সংবিধানের শুরুতেই we the people of India ইত্যাদি ইত্যাদি যা লেখা আছে যাকে আমরা preamble বা সংবিধানের ভূমিকা বলি, তার মোদ্দা কথা হল আমরা মানে ভারতবাসীরা মানে মোদি-অমিত শাহ-মমতা-রাহুল বাজাজ বা কিরণ শ মজুমদার এবং আমাদের মত রামাকান্ত শ্যামাকান্তরা যে দেশে বাস করি তা হল এক গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এবং কে না জানে গনতন্ত্র মানে by the people, for the people and of the people, মানুষের জন্য, মানুষের দ্বারা মানুষের এক ব্যবস্থা। সেই গণতন্ত্রের আবার একটা নয় দুটো নয় চার চারটে স্তম্ভ আছে। যার ওপরে ভর দিয়ে গণতন্ত্র দাঁড়িয়ে থাকে।
প্রথমটা হল আইন সভা, মানে বিধানসভা, লোকসভা, রাজ্যসভা। এরা আইন তৈরি করবেন। ঠিক করবেন আগামী দিনগুলোতে অর্থনীতি কেমন ভাবে চলবে, বুলেট ট্রেন চলবে না কৃষকদের সেচপ্রকল্পে খরচ করা হবে, মূর্তি গড়া হবে না স্কুল খোলা হবে, রামমন্দির তৈরি করা হবে না হাসপাতাল খোলা হবে।
দ্বিতীয় স্তম্ভটা হল বিচার ব্যবস্থা। নিম্ন আদালত, উচ্চ আদালত, সর্বোচ্চ আদালত। এরা দেখবেন, বিচার করবেন আইন ঠিক ভাবে পালন হচ্ছে কিনা, কেউ দোষ করলে তার শাস্তি বিধান করবেন। সংসদে বসেই কোনও সাংসদ বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোনও নেতা বা কোনও হরিদাস পাল বলে দিতে পারেন না যে ও দোষ করেছে ওকে ফাঁসি দাও, পুড়িয়ে মারো, লটকে দাও। বিচারকদের রায় আপনার ভালো লাগতে পারে নাও লাগতে পারে, আপনি তার বিরোধিতাও করতে পারেন বা বার বিচার করার আবেদন ও করতে পারেন কিন্তু বিচারটা আপনি আমি করতে পারি না।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব-১২)
তৃতীয় স্তম্ভ হল প্রশাসন। পুলিস আমলা সরকারি কর্মচারী যারা এই আইন কে প্রয়োগ করবেন। আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন, মানুষকে নিরাপত্তা দেবেন। জেলার ডিএম থেকে এসপি, বিডিও দারোগা এই স্তম্ভের অংশ।
চতুর্থ স্তম্ভ হল মিডিয়া, প্রেস, সংবাদমাধ্যম। তাদের কাজ হল সরকারকে, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমলা পুলিশকে প্রশ্ন করা, তাদের ভুল সবার সামনে আনা। দুর্নীতি থেকে ভাল কাজ মানুষের সামনে আনা। সেই প্রশ্ন করার অধিকার তাদের সংবিধান দিয়েছে।
আজ স্বাধীনতার ৭২ বছর পরে প্রত্যেকটা স্তম্ভ প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে। মজার কথা হল যাদের প্রশ্ন করার কথা ছিল, যাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার কথা ছিল, দুর্নীতিকে অন্যায়কে মানুষের সামনে তুলে ধরার কথা ছিল, সবলের অত্যাচারের বিরুদ্ধে, দুর্বলের পাশে দাঁড়ানোর কথা ছিল তারা সরকারের দেওয়া ললিপপ চুষছে, তারা শাসক দলের আঙুলের ডগায় নাচছে, তারা শিল্পপতিদের ইশারাতে কথা বলছে। যে দু-একজন সত্যি কথা বলার চেষ্টা করছে তাদের গলা চেপে ধরা হচ্ছে। পুলিশ থেকে ইনকাম ট্যাক্স, ইডি থেকে সিবিআই লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রী সান্ত্রীদের গুনগান করেই চতুর্থ স্তম্ভের কাটছে সময়। The nation wants to know বলে প্রশ্ন করা হচ্ছে বিরোধী দলগুলোকে, শাসক দলের মহীমা কীর্তন চলছে অষ্টপ্রহর। আর যদি তা না করো? তাহলে সামনের উদাহরণ সিদ্দিকি কাপ্পান, উদাহরণ নিউজ ক্লিক এর সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থ, ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলির কনসালট্যান্ট এডিটর গোউতম নভলাখা, উদাহরণ মণিপুরের ধানাবির মাইবাম, উদাহরণ আমাদের সম্পাদক, কলকাতা টিভির সম্পাদক কৌস্তুভ রায়।
দেখুন ভিডিও: