বিষ্ণুপুর: বিষ্ণুপুর টেন্ডার দুর্নীতি কাণ্ডে ফের গ্রেফতার ১। শুক্রবার রাতে গ্রেফতার হন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ট রামশংকর মহান্তি ওরফে খোকন। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত রামশংকরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। এছাড়াও উদ্ধার হয়েছে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের একাধিক ডকুমেন্ট।
ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের যাবতীয় ডকুমেন্ট রাখা থাকত রামশংকরের কাছে। শ্যামাপ্রসাদের আর্থিক লেনদেনের সমস্ত বিষয়টিই দেখত রামশংকর। একে তল্লাশি চালিয়ে পোস্ট অফিসে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ৮ টি অ্যাকাউন্টের হদিশ পায় পুলিশ। তবে তাতে কত টাকা রয়েছে তা জানা যায়নি। এছাড়াও উদ্ধার হয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রীর চারটি জমির দলিল। সূত্রে খবর, সেই জমিও কেনা হয়েছে মোটা টাকার বিনিময়ে।
পুরসভার আর্থিক তছরুপের ঘটনায় ২২ অগস্ট গ্রেফতার হন রাজ্যের প্রাক্তন বস্ত্র ও আবাসন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। বিষ্ণুপুর পুরসভায় দীর্ঘদিন পুরপ্রধান ও প্রশাসক হিসাবে ছিলেন তিনি। সে সময় বিষ্ণুপুর পুরসভার মোট ৫৫ টি সরকারি প্রকল্পে আর্থিক বেনিয়মের হদিশ মিলেছে। আর্থিক তছরুপের পরিমাণ প্রায় দশ কোটি টাকা। বিষ্ণুপুর থানায় অভিযোগ জানান বিষ্ণুপুরের মহকুমা শাসক অনুপকুমার দত্ত। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই শনিবার রাতে প্রাক্তন মন্ত্রীকে গ্রেফ্রতার করে বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ। ভারতীয় দন্ডবিধির ৪২০ ধারায় প্রতারণা, ৪০৬ ধারায় বিশ্বাসভঙ্গ ও ৪০৯ ধারায় পদে থেকে সরকারি অর্থ তছরুপের মামলা সহ একাধিক মামলা রজু করে পুলিশ। তারপর তাকে জেরা করে একের পর এক তথ্য উঠে আসছে।
পোস্ট অফিসে ৮ টি অ্যাকাউন্ট, জমির দলিল ছাড়াও বিষ্ণুপুর পুরসভা থেকে শুক্রবার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। সেগুলি খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী দল। গতকালের গ্রেফতার নিয়ে এই নিয়ে এই টেন্ডার দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩।
আরও পড়ুন: ডুয়ার্সের সৌন্দর্য এবার ভিস্তা ডোম স্পেশালের হাত ধরে
গত ৩৪ বছরে কখনও কংগ্রেস, কখনও তৃণমূলের হয়ে বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ২০০৯ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন শ্যামাপ্রাসাদ। ২০১১ সালে বিষ্ণুপুর বিধানসভা থেকে নির্বাচিত হয়ে পরিবর্তনের সরকারের আবাসন বিভাগের পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। পরে আবাসন দফতর থেকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় নারী ও শিশু কল্যাণ বিভাগের মন্ত্রী হিসাবে।
ফের ওই দফতর থেকে সরিয়ে বস্ত্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় শ্যামাপ্রসাদকে। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুর বিধানসভা থেকে হেরে যান তিনি৷ পুরসভার দায়িত্বে বহাল থেকে যান তিনি। ২০২০ সালে পুরসভার মেয়াদ শেষ হবার পরেও তিনি বিষ্ণুপুর পুরসভার পুর-প্রশাসক বোর্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০২০ সালে নভেম্বর মাসে পুরসভার পুর প্রশাসক বোর্ডের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। ২০২০-র ডিসেম্বর মাসে বিজেপিতে যোগ দেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: চালককে মারধর, অ্যাপ ক্যাব চুরির অভিযোগে গ্রেফতার ৬