সাপের কামড়ে (snakebite) প্রতি বছর ৬৪ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় শুধু ভারতে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী যা গোটা বিশ্বের সাপের কামড়ে মৃত মানুষদের মধ্যে অন্তত আশি শতাংশ। সম্প্রতি নেচার পত্রিকায় (Nature Magazine) প্রকাশিত এক সমীক্ষার রিপোর্টে জানানো হয়েছে, গোটা বিশ্বে সর্বমোট ৭৮৬০০ জনের সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে। আর তার মধ্যে শুধু ভারতে মৃতের সংখ্যা ৬৪,১০০ জন।
পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট ওই সংখ্যাটা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায় উত্তরপ্রদেশে। তারপরে আছে মধ্যপ্রদেশে এবং পরবর্তীতে রাজস্থান। যদিও এর পিছনে গ্রামের বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবকে অনেক ক্ষেত্রে দায়ী করেছেন চিকিৎসকরা।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিছু পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্রশাসনিক স্তরে। সাপের কামড় প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি তদারকির জন্য চলতি বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের তরফে সারা দেশে ন্যাশনাল হেলথ মিশনের আওতায় থাকা রাজ্যের অফিসগুলিতে মনিটরিং আধিকারিক এবং নোডাল আধিকারিক ( Nodal Officer) নিয়োগের নির্দেশ পাঠানো হয়। এই কর্মসূচির অধীনে, ভারত সরকার প্রতিটি রাজ্যে সাপের কামড়ের চিকিৎসার প্রশিক্ষণের জন্য তহবিল বরাদ্দ করেছে।
জর্জিয়া ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের চিকিৎসক ডাঃ সৌম্যদীপ ভৌমিক জানিয়েছেন, বিশ্বের ২২টি দেশের গবেষকদের একটি দল সাম্প্রতিককালে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, বিশ্বব্যাপী সাপের কামড়ে মৃত্যুর প্রায় ৮০% ভারতে ঘটে, যেখানে প্রতি বছর ৬৪ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। অবশ্য বিচ্ছিনভাবে কিছু প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়া হলেও এত বড় মাপের একটি সমস্যার মোকাবিলায় কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব চিকিৎসক মহলেও যথেষ্ট আশঙ্কার পরিবেশ তৈরি করেছে।
পরিস্থিতি ভবিষ্যতের পক্ষে কতটা বিপজ্জনক তার আঁচ পেতে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের উদ্যোগে একটি সমীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অবশ্য শুধু সমীক্ষা নয় বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, এই বিপজ্জনক সমস্যা মেটাতে প্রশাসনিক স্তরে দৃষ্টিভঙ্গীর বদল প্রয়োজন। কারণ সাধারনভাবে এই যুক্তিই দেওয়া হয় যে প্রতিষেধকের (Antivenom Injection) অভাবেই সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো যাচ্ছে না। কিন্তু তাদের মতে সমস্যাটা আরও গভীরে। আসলে গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাবের জন্য দেশে এই ভাবে বেড়েছে সাপের কামড়ে মৃতের সংখ্যা।