ক’দিন আগে মদন মিত্র প্রশ্নটা তুলে দিয়েছিলেন, সে প্রশ্ন তোলার অধিকার ওনার আছে কি না তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু সরকারি হাসপাতাল, যা নাকি একটু হলেও ভালো হয়ে উঠছিল, রোগীদের মুখেই শোনা যাচ্ছিল কিছু উন্নতির কথা। দৃশ্যতই সাফসুতরা হয়ে উঠছিল এমন সব হাসপাতাল যা সন্ধের পর হয়ে দাঁড়াত সমাজ-বিরোধীদের আখড়া। ধরুন বাঙুর হাসপাতালের কথা, বা যাদবপুর টিবি হাসপাতালের কথা, এক নরক হয়েছিল, যা আজ অনেক পরিষ্কার, অনেক বেশি মানুষ সেখানে যাচ্ছেন, চিকিৎসা পাচ্ছেন। জেলাতে বা বেশ কিছু গ্রামীণ হাসপাতালেও ছবিটা আলাদা, কিন্তু এই পরিবর্তন বোধহয় সব্বার সহ্য হচ্ছে না, অনেক বাস্তুঘুঘুর বাসা ভাঙা পড়েছে, তারা আবার সক্রিয়। আবার পিজি থেকে ন্যাশন্যাল মেডিক্যাল, আর জি কর থেকে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে ময়লা জমছে, দালালরা ঘোরাফেরা শুরু করেছে, তাদের টাকা দিলে বেড মিলছে, আবার লাইন দিয়ে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভরা হাজির। ডাক্তারবাবুদের সময়ে আসা বন্ধ, খানিক সময় কাটিয়েই তাঁরা চলে যাচ্ছেন তাঁদের চেম্বারে। কোটি কোটি টাকার দামি মেশিনপত্র পড়ে আছে, সেগুলোতে কাজ হচ্ছে না। ডেপুটি সুপার, সুপারদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না, পিজির ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় পারলে সাফাইকর্মীদের সঙ্গে ইংরিজিতে কথা বলেন, তাঁর ঘরে আড্ডা চলছে, হাজির থাকছেন যাঁরা তাঁরা নাকি বিদুষী সুন্দরী। মোদ্দা কথা হল যে হাসপাতালের ভোল পাল্টাচ্ছিল দ্রুতগতিতে সেগুলোই আবার পিছন পানে হাঁটা শুরু করেছে। আজ সেটা নিয়েই আমাদের বিষয় আজকে, হাসপাতাল না নরক?
সরকারি চাকরি ছাড়া সরকারের সব কিছু খারাপ, এটাই চলতি ধারণা। সেই ধারণার কিছু বিপরীত মতামত আমরা দেখেছি। এ রাজ্যে তৃণমূল সরকার আসার পরে চাকরি, বিশেষ করে স্কুলে চাকরি নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে, ঢালাও দুর্নীতি। কোনও শাক দিয়েই সে পচা মাছের দুর্গন্ধ ঢাকা যাচ্ছে না। ঢাকা যাচ্ছে না স্থানীয় নেতাদের ঔদ্ধত্য, দুর্নীতি। কিন্তু কিছু জায়গায় কাজ তো হয়েছে। যেমন ধরুন গ্রামীণ সড়কের হাল বদলে গেছে, বদলেছে বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থা। এমনকী গ্রামের দিকেও বিদ্যুৎ গেলে তা ফিরে আসছে ঘণ্টা দুই তিনের মধ্যে, বিদ্যুৎ দফতরে মানুষজন কাজ করছে। কাজ হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধায়ের বিভিন্ন প্রকল্পে, গ্রামে গেলেই সবুজ সাথীর সাইকেল দেখা যাচ্ছে, টাকা পাচ্ছেন মহিলারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প থেকে, রাজ্য জুড়ে পুলিশ নিষ্ক্রিয়? না সেকথা বলা যাবে না যদিও পুলিশি ব্যবস্থায় আরও জোর দেওয়া দরকার। কিন্তু এসবের মাঝেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে বেশ ভালো কাজ করেছে সরকার। প্রসূতি মায়েরা খাবার পাচ্ছে, জন্ম নেওয়া শিশুর মৃত্যুহার দারুণভাবে কমেছে, গ্রামীণ হাসপাতালে টিকা দেওয়া, আশা কর্মীদের কাজ ভালো হয়েছে, গ্রামীণ হাসপাতাল এখন আর নোংরা নয়। অনেক ছোট হাসপাতালের ভোল পালটে গিয়েছে। এই কলকাতার যাদবপুর টিবি হাসপাতাল, বেহালার বিদ্যাসাগর হাসপাতাল, টালিগঞ্জে বাঙুর হাসপাতাল সত্যিই ভালো হয়েছে।
আরও পড়ুন: Aajke | বায়রন বোল্ড আউট?
ভালো হতে শুরু করেছিল বড় হাসপাতাল, জেলা হাসপাতালগুলো। কিন্তু হঠাৎ তা নিম্নমুখী। সেখানে আবার নোংরা জমছে, দালাল ঘুরছে, ওষুধ মিলছে না, যন্ত্রপাতি খারাপ ইত্যাদি। কেন? পাশাপাশি কোটি কোটি টাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে অক্সিজেন জোগানোর জন্য? তাদের ব্যবসা যাতে ক্রমশঃ বেড়ে উঠতে পারে, তার জন্য? কারা কাজ করছেন এই বড় সরকারি হাসপাতালের মাথায় বসে? কোথাও তাঁদের কোনও হিডেন এজেন্ডা কাজ করছে? কোটি টাকার যে মেশিন এই বড় হাসপাতালে পড়ে আছে, সেই মেশিন নিয়ে কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে তিন শিফট কাজ চলছে। তাহলে সরকারি হাসপাতালে তা পড়ে আছে কেন? কোন বাস্তুঘুঘুরা এর পেছনে আছে? পেছনে কি শাসকদলের হাত নেই? এ প্রশ্ন তো উঠবেই। কেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে অত্যন্ত গরিব ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর ওষুধ কিনতে হচ্ছে? এরকম হাজারো প্রশ্ন তো উঠছেই। সবচেয়ে বড় কথা এক ভালো হয়ে ওঠার পথচলা আচমকা এমন থমকে গেল কেন, তা তো জানা দরকার। আমরা মানুষকে প্রশ্ন করার সময় জিজ্ঞেস করেছিলাম, একটু ভালো হয়ে ওঠা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কি আবার আগের জঘন্য অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।
একসময়, বেহালায় গেলেই শুনতে পেতেন, সব সাগর বারবার বিদ্যাসাগর একবার। বিদ্যাসাগরে ভর্তি হলে ফিরে আসা যায় না এটাই ছিল সাধারণ ধারণা। আজ সেই হাসপাতালে রোগীর ভিড়, বেড অপ্রতুল। এইভাবেই রাজ্যের অনেক ছোট বড় হাসপাতাল বদলাচ্ছিল, কিন্তু কিছু স্বার্থ নয়, অনেক বড় স্বার্থ, অনেক টাকার ব্যবসা জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে, সরকারি হাসপাতাল বাড়লে বেসরকারি হাসপাতালের মালিকদের কী হবে? সেই স্বার্থে আঘাত পড়েছে বলেই কি ভেতর থেকে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে সরকারি হাসপাতালগুলোকে? গতকাল সরকারের স্বাস্থ্য সচিব একটা পরিষ্কার কথা বলেছেন, যা চেয়েছেন দিয়েছি এবার আমরা যা চাইছি সেটা ডেলিভার করুন, মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবা পাক। সরকারের এই কড়া মনোভাব কেবল দেখানোর জন্য কি না সেদিকে আমরাও নজর রাখব, আপনাদের কথা আপনারাও জানান। আজ এই পর্যন্তই।