নয়াদিল্লি: অতিমারির জেরে ডলার কি কম পড়িতেছে? নাকি মরু-পাহাড়ে লুঠের পরিমাণ হয়েছে যথেষ্ট! তবে আর নিয়া কাম নাই, এবারে চলো পালাই।
বাঘের পিঠে সওয়ার নয়। হিংস্র নেকড়ে নিয়ে খেলার পরিণতি কী, তা মালুম পাচ্ছে শিয়া-পেন্টাগনের যুদ্ধবাজ করিতকর্মারা। সেই নেকড়ের মুখেই আফগান ভূমিকে ফেলে রেখে চম্পট দিল তারা। নিজেদের তৈরি ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’কে বাগে আনা দুঃসাধ্য কর্ম। কুখ্যাত ওসামা বিন লাদেন খতমে তাদের ব্যয় করতে হয়েছিল পাকাপাকি দশটি বছর!
তবে কি না পুরোদস্তুর কাবুল ত্যাগে লোকসান গুণতে হবে বিস্তর। তিন লক্ষ কোটি ডলারের খনিজ সম্পদ! সব কি একদিনে তুলে আনা যায়? তাই ধাপে-ধাপে চলবে এই অপসারণ পর্ব। তাই মার্কিন কলমচি ক্রিস ডোলান মাস চারেক আগেই ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, “Why the US will never leave Afghanistan.” প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বক্তব্যেও সেই এক সুর শোনা গিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আফগান ঘাঁটিতে মজুত থাকবে তাঁদের সেনা দল। তার আগে ট্রাম্পের কথাতেও তেমন আভাস ছিল।
আরও পড়ুন– গোপন তথ্যের সন্ধানেই ভারতীয় দূতাবাসে তল্লাশি তালিবানদের
কিন্তু, ২০০১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত এই বিপুল অর্থ বরাদ্দ কি আদেও আফগান মানুষজনের উপকারে এল? পরিসংখ্যান বলছে, এই কুড়ি বছরে যে বিপুল অর্থ বরাদ্দ হয়েছে তার সিংহভাগই আফগানিস্তানের উপকারে কাজে লাগেনি। রিপোর্টে প্রকাশিত, ২০০১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে আমেরিকা ৯৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৯৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার মার্কিন ) বিনিয়োগ করেছিল আফগানিস্তান পুনর্গঠনে। কিন্তু, ৮১৬ বিলিয়ন, বলা ভাল দেশের ৮৬ শতাংশ মানুষের হদয় জয় করতে পারেনি এই মূল্য। নিরাপত্তা খাতে যে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছিল, তাও দেশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারেনি।
আরও পড়ুন- তালিবানের আফগানিস্তান দখল, নাম না করে পাকিস্তানকে নিশানা জয়শঙ্করের
বেশির ভাগ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে জঙ্গি বিরোধী অভিযানে এবং মার্কিন সেনাদের খাদ্য, পোশাক, চিকিৎসা, বিশেষ ভাতা এবং অন্য সুবিধার যোগান দিতে। আফগানিস্তানে যে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তার ১৬ শতাংশ বা প্রায় ১৩৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছে পুননির্মাণ প্রচেষ্টায়। এর অর্ধেক ব্যয় করা হয়েছে আফগান নিরাপত্তা বাহিনী পুনর্গঠনে। বাকি অর্থ ব্যয় করা হয়েছে শাসন এবং অবকাঠামো বিনির্মাণ, অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তা এবং মাদক বিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণে। স্পেশ্যাল আই জি জেফ্রি ডি স্যাক্স আফগান পুনর্গঠন সংক্রান্ত রিপোর্টে এই তথ্য তুলে ধরেছেন।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০২ সাল থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাদক বিরোধী প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গড়ে দিনে ১.৫ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্র ব্যয় করেছে। কিন্তু জাতিসংঘের হিসাব বলছে, ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি এলাকা জুড়ে আফিমের পপি চাষ করা হয়েছে। ফলে এই খাতে মার্কিনীদের অর্থ একদমই অপব্যবহার হয়েছে অথবা কোনও কাজেই আসেনি।
যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে যত টাকা খরচ করেছে তার ৬০ শতাংশের বেশি খরচ করেছে আফগান সেনা এবং নিরাপত্তা বাহিনী গঠনে। গত বছর পর্যন্ত এই খাতে যুক্তরাষ্ট্রের মোট খরচ ছিল প্রায় ৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। এ বছর বাড়তি ৩৩০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে আফগান সেনাবাহিনীকে। কিন্তু সেই সেনাবাহিনী তালিবানদের সামনে দাঁড়াতেই পারছে না। কারণ, ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এতদিন সৈন্য সংখ্যা বেশি দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে৷ কিন্তু বিপদের সময় সেই সৈন্য কাজেই আসছে না।