রাণাঘাট: গত লোকসভা (Loksabha) এবং বিধামসভা (Legislative Assembly) ভোটে নদিয়া জেলায় তৃণমূল (TMC) খুব একটা ভালো ফল করতে পারেনি। রানাঘাট লোকসভা (Ranaghat Loksabha constituency ) কেন্দ্রে ভোটে জিতেছে বিজেপি। রানাঘাট-সহ জেলার বিস্তীর্ণ অংশে মতুয়া সম্প্রদায়ের (Matua community) একটা বড় প্রভাব আছে। সেই মতুয়াদের ভোট লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির (BJP) ঘরে গিয়েছে। পাশাপাশি দলের খেয়োখেয়িও (internal conflict) নদিয়ায় তৃণমূলের (Nadia TMC) বিপর্যয় একটা বড় কারণ। এই আবহে মতুয়া-সহ নদিয়ার মানুষের মন পেতে মরিয়া তৃণমূল। শনিবার রানাঘাটে দলের এক বিশাল সভায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (national general secretary, AITC) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) নানা প্রতিশ্রুতি দিলেন, দলীয় নেতৃত্বের একাংশকে চেতাবনি দিলেন। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, দুর্নীতি, ঠিকাদারি করলে তৃণমূল করা যাবে না। অভিষেক খোলাখুলি বললেন, দলের একাংশের খারাপ আচরণের জন্য এখানে তৃণমূল লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে হেরেছে।
কাঁথির জনসভায় (Contai rally) তিনি মঞ্চ থেকেই দলের একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান (gram panchayet pradhan), উপপ্রধান(deputy pradhan) এবং অঞ্চল সভাপতিকে ইস্তফা দিতে নির্দেশ দেন। অভিযোগ, ওই পঞ্চায়েতে তপসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের জন্য কোনও কাজ হয়নি। অভিষেকের সভার পরের দিনই ওই তিনজন পদত্যাগ করেন। এদিন রানাঘাটেও অভিষেক মানুষের মন জয় করার জন্য সেই একই পদ্ধতি অবলম্বন করেন। স্থানীয় এক প্রধানের নাম করেন। ওই প্রধান অবশ্য সভায় ছিলেন না। তাঁর নাম ধরে তৃণমূল নেতা বলেন, আপনি অমুক গ্রামে শেষ কবে গিয়েছেন। যাননি তো? আপনাকে বলছি, একদিনের মধ্যে আমার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। মানুষ যদি আপনাকে সার্টিফিকেট না দেয়, তবে আপনার প্রধানের চেয়ারে থাকার অধিকার নেই। তিনি জনতার কাছেও জানতে চান ওই প্রধানের ভূমিকা সম্পর্কে। জনতা চিতকার করে জানান দেয়, ওই প্রধান কিছুই করেননি।
আরও পড়ুন: গায়ের জোরে পঞ্চায়েত ভোটে করালে ১ ঘণ্টার মধ্যে তাড়িয়ে দেব, হুঁশিয়ারি অভিষেকের
এখানেই শেষ নয়। অভিষেক মঞ্চে এবং মাঠে উপস্থিত পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধানদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা গ্রামে গ্রামে যান, মানুষের দাওয়ায় যান, তাদের সঙ্গে কথা বলুন, তাদের সঙ্গে রাতের খাওয়া সারুন, তাদের অভাব অভিযোগ মন দিয়ে শুনুন। পঞ্চায়েতের টিকিট পেতে হলে কলকাতার কোনও দাদা, দিদিকে ধরে লাভ নেই। কাজ করলে, স্বচ্ছ ভূমিকা থাকলে টিকিট এমনিতেই পাবেন।
অন্যান্য সভায় অভিষেক বিজেপি(BJP), সিবিআই(CBI), ইডিকে(ED) তুলোধনা করেন। শনিবার রানাঘাটে অবশ্য বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে নিয়ে খুব বেশি কথা বলেননি। বরং নিজের দলের নেতাদের প্রতি হুঁশিয়ারি ছিল তাঁর ভাষণের সিংহভাগ জুড়ে। একই সঙ্গে মতুয়াদের মন পাওয়ারও চেষ্টা করেন তিনি। মমতার সুরেই তিনি বলেন, মতুয়ারা সব নির্বাচনে ভোট দেন। তাঁদের ছেলেমেয়েরা স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা করে। মতুয়ারা সকলেই নাগরিক। তাদের আবার নতুন করে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তাঁর অভিয়োগ, ২০১৯ সালের লোকসভা এবং ২০২১ সালের বিধানসবা ভোটে বিজেপি নাগরিকত্বের ইস্যুতে মতুয়াদের ভুল বুঝিয়ে ভোট নিয়েছিল। জনতার উদ্দেশে অভিষেকের কাতর আবেদন, আগামিদিনে আর বিজেপির প্রলোভনে পা দেবেন না, তৃণমূলকে ভুল বুঝবেন না। এবার তৃণমূলকে সুযোগ দিন