skip to content
Friday, December 13, 2024
HomeScrollতাঁর ক্যামেরায় চোখ রাখত সময়
Mrinal Sen

তাঁর ক্যামেরায় চোখ রাখত সময়

মৃণাল সেনও যেন বলে গেছেন সিনেমা পরিচালক থেকে সিনেমাপ্রেমীদের- বি ব্রেভ

Follow Us :

ছবি শেষ। হলের বাইরে দাঁড়িয়ে পরিচালক। দুটি অল্পবয়সি ছেলে বেরিয়ে এসে তাঁকে প্রশ্ন করল, কবে শুটিং হয়েছে। তিনি বললেন সেপ্টেম্বর, ১৯৭১। একটি ছেলে চেঁচিয়ে বলল, মিথ্যে কথা। এবার পরিচালকের অবাক হওয়ার পালা। জানা গেল ছবিতে একটি দৃশ্যে এক পথসভায় একজনকে বক্তৃতা দিতে দেখা গেছে। এসপ্লানেড ইস্টে। ঘটনাটি ১৯৬৯-এর। সেদিন বিকেলেই সিআরপি’র গুলিতে ওই বামপন্থী নেতার মৃত্যু হয়। ছবির দর্শক এই ছেলেটি তাঁর ভাই। এবার পরিচালকের মনে পড়ল যে প্রায় দু’বছর ধরে মাঝেমধ্যেই তিনি নানান রাজনৈতিক কাজকর্মের ছবি রাস্তায় ঘুরে ঘুরে শুট করে রাখতেন। সম্ভবত সে ভাবেই ওই নিহত নেতার শেষ পথসভা উঠে এসেছে সিনেমায়। এগিয়ে গিয়ে পরিচালক হাত ধরলেন তাঁর ছবির সেই দর্শকের, যার ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা অজান্তেই অমর হয়ে গেছে সিনেমায়।

সিনেমার নাম কলকাতা ৭১। পরিচালক মৃণাল সেন।

কলকাতা তথা ভারতের চলচ্চিত্র জগতের এই প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্বের সিনেমায় প্লট সাব প্লটের গণ্ডি পেরিয়ে মূর্ত হয়েছে সময়ের সংকট। চরিত্ররা উঠে এসেছেন একেবারে পাশের পাড়া থেকে। মানুষের জীবনে আর্থসামাজিক সমস্যা যে কত গল্পের জন্ম দেয়, হাজির করে কত প্রশ্ন, তা আমরা এভাবে বুঝতাম না যদি না মৃণাল সেন চোখ রাখতেন ক্যামেরার পেছনে।

অথচ চিত্র পরিচালক হিসাবে তাঁর শুরুটা মোটেই মসৃণ হয়নি। ১৯৫৫ অর্থাৎ যে বছর ভারতীয় সিনেমার গতিপথ পাল্টে দিলেন সত্যজিৎ রায় পথের পাচাঁলি দিয়ে, সে বছরই মৃণাল সেন তৈরি করেন প্রথম ছবি ‘রাত ভোর’। কিন্তু ছবি হিসাবে তা ব্যর্থ এতটাই যে স্বয়ং পরিচালকই ওই বিষয়ে আলোচনায় উৎসাহ দেখাননি কোনও দিন। কিন্তু তার পাঁচ বছর বাদে আমরা পেলাম অনেক আত্মবিশ্বাসী মৃণাল সেনকে। ছবির নাম ‘বাইশে শ্রাবণ’। ১৯৪৩’র মন্বন্তর উঠে আসে রূপোলি পর্দায়। কোনও এক সময়ের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটের সঙ্গে তাঁর সখ্যের সেই শুরু।

আদুর গোপালকৃষ্ণনের মতে, ১৯৬০ সাল থেকেই সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক ও মৃণাল সেনের হাত ধরে ভারতে সমান্তরাল সিনেমা এক আন্দোলনের বীজ বপন করে। এই তিনজনের কাজের ধারায় তিন ধরনের দৃষ্টিকোণ লক্ষ করা যায়। তার মধ্যে মৃণাল সেন যেন মেকিংয়ের দিক দিয়ে বেশ কিছুটা আলাদা। বাংলা ছাড়াও বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় ছবি পরিচালনা করেছেন। তাঁর তৈরি বিভিন্ন ছবি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে।

ইন্টারভিউ ছবিটিতে মৃণাল সেন নায়ক রঞ্জিত মল্লিককে দিয়ে সরাসরি দর্শকের সঙ্গে কথা বলান ক্যামেরার মাধ্যমে, সে কথা মনে আছে আমাদের সকলের। চলন্ত ট্রামে বসে থাকা একটি মেয়ে, তার পাশেই দাঁড়িয়ে রঞ্জিত মল্লিক। মেয়েটির চোখ তাঁর হাতে থাকা ম্যাগাজিনের পাতায়। সেখানেই একটি খবর– মৃণাল সেনের নতুন আবিষ্কার রঞ্জিত মল্লিক। মেয়েটি রঞ্জিত মল্লিককে দেখে। তারপরেই রঞ্জিত সংলাপ বলতে শুরু করেন সোজা ক্যামেরার দিকে তাকিয়েই।

আরও পড়ুন: সৃজিৎ বলছেন আসলে ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’!

১৯৬৯-এ নির্মিত হয় ভুবন সোম। এক আমলা ও একটি সরল গ্রাম্য মেয়ের এই গল্প দর্শকের মন ছুঁয়ে যায় যেমন, তেমনই মৃণাল সেন পান তাঁর প্রথম রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। তবে কলকাতা তথা ভারতবর্ষের ঝোড়ো সময়ের ইতিকথা ধরা পড়েছে তাঁর কলকাতা ৭১, পদাতিক এবং কোরাসে। উত্তাল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের নানা টানাপোড়েন, সংকট এবং মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর লড়াই মৃণালের সিনেমাকে সমৃদ্ধ করেছে।

৭-এর দশকের শেষ ও ৮-এর দশকের শুরুতে মৃণাল সেন আরও বেশি করে মানুষের অন্তর্তদন্তে মন দেন। তাঁর ছবির চরিত্ররা তুলে ধরে আপনার আমার চেনা মুখ, অচেনা আপসকেই। একদিন প্রতিদিন, আকালের সন্ধানে, খারিজ বা খণ্ডহর সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে উন্মুক্ত করে দেয় মানুষের বিপন্নতাকে। বহুদিন আগে মানে, সিনেমা তৈরি শুরু করার আগে বাংলার বাইরে চাকরি করতে যান মৃণাল সেন। নানা দ্বন্দ্ব, নানা হতাশার মধ্যে একদিন ঘরে ফিরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই নিজেকে নানা প্রশ্নে ক্ষতবিক্ষত করেছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আত্মজীবনীতে। যা করতে চান তা করতে না পারার যন্ত্রণায় কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন সেদিনের সেই তরুণ। সেই আত্মবিশ্লেষণের যন্ত্রণায় তিনি যেন দগ্ধ করতে চেয়েছেন তাঁর ছবির দর্শকদের। খারিজ ছবিতে মৃত ভৃত্য পালানের বাবার স্থির চোখ তাড়া করে বেড়ায় আমাদের। তেমনি আকালের সন্ধানের রাজেন তরফদার বা একদিন প্রতিদিনের মমতাশঙ্কর ছবির শেষ দিকে তাকিয়ে থাকেন ক্যামেরার দিকে, না কি আমাদের দিকেই?

তাঁর বন্ধু ঋত্বিক ঘটক ভাবা প্র্যাকটিস করতে বলেছিলেন। মৃণাল সেন নিজেও কিন্তু কম ভাবাননি আমাদের। ৮-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে তাঁর ছবিতে রাগ কমেছে, চরিত্ররা খুঁজতে চেয়েছেন নিজেদের। ছবি বানানোর পালা শেষ করেছেন তিনি আমার ভুবন দিয়ে, ২০০২ সালে।

ফার্নান্দো সোলানাসের তথ্যচিত্র ‘দ্য আওয়ার অব ফার্নেসেস’ দেখে আর্জেন্টিনার মানুষেরা বলেছিলেন, আমরা যুদ্ধের থেকে শান্তিকে বেশি ভয় পাই। সেটা ছিল প্রতিবাদের দশক। আজকের এই সব মেনে নেওয়ার সময়ে, তথাকথিত শান্তির সময়ে, আমরা ভয় কাটাই মৃণাল সেনের ছবি দেখে। তাঁর ছবিতেই তো পুলিশের তাড়া খাওয়া ছেলেকে পালানোর রাস্তা দেখিয়ে বাবা বলেন, বি ব্রেভ।

মৃণাল সেনও যেন বলে গেছেন সিনেমা পরিচালক থেকে সিনেমাপ্রেমীদের- বি ব্রেভ।

 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Priyanka Gandhi | Narendra Modi | প্রথম ভাষণেই মোদিকে কড়া আক্রমণ প্রিয়াঙ্কার, সংসদে কী অবস্থা দেখুন
00:00
Video thumbnail
Israel | ইজরায়েলি সেনাকে উড়িয়ে দিল হামাস, কী হবে এবার?
00:00
Video thumbnail
Priyanka Gandhi Vadra | সংসদে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর প্রথম ভাষণ, কী বললেন? দেখুন Live
00:00
Video thumbnail
Bangladesh | India | খেলা শুরু ভারতের, ৩০০ কিমি দখল করে বাংলাদেশে ঢুকে গেল আর্মি, এবার কী হবে?
06:48:00
Video thumbnail
Weather Update | ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত জারি শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতা, কোথায় কোথায় সতর্কতা জারি?
02:17
Video thumbnail
BJP MLA | সোনামুখী পুরসভার দুর্নী*তি নিয়ে বিজেপি বিধায়কের পোস্ট, পাল্টা হুঁশিয়ারি চেয়ারম্যানের
01:22
Video thumbnail
বাংলা এখন (Bangla Ekhon) | বাংলা এখনে দেখুন রাজ্যের সবচেয়ে আপডেট খবর
05:18
Video thumbnail
Iran | Syria| Ali Khamenei| খামেনির হুঙ্কার, সিরিয়া দখল করবে ইরান?
02:10:01
Video thumbnail
Allu Arjun Arrested | বিগ ব্রেকিং! গ্রেফতার অভিনেতা আল্লু অর্জুন
01:29:58
Video thumbnail
Syria | Israel | আল জোলানির হুঙ্কার , পরবর্তী টার্গেট নেতানিয়াহু? দেখুন বড় খবর
02:45:58