Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | নেহরু মন্ত্রিসভায় ছিলেন তাঁর তীব্র বিরোধীরাও

Fourth Pillar | নেহরু মন্ত্রিসভায় ছিলেন তাঁর তীব্র বিরোধীরাও

গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোই ছিল কংগ্রেস বিরোধীদের হাতে

Follow Us :

স্বাধীনতা এসেছে দেশের, এই স্বাধীনতা কেবল কংগ্রেসের নয়। এটাই বলেছিলেন গান্ধীজি নেহরুকে। দেশ দু’ টুকরো হয়ে গিয়েছে, দাঙ্গা এখানে থামে তো ওখানে বাড়ে, খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে, কাশ্মীর নিয়ে সমস্যা বেড়েই চলেছে। দলের মধ্যে নানান অসন্তোষ, দলটার নাম কংগ্রেস, যেখানে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরাও আছেন, সমাজগণতন্ত্রীরাও আছেন, উদার গণতান্ত্রিক মানুষ আছেন। অন্যদিকে কমিউনিস্টরা বা বলা যাক বামেরা যারা হতেই পারত কংগ্রেসের বাম পথে চলা মানুষজনের সঙ্গী, তাঁরা ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায় ভুলো মত, ভুলো মত বলে হাতে অস্ত্র তুলেছেন। আরএসএস, হিন্দু মহাসভা বিষ ছড়াচ্ছে, সাভারকর, গডসে সক্রিয়, দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সরকার তখনও রাজা রাজড়াদের, তাঁদের অনেকেই চাপে পড়ে দেশের মধ্যে এসেছেন কিন্তু প্রবল গান্ধী, নেহরু বিরোধী। সেই রাজা রাজড়ারা হাত মেলাচ্ছে হিন্দু মহাসভা, আরএসএস, সাভারকর আর গডসের সঙ্গে। হ্যাঁ, গডসের সেই ইতালিয়ান বেরেত্তা পিস্তল এসেছিল গোয়ালিয়র রাজাদের ঘর থেকেই। সেই তখন দেশের প্রথম মন্ত্রিসভা তৈরি হচ্ছে। এখন ভক্তদের দল প্রচার করে, সেই প্রথম মন্ত্রিসভায় নাকি বল্লভভাই প্যাটেলকে নেওয়ার কোনও ইচ্ছেই ছিল না নেহরুর, উনি নাকি প্যাটেলকে বাদ দিতে চেয়েছিলেন। সত্যি ইতিহাসটা কী? ১৪ অগাস্ট রাতেই সেই বিখ্যাত ভাষণ, দ্য ট্রিস্ট উইথ ডেসটিনি-র পরে নেহরু চলে গিয়েছিলেন ভাইসরয় হাউসে, ক’দিন পরেই যেটাকে বলা হল রাষ্ট্রপতি ভবন, হাতে ১৫ অগাস্ট যে মন্ত্রিসভা শপথ নেবে তার তালিকা। যদিও এক বিশুদ্ধ মজা সেদিন হয়েছিল, তবুও সেটা বলা দরকার, নেহরু বিদায়ী ভাইসরয়ের হাতে যে খাম তুলে দিয়েছিলেন তা ছিল ফাঁকা, পরে তা জানা যায়, আবার নতুন করে সেই খাম পাঠানো হয়।

তো যাই হোক তিনি ১৪ তারিখে তালিকা দিলেন আর তার বহু আগেই ১ অগাস্ট তিনি বল্লভভাই প্যাটেলকে চিঠি লিখেছেন, “As formalities have to be observed to some extent, I am writing to invite you to join the new Cabinet. This writing is somewhat superfluous because you are the strongest pillar of the Cabinet.” খুব পরিষ্কার যে বল্লভভাই প্যাটেল ছিলেন খুব স্বাভাবিক ভাবেই ক্যাবিনেটের অন্যতম অঙ্গ। তো সেই চিঠি পাওয়ার পরে বল্লভভাই প্যাটেল কী লিখেছিলেন? তিনি ৩ অগাস্টের চিঠিতে লিখছেন, “Our attachment and affection for each other and our comradeship for an unbroken period of nearly 30 years admit of no formalities. My services will be at your disposal, I hope, for the rest of my life and you will have unquestioned loyalty and devotion from me in the cause for which no man in India has sacrificed as much as you have done. Our combination is unbreakable and therein lies our strength.” কী অসাধারণ বন্ধুত্ব, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রত্যেক লাইনে। আজ যাঁরা নেহরু-প্যাটেলের মধ্যে বিভাজনকে কংগ্রেস বিজেপির তত্ত্ব আনতে চান, তাঁরা নেহরু বা প্যাটেলকে নিয়ে মিথ্যে কথা বলছেন। এ তো গেল প্যাটেলের কথা যিনি প্রথম মন্ত্রিসভার উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন, বাকিরা কে কে ছিলেন? কাদেরকে নিয়ে নেহরু পথ চলা শুরু করলেন? এই যে বিরাট সংসদ ভবন যা আজ থেকে পুরনো হয়ে গেল, সেই সংসদে ট্রেজারি বেঞ্চে কারা বসতেন? কারা দেশের প্রথম মন্ত্রী হলেন? মোট ১৪ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের মধ্যে কারা কারা ছিলেন? এটা নির্বাচিত সরকার ছিল না, তখনও নির্বাচন হয়নি, আমাদের সংবিধান তৈরি হয়নি। কিন্তু একটা সরকার তৈরি হচ্ছিল, নেহরু জানতেন স্বাধীনতা এসেছে ইত্যাদি উত্তেজনা কেটে গেলেই মানুষ কাজ দেখতে চাইবে, এবং তার সঙ্গে এটাও জানতেন যে এই মন্ত্রিসভা বা সরকার কংগ্রেসের নয়। সেই জন্যেই তিনি ১৪ জনের মধ্যে ৬ জনকে এমন নিলেন, যাঁরা কংগ্রেস দলের কেউ নন, কয়েকজন তো কংগ্রেসের তীব্র বিরোধী।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | ঐতিহাসিক ভুল করার ক্ষমতাও আর নেই সিপিএম-এর

প্রথম নাম বি আর আম্বেদকরের, যিনি লাগাতার কেবল কংগ্রেস নয়, গান্ধীর বিরোধিতা করে গিয়েছেনন, তাঁকে দেওয়া হল আইন দফতর। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, হিন্দু মহাসভার নেতা, গান্ধী হত্যার পরে উনিই আরএসএস-এর সাহায্য নিয়ে তৈরি করেছিলেন জনসঙ্ঘ, তিনি পেলেন শিল্প ও সরবরাহ দফতরের দায়িত্ব, আর কে সন্মুখম চেট্টি, যিনি কিছুদিন আগেই ছিলেন জাস্টিস পার্টির সদস্য। সেই জাস্টিস পার্টি যা শুরু করেছিলেন পেরিয়ার, যিনি বলতেন, নো কংগ্রেস, নো গান্ধী, নো গড, সেই পেরিয়ারের এক শিষ্য পেলেন অর্থ দফতর। কালি দল, সেই অর্থে দেশের প্রথম ধর্মভিত্তিক দল, সেই দলের বলদেভ সিং পেলেন প্রতিরক্ষা দফতরের দায়িত্ব। কুভরজি হরমুসজি ভাবা, এক পারসি শিল্পপতি, যিনি কংগ্রেসের কেউ নন, তিনি পেয়েছিলেন বাণিজ্য দফতর। এন গোপালস্বামী আয়েঙ্গার এক আমলাকে রাখলেন দফতরহীন করে কিন্তু তাঁকে দেওয়া হল কাশ্মীরের দায়িত্ব, কারণ তিনি এক বিরাট সময় ধরে কাশ্মীরের দেওয়ান ছিলেন। অর্থাৎ ১৯৪৭-এ কংগ্রেসের বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার পরেও নেহরু মন্ত্রিসভার বিত্ত, শিল্প, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, আইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর কিন্তু অকংগ্রেসি মানুষজনের হাতে ছিল। মন্ত্রিসভায় হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, পারসি, বৌদ্ধ ধর্মের মানুষ ছিলেন, ছিলেন দু’ জন দলিত এবং একজন মহিলা। এবং এটাই ছিলেন নেহরু, সংবিধান মেনে নির্বাচিত সরকার নয়, অতএব জাতীয় সরকার। অবশ্য ৫২ আসতে আসতেই এঁদের প্রায় প্রত্যেকেই মন্ত্রিত্ব পদ ছাড়েন, সরকার থেকে সরে যান, কিন্তু শুরুয়াতটা এরকম ছিল এবং তাঁরা প্রত্যেকেই এই ব্যবস্থা মেনেও নিয়েছিলেন। শ্যামাপ্রসাদও শপথ নিয়েছিলেন, বলেননি যে আমি মন্ত্রী হব না। ১৯৫০-এ বল্লভভাই প্যাটেল মারা গেলেন আর ওই প্রথম মন্ত্রিসভার অন্যতম সহযোগী ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ হলেন প্রথম রাষ্ট্রপতি। এরপর সন্মুখম চেট্টি পদত্যাগ করলেন বা করতে বাধ্য হলেন, ওটাই ছিল স্বাধীন ভারতে প্রথম দুর্নীতির অভিযোগে মন্ত্রিত্ব যাওয়ার ঘটনা। কর ফাঁকি দেনেওয়ালাদের তালিকা থেকে কয়েকটা নাম নাকি ওঁরই নির্দেশে বাদ দেওয়া হয়েছিল। চক্রবর্তী রাজগোপালাচারীর নির্দেশেই উনি পদত্যাগ করেন। ওই পেরিয়ার ভক্ত মানুষটিকে নেহরুর মন্ত্রিসভায় নেওয়ার অনুরোধ নাকি স্বয়ং গান্ধীজি করেছিলেন।

তো যাই হোক সন্মুখম চেট্টি পদত্যাগ করেছিলেন। তাঁর জায়গায় ৩৫ দিনের জন্য বিত্তমন্ত্রী হয়েছিলেন এই বাংলার কংগ্রেসের প্রতিনিধি ক্ষিতীশ চন্দ্র নিয়োগী। মাত্র ৩৫ দিন পরেই তিনি এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি পদত্যাগ করছেন, উপলক্ষ নেহরু লিয়াকত চুক্তি। যে চুক্তির ফলে লক্ষ হিন্দু শরণার্থী বাংলাদেশ থেকে এ দেশে চলে আসতে পেরেছিলেন। কে সি নিয়োগী কিন্তু পরে তাঁর ভুল বুঝেছিলেন, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি শেষতক বিরোধিতা করেছিলেন এবং এই কারণেই উদ্বাস্তুদের কাছে চরম ঘৃণার পাত্র হয়ে ওঠেন। এটা অবশ্য ঘটনা যে নেহরু সরকার চুক্তি নিয়ে সিরিয়াস ছিলেন যদিও লিয়াকত আলি এই চুক্তিকে আমল দেননি। শ্যামাপ্রসাদের বিরোধিতা ছিল এই দেশ হিন্দুদের, আর মুসলমানদের দেশ পাকিস্তানন কাজেই শরণার্থী আসা যাওয়ার প্রশ্নই বা উঠবে কেন? তাদের সম্পত্তি জান মালের দায়িত্ব আমরা নেবই বা কেন? কিন্তু দু’ দেশের শরণার্থী, উদ্বাস্তুদের জান মালের সুরক্ষার দায়িত্ব না নিলে আবার এক বিরাট দাঙ্গার মুখোমুখি হত পাকিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দু মানুষজন। আম্বেদকর কিছুদিন পরে এক বিরাট চিঠি লিখে পদত্যাগ করলেন, তার মূল বিষয় ছিল হিন্দু কোড বিল। যে হিন্দু কোড বিল আনার ফলেই হিন্দু পারসোনাল ল-এর গুরুত্ব কমে, সংখ্যাগুরু মানুষজনের মধ্যে ধর্মীয় অনুশাসনের চাপও কমে। সম্পত্তির অধিকার, বিবাহের বয়স ইত্যাদি নিয়ে অনেক জটিলতা কাটে, সেদিন যদি হিন্দু কোড বিল না আসত তাহলে আজও হিন্দুদের মধ্যে বহুবিবাহ, নাবালিকা বিবাহ চালু থাকত। হিন্দু বিবাহিত মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার থাকত না। আম্বেদকর এগুলো লাগু করার কথা বলছিলেন, আরএসএস ইত্যাদিরা তীব্র বিরোধিতা করছিল আর কংগ্রেস খানিকটা সময় নিচ্ছিল, এর প্রতিবাদেই আম্বেদকর পদত্যাগ করেন। এরও কিছুদিন আগে সি এইচ ভাবা বাণিজ্য দফতর থেকে পদত্যাগ করেছিলেন কারণ তিনি নিজে ব্যবসায়ী ছিলেন এবং তাঁর দফতরের বহু সিদ্ধান্ত তাঁর নিজের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত ছিল, তিনি তা এড়াতেই পদত্যাগ করেন। মোটামুটি এইভাবেই ৫২ সালে পরবর্তী নির্বাচন আসার আগেই নেহরুর জাতীয় মন্ত্রিসভা হয়ে ওঠে কংগ্রেসের মন্ত্রিসভা। কিন্তু এক কঠিন পরিস্থিতিতে চরম বিরোধীদের নিয়েও মন্ত্রিসভা তৈরি করেছিলেন নেহরু, ইন ফ্যাক্ট ক্যাবিনেটের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোই ছিল কংগ্রেস বিরোধীদের হাতে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Ranaghat | ভোটের আগেই মিঠুনের হাত ধরে তৃণমূল প্রার্থী মুকুটমণির স্ত্রী বিজেপিতে
03:15
Video thumbnail
Sera 10 | অন্ডালে অমিত শাহকে অভ্যর্থনা কয়লা মাফিয়ার !
19:19
Video thumbnail
Weather | কালবৈশাখীর পূর্বাভাস দক্ষিণবঙ্গের ৬ জেলায়
01:04
Video thumbnail
Arvind Kejriwal | 'মোদি ভোটে জিতলে মমতাকে জেলে পাঠাবেন', জামিনে মুক্তির পরই বিজেপিকে তোপ কেজরির
02:01
Video thumbnail
পলিট্রিক্সের গ্রিনরুম (পর্ব ৬) | তারকাদের কুর্সি-সভ্যতা
55:32
Video thumbnail
আমার শহর (Amar Sahar ) | বর্ধমান দুর্গাপুরের প্রার্থী কীর্তি আজাদ
02:14
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | কেজরির মন্তব্যকে হাতিয়ার করে মমতাকে নিশানা বিরোধী দলনেতার
05:26
Video thumbnail
ধর্মযুদ্ধের দামামা | Dharmajuddha Damama | পঞ্চম দফার আগে ফের আরামবাগে প্রধানমন্ত্রী
11:38
Video thumbnail
District Top News | দেখে নিন আজকের জেলার গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলি
17:17
Video thumbnail
Pori Moni | স্বামীর সঙ্গে দূরত্বের মধ্যেই ফের মা হলেন পরীমণি
01:46