই হিন্দি হার্টল্যান্ড, এটাই ভারতবর্ষ!

এই জাতের হিসেবটাও অদ্ভুত, আমাদের দেশে জাত আসলে শ্রেণি। এই হিসেব বামপন্থীরা বুঝতে ভুল করেছে, কংগ্রেস ব্যবহার করেছে। জাতের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল, তাদের জাতের চাহিদা, অ্যাসপিরেশনকে নিয়ে জমি পেয়েছে, রিজিওনাল দলগুলোও জাতের হিসেব মেনেই রাজনীতি করছে। আর বিজেপি সেই জাতকে নিয়ে আরেক নতুন খেলায় নেমেছে, সেই খেলাতেই লুকিয়ে রয়েছে তাদের বাড়বাড়ন্ত, তাদের ক্ষমতা ধরে রাখা। দেশের অন্য দলগুলো বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া জাত, কুর্মী, দুসাধ, নিষাদ, যাদব, দলিতদের ধর্মের ওপরে তাঁদের জাতের পরিচয়, আইডেন্টিটি পলিটিক্স বোঝাতে ব্যস্ত। তাঁরা বোঝাতে চায়, আসলে উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা তাঁদের যুগ যুগান্ত ধরে শোষণ করেছে। তাঁদের পাঠশালাতে প্রবেশাধিকার ছিল না। তারা এক কুঁয়োয় জল খেতে পারেনি, এক পুকুরে চান করতে পারেনি, এক সারিতে বসে খাবার খেতে পারেনি, তাদের পালকি চড়ে বিয়ে করতে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। মন্দিরে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা ছিল, সে সব নিষেধাজ্ঞা যে চলে গেছে তাও তো নয়। কিন্তু সবে তারা নিজেদের অধিকার বুঝে নেওয়া শুরু করেছিল, কেবল গান্ধীজির হরিজন নয়, অন্য পিছিয়ে পড়া জাতের মানুষরা তাঁদের অধিকারের কথা বলতে শুরু করেছিল। ঠিক সেই সময়ে বিজেপি মাঠে নেমেছে। তাঁরা এই সমস্ত পিছিয়ে পড়া জাতি, অনুসূচিত জাতি, উপজাতিদের বলতে শুরু করেছে। তোমরাও হিন্দু, সে তুমি দুসাধই হও আর নিষাদই হও, কুর্মীই হও আর যাদবই হও, তোমার প্রথম পরিচয় হিন্দু। কারণ? কারণ আসলে মনুবাদের পুজারী, চতুর্বর্ণে বিশ্বাসী, ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়ের সুপ্রিমেসি, তাঁদের মাথার ওপরে থাকার কথা বলা বিজেপি হঠাৎ এই পিছিয়ে পড়া, দলিত, আদিবাসীদের সঙ্গে চায় কেন? কারণ ভোট। বিজেপির বিরুদ্ধে দলগুলো এই পিছিয়ে পড়া জাতি, উপজাতি, আদিবাসীদের কথা বলছে কেন? কারণ ভোট। কানু বিনা গীত নাই, ভোট বিনা চিন্তা নাই। প্রমাণ চাই? দিচ্ছি।

ধরুন আমাদের দেশের সংসদের বাদল অধিবেশন, সকলেই জানেন কী অবস্থা চলছিল, চিৎকার, হাঙ্গামা, বয়কট। তার মধ্যেই গড়ে ৭ মিনিট আলোচনার পরের পাশ হয়েছে ১৫টা বিল, বিল পাশ হবার সময় বিরোধীরা থাকেনি, কি রাজ্যসভা, কি লোকসভা, একই ছবি ছিল সর্বত্র। সাপে নেউলে লড়াই চলছিল। কিন্তু একটা বিল, হ্যাঁ একটা বিল সর্বসম্মতিতে পাশ হয়েছে, হ্যাঁ একজনও বিরোধিতা করেনি। সরকার পক্ষ বিল এনেছে, বিরোধী দল সায় দিয়েছে, বিল পাশ হয়েছে। যে সে বিল নয়, সংবিধান সংশোধনী বিল, ১২৭ তম সংবিধান সংশোধনী বিল। কী ছিল? এই বিল এর আগের আরেক সংবিধান সংশোধনী বিলকে খারিজ করার জন্য আনা হয়েছিল। যেখানে বলা হয়েছিল, সারা দেশে অন্য পিছিয়ে পড়া জাতি, পিছিয়ে পড়া জাতি, মানে ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস, আর আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস চিহ্নিত করার  সিদ্ধান্ত নেবেন রাষ্ট্রপতি। এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যগুলো বিরোধিতা করছিল। এই সিদ্ধান্ত অবিজেপি রাজ্যের বিজেপি নেতাদের কাছেও অস্বস্তিকর ছিল। কাজেই ১২৭ তম সংবিধান সংশোধনী বিল এনে বলা হল, না, এখন থেকে রাজ্য সরকারও রাজ্যের ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস, আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস চিহ্নিত করতে পারবে, এবং এই ইস্যুতে সব্বাই একমত।

যে প্রশ্ন আগে তুলেছিলাম, বিজেপি কেন এই তপসিলি জাতি, উপজাতি, আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস নিয়ে চিন্তিত? বিজেপির রাজনীতি খুব পরিস্কার, তারা দেশের ২৩/২৪% মুসলিম ভোট চায় না, তাদের দরকার নেই। মুখে যাই বলুক, তারা এই ভোট পেতে আগ্রহী নয়। তারা জানে, তারা যত বেশী মুসলমান বিরোধিতা দেখাবে, তত বেশি হিন্দুভোট তাদের দিকে যাবে। সোজা হিসেব। কিন্তু অসুবিধে হল, হিন্দু ভোট মানে কী? তারা তো উচ্চবর্ণের দল, তারা তো মনুবাদ, চতুরাশ্রমের কথা বলে, তারা তো মনেই করে শুদ্রদের জন্ম পা থেকে, জন্ম সূত্রেই তারা নিচুতে থাকবে, তাদের কাজ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যদের সেবা করা। কিন্তু গোলমাল সংখ্যায়। দেশের ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যদের ভোট পেলেও তা ক্ষমতায় আসার জন্য যথেষ্ট নয়, এটাও বিজেপি বুঝেছে, না হলে আদবানির রথযাত্রার পরেও তারা তখনি ক্ষমতায় চলে আসতো, আসেনি। এমন কি অটলবিহারী সরকারেও বিজেপির একলা সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। যখন তারা বিভিন্ন জাতের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে, বা তাদের দলকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে নামল, তখন তারা সাফল্য পেয়েছে। এই সাফল্য ধরে রাখতে তাদেরকে ওই নিষাদ, কুর্মী, দুসাধ, ডোম, চামার, তেলি, পাসোয়ান, মতুয়াদের বোঝাতেই হবে যে তোমরাও হিন্দু, বোঝাতেই হবে যে হিন্দুরাষ্ট্র গঠনে তাদেরও বিরাট ভূমিকা আছে। যদিও বহুদিন আগের কথা নয়, এই কিছুদিন আগে, আদিত্যনাথ যোগী লক্ষ্ণৌতে মুখ্যমন্ত্রী আবাস শোধন করিয়েছিলেন। যজ্ঞ করিয়েছিলেন, কারণ সেখানে থাকতেন একজন যাদব। এই অতিমারীর মধ্যে দলিত জাতির রোগীকে হাসপাতালে আলাদা রাখা হয়েছে। এই কিছুদিন আগে যোগীজি নিচু জাতের মানুষজনদের সঙ্গে খেতে বসেছিলেন। তাঁর জন্য আলাদা বাসন কোসনের ব্যবস্থা হয়েছিল, কিন্তু এদের ভোট না হলে চলবে না সেটাও যোগীজি জানেন, মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই সব দলিত, পিছিয়ে পড়া মানুষদের ভোট না হলে গদি থাকবে না। তাই তাদেরকে এখন হিন্দু ব্রাকেটের মধ্যে রাখার এই চেষ্টা বিজেপি চালিয়ে যাচ্ছে, কিছুটা হলেও সফলতাও পেয়েছে।

ধরুন আমাদের রাজ্যেই মতুয়া ভোট তো তারা পেয়েছে, সেই নমশুদ্রদের ভোট যাদেরকে মন্দিরে ঢুকতে দিত না ব্রাহ্মণরা। সেই ভোট এই ব্রাহ্মণ্যবাদী দল জোগাড় করতে পেরেছে। জাত এবং সেই জাতের ভোট কতটা গুরুত্বপূর্ণ? ক’দিন আগে নবীন পট্টনায়ক, খবরে আসেনই না, নিজের রাজ্য নিয়ে আছেন, তিনি ঘোষণা করলেন, সামনের রাজ্য পঞ্চায়েত ভোটে ২৭% আসন ওবিসিদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে, জাতের ভোট কতটা গুরুত্বপূর্ণ? নীতীশ কুমার তাঁর চরম বিরোধী আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন, কেন? তাঁরা চাইছেন, ২০২১ এর জনগণনায় দলিত, আদিবাসীদের সঙ্গে সঙ্গে ওবিসি মানুষও গোণা হোক, মানে বিভিন্ন ওবিসি জাতির মানুষদের হিসেব হোক। কারণ মণ্ডল কমিশনের হিসেব নিকেশের ভিত্তি, ১৯৩১ এর জাতিভিত্তিক জনগণনা। তারপর থেকে নিশ্চিত এই হিসেব একই থাকেনি, কাজেই নীতীশ কুমার থেকে তেজস্বী যাদব, অখিলেশ যাদব থেকে মায়াবতী, স্তালিন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন ২০২১ এ জাতিভিত্তিক গণনা হোক, এবং এইখানে এসেই থমকেছে বিজেপি। তাদের দলের মন্ত্রী সংসদে বলেছেন, জাতি ভিত্তিক গণনা হবে না, তাঁদের দলের নেতা বলছেন জাতি ভিত্তিক গণনা চাই, মোদি শাহ চুপ করে বসে জল মাপছেন। কেন? এক প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যাবে, এরই মধ্যে মারাঠারা দাবি করেছে আলাদা মর্যাদার, সংরক্ষণের। একই দাবি রাজস্থান আর হরিয়ানার জাঠেদের, সারা দেশে ওবিসির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয় এমন জাতির সংখ্যাও কম নয়, তারা মাঠে নামছে। তাদের দাবি মেনে নিলে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, উঁচুজাতের ভোট নড়বড় করবে, মণ্ডল কমিশনের পর যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তর ভারতে, সেই অবস্থা আবার শুরু হবেই, বিজেপি সেটাও জানে। তারা বাঘের পিঠে সওয়ার হয়েছিল, সেই বাঘের পিঠ থেকে নামলে, এবার বাঘেই খাবে। তারা যদি জাতিভিত্তিক জনগণনায় রাজি হয়, তাহলে উচ্চবর্ণের ভোট হারাবে, তারা যদি রাজী না হয়, তাহলে ওবিসিদের ভোট চলে যাবে। এক নতুন রাজনীতির মুখে দাঁড়িয়ে আমরা, তাহলে আমরা কী চাইবো?

যাদের দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল, মানুষের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল যুগ যুগান্ত ধরে, তাঁরা তাঁদের অধিকার ফিরে পাক। ব্রাহ্মণ্যবাদ, মনুবাদকে উপড়ে ফেলে মানুষের অধিকার, মানুষের নতুন সমাজ তৈরি হোক। আমাদের দেশে, কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে গরীব মানুষেরাই পিছিয়ে পড়া জাতি, সেই পিছিয়ে পড়া মানুষদের সঙ্গে নিয়েই নতুন ভারত গড়ে উঠুক। তা কেবল মন্দিরে প্রবেশের অধিকার দিয়েই নয়, তা কেবল এক ব্রাকেটে হিন্দু নামের মধ্যে রেখে দিয়েই নয়, তাদের সামাজিক ন্যায় তারা ফিরে পাক। সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েই আমরাও বলছি, হোক জাতিভিত্তিক জনগণনা, জাতি এক বাস্তব, জাতিভেদকে অস্বীকার করেই প্রত্যেক জাতির সম্মেলনে নতুন ভারত গড়ে উঠুক।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Ranaghat | ভোটের আগেই মিঠুনের হাত ধরে তৃণমূল প্রার্থী মুকুটমণির স্ত্রী বিজেপিতে
03:15
Video thumbnail
Sera 10 | অন্ডালে অমিত শাহকে অভ্যর্থনা কয়লা মাফিয়ার !
19:19
Video thumbnail
Weather | কালবৈশাখীর পূর্বাভাস দক্ষিণবঙ্গের ৬ জেলায়
01:04
Video thumbnail
Arvind Kejriwal | 'মোদি ভোটে জিতলে মমতাকে জেলে পাঠাবেন', জামিনে মুক্তির পরই বিজেপিকে তোপ কেজরির
02:01
Video thumbnail
পলিট্রিক্সের গ্রিনরুম (পর্ব ৬) | তারকাদের কুর্সি-সভ্যতা
55:32
Video thumbnail
আমার শহর (Amar Sahar ) | বর্ধমান দুর্গাপুরের প্রার্থী কীর্তি আজাদ
02:14
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | কেজরির মন্তব্যকে হাতিয়ার করে মমতাকে নিশানা বিরোধী দলনেতার
05:26
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধের দামামা | Dharmajuddha Damama | পঞ্চম দফার আগে ফের আরামবাগে প্রধানমন্ত্রী
11:38
Video thumbnail
District Top News | দেখে নিন আজকের জেলার গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলি
17:17
Video thumbnail
Pori Moni | স্বামীর সঙ্গে দূরত্বের মধ্যেই ফের মা হলেন পরীমণি
01:46