কাজের অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও এবার পুজোতে কলকাতায় মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর মালবিকার মিউজিক ভিডিয়ো লঞ্চ করেছে৷ পুজোয় এবার নতুন চমক তাঁর ব়্যাপ ভিডিও ‘জি লেনে দো’৷ ইতিমধ্যেই সুপার হিট হয়েছে। তো এবার তিনি পুজোয় কি করছেন? এসব নিয়েই কলকাতা টিভি অনলাইনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
প্রশ্ন: তোমার যে নতুন গানের ভিডিয়োটা লঞ্চ হয়েছে, সেটা দর্শক কতটা গ্রহণ করছে? কি চিন্তাভাবনা করে এগোলে এই কাজটার জন্য?
মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়: প্রথমেই আমি গুড নিউজটা দেব। লঞ্চের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই ১০ লাখ ভিউ হয়েছিল৷ এখন তো আরও বেড়ে গিয়েছে। এটা আমার কাছে একেবারে আনএক্সপেক্টেড। আমিও ভাবতেও পারিনি একেবারে। ২৭ তারিখ যখন এটা লঞ্চ হয়, তখন আমার একটা বন্ধুকে আমি বলছিলাম, আগামিকাল পর্যন্ত (পড়ুন ২৮ সেপ্টেম্বর) যদি একলাখ ভিউ হয়, তাহলে এই মিউজিক ভিডিয়োটা অনেক দূর যাবে। কিন্তু সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখলাম ওয়ান মিলিয়ন ভিউ হয়ে গিয়েছে। ১০ হাজার লাইক হয়েছে ইউটিউবে। দেড় হাজারেরও বেশি কমেন্ট আছে। তার মধ্যে আমি যতগুলো কমেন্ট পড়েছি, খুবই ভালো ভালো কমেন্ট। তো আমার কাছে এটা আনএক্সপেক্টেড হ্যাপেনিং। এটার জন্য আমি হ্যাপি।
প্রশ্ন: পুজোর আগে একটা বোনাস গিফট?
মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়: হ্যাঁ। প্রথমত এটা একটা এক্সপেরিমেন্টাল বিষয়। একটা গান গাওয়া আর আর একটা ব়্যাপ করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যেহেতু গানটার মধ্যে একটা সোশ্যাল মেসেজ আছে। আমি সবসময় বলি, আমার এই গানটার মধ্যে দিয়ে যে মেসেজটা দিতে চাইছি, মেয়েদের কোনও দিনই নিজেদরকে কোনওভাবই দুর্বল ভাবা উচিত নয়। আর যে কোনও মেয়েই রিলেশনটাকে সবসময় বেঁধে রাখার চেষ্টা করে, আগলে রাখার চেষ্টা করে। যেমন ধরো – আমার বর আমাকে একটা থাপ্পড় মারল, ঠিক আছে আমার বর তো, ঠিক আছে, সমাজ কি বলবে, তার জন্য থাক থাক, বাড়িতে মার খেয়ে নিয়েছি, কোনও অসুবিধা নেই, বলব না। প্রতিটা জায়গাতেই হয়। রিক্সাওয়ালার বাড়ি থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই। আমার এই গানটাতে যা দেখানো হয়েছে, সেখানে মেয়েটি পপ স্টার। সি ইজ আ সেলিব্রেটি। তার ক্ষেত্রেও এটা হচ্ছে। এখানে এই গানটাতে মেয়েটা কনসার্ট করতে যাচ্ছে, সেই সময়ও তাকে অ্যাবিউজ করা হচ্ছে, তার আগেও করা হয়েছে। মেয়েটা রিলেশনশিপ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। বাট ফাইনালি সে বলছে, না। আজ মুঝে থোড়া জি লেনে দো। মানে সে ওই রিলেশিপটাকে গানের মাধ্যমে, ব়্যাপিংয়ের মাধ্যমে, সে বলছে, অনেক হয়েছে, আর নয়। আজকে আমার তোমার সঙ্গে সব শেষ, আর তোমাকে আমার দরকার নেই। আই লভ মাইসেলফ মোর দ্যান ইউ।
প্রশ্ন: তুমি দর্শকদের সামনে নিজেকে ব়্যাপার হিসেবে প্রকাশ করছ, সেটা লোকজন কতটা এক্সপেক্ট করছে আর তুমি নিজেকে কতটা তৈরি করেছ?
মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়: আমার মিউজিক ভিডিয়োগুলো তুমি যদি দেখে থাকো, দেখবে আমার প্রতিটা গান ডিফারেন্ট ফ্রম ইচ আদার। আমি কখনই রিস্ক নিতে ভয় পাই না এই ভেবে যে আমাকে দর্শকরা অ্যাকসেপ্ট করবে তো! আমি দেখি যে গোটা দুনিয়ায় যাঁরা আছেন, আজ অনেকে ব়্যাপ করছেন, তাঁরা কোথা থেকে ফেমাস হয়েছেন, ভারতীয়রাও তো তাঁদের চেনেন, ভারতীয় তরুণ প্রজন্ম তাঁদের জন্য পাগল। কিন্তু আমাদের এখানে আমরা যে ভয়টা পাই, দর্শকরা আমাদের অ্যাকসেপ্ট করবে তো! যদি সাকসেফুল না হই, তখন কি হবে?
প্রশ্ন: এর সঙ্গে তো একটা বাজেটও থাকে?
মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়: অবশ্যই বাজেট থাকে। আমি এখানে উদাহরণ দিয়ে বলছি, এই যে ব্রহ্মাস্ত্র বানানো হল, এই যে লাল সিং চাড্ডা বানানো হল, চার বছর ধরে বানাতে ৪০০ কোটি টাকা খরচা করা হয়েছে। যাঁরা ক্রিয়েটিভ মানুষ হন, তাঁরা ভাবে যে আমরা একবছর কোনও কাজ করব না। কিন্তু যখন একটা কাজ করব, চাইব যে আজ থেকে পাঁচ বছর পরে হলেও লোকজন বলবে যে সময়ের থেকে এগিয়ে থেকে কাজ করেছে। সেক্ষেত্রে আমি নাম অর্জন করব। লোকে বলবে, ও কিন্তু পাঁচ বছর আগেই এই কাজটা করে দিয়েছে। সেই হিসেবে লোকে আমাকে মনে রাখবে। আমি অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম, নতুন কিছু একটা করব। আমার ভিডিয়ো যে প্রোডাকশন হাউস প্রোডিউস করেছে, তাদের সঙ্গে অনেক দিন ধরেই কথা হচ্ছিল। বম্বেতে আমাদেরকে ইন্ডিপেন্ডেন্টলি কাজ করতে দেওয়া হয়। নতুন নতুন অনেক কাজ থাকে। কলকাতার মার্কেট থেকে বম্বের মার্কেট বড়। রিস্ক নিয়ে কাজ করতে হয়। যদি খুব ভালো হয়, তাহলে ভাইরাল হয়ে যাবে। আর এটা ভেবেই কাজ করা শুরু হয়েছিল। আজকে যখন আমার এই গানটা দেখছি, লোকজনের থেকে দুর্দান্ত রেসপন্স পাচ্ছি। প্রথম দিন থেকেই আমি আশাবাদী ছিলাম। তোমার মতো আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছে, মেয়ে ব়্যাপার আবার হয় নাকি! ছেলেরা ব়্যাপ করে। আপনার সঙ্গে হিরো কে আছেন? অনেক কিছু প্রশ্ন করা হয়েছে। আমি তাঁদেরকে একটাই জবাব দিয়েছি, মার্কিন যাঁরা পপ স্টার হন, তাঁদেরকে কখনও জিজ্ঞাসা করা হয় না, যেমন শাকিরা, সেলিনা গোমস যখন মিউজিক ভিডিও বের করে, তখন তাঁদেরকে তো জিজ্ঞাসা করা হয় না? তাঁরা কিন্তু প্রথম দিন থেকেই একা মিউজিক ভিডিয়ো বের করছেন। তাঁদের মধ্যে কিন্তু সেই কনফিডেন্সটা ছিল। আজ যদি সেই আত্মবিশ্বাসটা আমাদের মধ্যে আনতে পারি, আমার একটা ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে গেলে, আরও দশটা মেয়ে আমাকে দেখে ইন্সপায়ার হবে।
প্রশ্ন: নতুন জেনারেশনকে ইন্সপায়ার করা তো একটা বড় বিষয়?
মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়: একেবারেই, এটা আমাদের দায়িত্ব। এই যেমন তোমাদের সংবাদমাধ্যমে একটা খবর লেখা। তুমি যদি জানো যে আমি এই খবরটা লিখলে আরও পাঁচজন ইন্সপায়ার হবে, তাহলে তুমি লিখবে। আমিও অনেকের থেকে ইন্সাপায়ার হয়েছি। আমার ইন্সপিরেশন হল জেনিফার লোপেজ। সেই মানুষটা একাই অভিনয় করছেন, গান লিখছেন, পপ স্টার, ডিরেকশন দিচ্ছেন, প্রোডাকশন হাউস সামলাচ্ছেন, তাহলে আমি কেন করতে পারব না। আমিও কেন তাঁদের মতো ভাবব না। তাঁরাই কেন একা আইডল হয়ে থাকবেন? আমিও তো অন্যদের আইডল হতে পারি। আমি কেন একটা মনোটোনাস জিনিস নিয়ে পড়ে থাকব। রোমান্টিক গান করবো। আমরা রিপ্রাইজ গান দেখছি, রিমিক্স গান দেখছি। আজকে এই যে ফাল্গুনী পাঠককে নিয়ে কথা হচ্ছে। আমরা নব্বইয়ের দশকে ফাল্গুনী পাঠককে পেয়েছিলাম। তখন তাঁর আশেপাশে কেউ ছিল না। আমরা তখন ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু আজ যখন রিমিক্স হচ্ছে, আমরা বলছি খারাপ হচ্ছে। কেন? তিনিও তো একটা সময়ে ভেবেছিলেন, আমি নতুন কিছু একটা দেব। তিনি দিয়েছিলেন, আমরা সেটাকে ভালোবেসেছিলাম। একটা নতুনত্ব ছিল। আমাদের কাছে সেটা একটা নস্টালজিয়া। বিষয়টা হলো, রিস্ক নেওয়া উচিত। আমরা প্রতিদিনই রিস্ক নিই। এটা ব্যবসাদাররা ভালো বোঝেন। আমাদের কাছে বিষয় হলো ক্রিয়েটিভ জিনিসটা লোকজন, সমাজের কাছে পৌঁছে দেব। তাতে আর পাঁচটা মানুষের যদি ভালো হয়, ভালো মানে আর্থিকভাবে নয়, মানসিক দিক থেকে, সেটাই আমার কাছে পাওনা।
প্রশ্ন: গান, না অভিনয়, কোনটাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছ?
মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়: অভিনয়টাই আমার কাছে সবসময় বেশি প্রাধান্যের। কিন্তু আমি এটা বলব না যে আমি গানটাকে ফোকাস করছি। আমার কাছে যেমন সুযোগ আসছে, তেমন কাজ করছি। এই যে আজ আমি এখানে একটা অ্যাড শ্যুটের জন্য এসেছি, এখানে আমাকে যাঁরা ডেকেছেন, তাঁরা আমাকে অভিনেত্রী হিসেবে চেনেন, অভিনয় করার জন্য ডেকেছেন, আমাকে তাঁরা সেভাবেই চেনেন। আবার কালকে যখন তুমি আমাকে কখনও যদি ফোন করো, তখন হয়ত আমি কোনও কনসার্ট করছি। সেখানে আমাকে তাঁরা গায়িকা হিসেবে ভালোবাসছেন।
প্রশ্ন: মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন ভার্সাটাইল মানুষ, কি তাই তো?
মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (খানিকটা হেসে): হ্যাঁ, অবশ্যই। আমি এভাবেই থাকতে চাই, যাতে সবসময় ব্যস্ত থাকি। আর এই ব্যস্ততার মধ্যে আমি যেন আমার ক্রিয়েটিভিটিটাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারি।
প্রশ্ন: মালবিকা, তোমার পুজোর প্ল্যানিং কি?
মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়: পুজোতে আমি কলকাতাতেই আছি। বাড়িতে ফ্যামিলির সঙ্গে অনেক প্ল্যান আছে। অনেকে আত্মীয়ের বাড়িতে যেতে হবে, বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে যেতে হবে, আমার বাড়িতে অনেকে আসবে। এইভাবেই চলবে।
প্রশ্ন: তাহলে কি ওয়েস্টার্ন ড্রেসেই পুজো কাটাবে?
মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (হাসতে হাসতে): না, ধার করে পরতে হবে। আমার বোনের থেকে নিতে হবে। আমার বাড়িতে আমি সবচেয়ে রোগা। তাই ধার করা ব্লাউজ বাড়িতে কাউকে সেলাই করে দিতে হবে।
প্রশ্ন: রোগা, নাকি মেইন্টেন করো, কোনটা বলবে?
মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়: মেইন্টেইনড। (বলেই হাসি)
প্রশ্ন: এবার পুজোর ডায়েটে কি থাকছে?
মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়: খাওয়া-দাওয়া দারুন থাকবে। আমি মাকে বলেও দিয়েছি, পোলাও থেকে শুরু করে পাঁঠার মাংস, সব থাকবে। আর পুজোটাকে ভালো করে এনজয় করব। গত ২ বছর যা গেল। কুড়ি আর একুশ, সেভাবে মজাই করতে পারিনি। কারও বাড়িতে যেতে পারিনি।
প্রশ্ন: প্যান্ডাল হপিং হবে না?
মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়: বালিগঞ্জের মতো কিছু প্যান্ডালে যাব, কোথাও আবার ইনভিটেশন আছে। সেসব জায়গায় যেতে হবে। সল্টলেকে একটা ইনভিটেশন আছে, আধ ঘণ্টার মতো যাওয়া, এরকম অনেক আছে। তবে প্যান্ডাল হপিংয়ের চেয়ে আমার বেশি ভালোলাগে রাস্তায় বেরনো, চারিদিকে গান চলছে, হৈহৈ হচ্ছে। রাস্তায় ভিড়। তার মধ্যে রাত্রিবেলা হঠাৎ করে চলে গেলাম। এই বিষয়গুলো আমাকে টানে, প্ল্যানিং করে আমি কোনওদিনই বেরোইনি। হঠাৎ করে কোনও কিছু হওয়াটাই আমার কাছে সারপ্রাইজিং।
প্রশ্ন: এখন কোন জিনিসটা হয় না, মানে মালবিকার পরিচিতি পাওয়ার পর যেটা হয় না? কোন স্মৃতিটা সবচেয়ে বেশি মনে ওঠে?
মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়: আমি এই লাইফটাকে এনজয় করি। আমি খুব ছোট থেকে কাজ করছি। সিনেমায় অভিনয় করার পর থেকেই লোকজন আমাকে অভিনেত্রী এসেছে বলে দেখাত। তোমাদের চ্যানেলে বসেছি, বিভিন্ন চ্যানেলে মুখ দেখিয়েছি পঞ্চমী, ষষ্ঠীতে, এইভাবেই দিন কেটেছে। যতদিন আর কি বম্বে চলে যাইনি। আমি এটাকে খুব বেশি এনজয় করেছি। আমি প্রিভিলেজটাকে কখনই এভাবে দেখিনি, এ বাবা, আমি যদি ওইরকম থাকতে পারতাম! কারণ আমি তো এটাই চেয়েছিলাম। তার জন্যই তো এত খাটছি। যেমন শাহরুখ খানকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপ রোড পে খড়ে হোকে পানিপুরি নহি খা পাতে, ক্যায়া আপ ইয়ে মিস নহি করতে? আমি মিস করি না, কারণ আমি যদি ওটাই চাইতাম, তাহলে আমি এত খাটতাম কেন? আমি এত খেটেছি তো স্টার হওয়ার জন্যই। অনেক পরিচিতি পাওয়ার জন্য। লোকে আমাকে নিয়ে ভাববে। (খানিকটা হেসে) আমি যাতে বাইরে সানগ্লাস পরে বাইরে বেরতে পারি। আমি এটাকে প্রতি মুহূর্তেই এনজয় করি। শুনে হয়ত বলবে, ও আচ্ছা…! তবে আমি কিন্তু একঘেঁয়ে উত্তর দেব না। সবাই যেটা বলেন, আমি সেটা বলতে পারব না। কারণ আমি এটার জন্যই খেটেছি। দিনের পর দিন খাটছি। আমি আরও অনেক বড় হতে চাই। আমি আরও অনেক কাজ করতে চাই।
কলকাত টিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যাকে অনেক শুভেচ্ছা