Placeholder canvas

Placeholder canvas
Homeকলকাতাফ্ল্যাশলাইটের আড়ালে নির্বাসিত কিশোর কুমারের প্রিয় রতন

ফ্ল্যাশলাইটের আড়ালে নির্বাসিত কিশোর কুমারের প্রিয় রতন

Follow Us :

রতন রায় নামটা চেনা চেনা লাগছে কি? না লাগাটাই স্বাভাবিক কারণ এই রতন রায় ক্যামেরার সামনে নয় ক্যামেরার পেছনের কারিগর। ক্যামেরা হাতে ছবি তুলে তাক লাগিয়েছেন প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে। এযাবৎকালীন এশিয়ার সবথেকে বড় অনুষ্ঠান hope 86। সেই অনুষ্ঠানের একক ফটোগ্রাফার ছিলেন এই রতন  রায়। তাঁর ক্যামেরার ফ্লাশ লাইটের ঝলকানি লতা মঙ্গেশকর, কিশোর কুমার, অমিতাভ বচ্চন, রাজেশ খান্না থেকে শুরু করে তৎকালীন রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু সকলের মধ্যেই পড়েছে। তৎকালীন আইপিএস আইএস অফিসারদের সঙ্গেও ওঠাবসা ছিল তাঁর। এখন তার বয়স ৭৭ বছর। নেই সেই গ্ল্যামার নেই ফ্লাশলাইটের সেই আলো। তাঁর হাতে থাকা অ্যানালগ ক্যামেরাটিও আজ আর নেই তাঁর সঙ্গ ছেড়ে দিয়েছে। আজকাল তো ডিজিটাল ক্যামেরার যুগ এই যুগে বড়ই বেমানান হয়ে পড়েছেন রতন বাবু। তাই বোধহয় আজ আর কেউ খোঁজ রাখেন না তাঁর। তিনি বেঁচে আছেন থাকলেও কিভাবে আছেন কেউ জানেন না। আমরা খোঁজ নিয়েছি চলে গিয়েছিলাম লেকটাউনে তাঁর এক কামরার  একটি ছোট্ট ফ্ল্যাটে। সেখানেই দিন গুজরান রতন রায়ের। সঙ্গে আছেন শুধুমাত্র তাঁর স্ত্রী। নিঃসন্তান দম্পতির একাকীত্বই এখন সঙ্গী। একসময় দু’হাতে রোজগার করা এই রতন রায় এতই ব্যস্ত ছিলেন কাজের জন্য যে খাবার সময় পেতেন না আর এখন টাকার অভাবে দু’বেলা কি খাবেন সেটাই ভাবেন। কেন এমন অবস্থা রতন রায়ের জানতে চাইলাম আমরা। আমাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই অনর্গল কেঁদে চলেছেন রতন বাবু। খালি বলছেন, ‘কাকে না উপকার করেছি আর এখন তাঁরাই আর কেউ আমায় চেনে না!’

কারোর মেয়ের টাকার অভাবে বিয়ে হচ্ছিল না তাঁর বিয়ে নিজে দায়িত্ব নিয়ে দিয়েছেন তিনি। কারুর বাবা শ্রাদ্ধের কাজ করার ক্ষমতা ছিল না সেই কাজ তিনি করে দিয়েছেন এমনকি ঘটা করে করে লোক খাওয়ানো সেটাও তিনি করেছেন। আর আজ তাঁরা কেউ তাঁকে চেনেন না। যখন তিনি নিজের জন্য না ভেবে মানুষের জন্য ভেবেছিলেন তখন তাঁর সামর্থ্য ছিল। ভাবেননি একটা সময় তাঁর বয়স হবে তখন কি হবে কীভাবে চলবে তাঁর। সারা জীবন ফ্রীল্যান্স ফটোগ্রাফি করেছেন। আয়ও করেছেন অনেক। সঞ্চয় যা ছিল সবটাই একটু একটু করে খরচ হয়ে গিয়েছে। কিছু নিজের জন্য বেশিরভাগটাই মানুষের জন্য। বরাবরই লোকের উপকার করার স্বভাব ছিল রতন রায়ের। আর আজ যখন তাঁর দরকার তিনি কাউকেই পাশে পাচ্ছেন না। অবস্থা এমনই সঙ্গীন হয়ে গিয়েছে দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত রতন বাবু। তাঁর স্ত্রী ও জটিল স্নায়ু রোগে ভুগছেন। এদিকে ওষুধ কেনার মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই। এভাবেই দিন গুজরান এখন বিখ্যাত এই ফটোগ্রাফার রতন রায়ের। বিগত ১০ বছর কোন কাজ করার ক্ষমতা নেই তাঁর। হাত পা জীর্ণ হয়ে গিয়েছে দুরারোগ্য ব্যাধিতে। একটা সময়ের পর মানুষের যে আর কর্মক্ষমতা থাকে না আর তিনি যেভাবে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন এভাবে যে এখন কোন মানুষই দাঁড়ায় না সেটা হয়তো বুঝতে পারেননি রতন রায়। তাই আজ বারবার কেঁদে উঠে বলছেন, ‘কিছু বলার নেই।’

রতন বাবুর মায়ের ইচ্ছা ছিল তিনি ফটোগ্রাফার হবেন। সেইমতো ফটোগ্রাফিকে নিজের প্যাশন করে এগিয়ে ছিলেন রতন রায়। কথা বলতে বলতে বারবার পুরনো স্মৃতি ফিরে আসছিল তাঁর। কত বিখ্যাত মানুষ, তাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ছবি তুলেছেন ঘুরেছেন রাইটার্স বিল্ডিং রাজভবন বিধানসভা সমস্ত কিছুরই অলিন্দে। কিন্তু আজ তাঁর বিপদে কাউকেই পাশে পাননি। না এর জন্য তিনি কাউকে দোষারোপ করছেন না। কারণ এক সময় মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা মানুষটা যে না চাইতেই সকলের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তেন নিজের কথা না ভেবেই সে আজ পর্যন্ত কারো কাছেই হাত পাতেননি। জানাননি কি দৈন্যদশায় চলছে তাঁর। এখন খালি একটাই কথা তিনি বলছেন, ‘লোকের সেবা করার জন্যই জন্মেছিলাম সে সেবার মূল্য আমি পাচ্ছি।’

এখন শুধু মৃত্যুর প্রহর গুনে দিন কাটাচ্ছেন রতন রায়। ভিক্ষাবৃত্তি তিনি করতে পারবেন না কারণ যে কাজ তিনি করতেন বিখ্যাত সব মানুষের ছবি তোলা আইপিএস আইএস অফিসারদের সঙ্গে দিনরাত যোগাযোগ স্থাপন রাখা ক্ষমতার অলিন্দে থাকা যাকে বলে, সেই জায়গা থেকে ভিক্ষা করার চাইতে মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়া ভালো বলেই জানান রতন রায়।

অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে যায় তার প্রিয় অ্যানালগ ক্যামেরাটিও বিক্রি করে দিতে হয় তাঁকে। তাঁর এক ছোটভাই মাসিক কিছু টাকা তাঁকে দেয় তাই দিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো অন্নের সংস্থান হলেও চিকিৎসা ঔষধের টাকা জোটে না।

এখন প্রশ্ন, যারা ফটোগ্রাফি করছেন তাঁদের ভবিষ্যতেও কি এই ঘটনা ঘটতে পারে? যা রতন বাবুর অবস্থাকেই আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বাস্তবটা এখনো বড়ই কঠিন?

RELATED ARTICLES

Most Popular