এখনকার প্রজন্ম কেনাকাটি করতে ঝাঁ চকচকে শপিংমলের দিকেই বেশি ঝুঁকছে। আবার বছরের পর বছর ধরে এক স্তরের মানুষজন ভালোবাসেন দরদাম করে কেনাকাটি করতে। কেনাকাটির সঙ্গে সঙ্গে বাজার ঘুরে দেখার আলাদা আনন্দও রয়েছে। ভারতে যে কত রকমের বাজার আছে তা গুনে শেষ করা যায় না। এক একটা বাজারের এর একটা অভিনবত্বই রয়েছে। সেই সব কিছুর টানেই সবাই বারবার ছুটে যায় এই সব বাজারে। দেখে
চোর বাজার-
শুরুতে নাম ছিল শোর বাজার তারপর নাম পরিবর্তিত হয়ে যায় চোর বাজার। অনেকের ধরানা চোরাই মাল বিক্রি হত বলে চোর বাজার নাম হয়েছে।ইতিহাস তো তা বলছে না। এই চোর বাজারের অস্তিত্ব দেড়শো বছরের বেশি। শুরুতে নাম ছিল শোর বাজার, কারণ এই বাজারে হই-হট্টগোল হত খুব বেশি। ইংরেজ আমলে ব্রিটিশরা বাজারের নাম ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারতেন না। ক্রমে অপভ্রংশ হয়ে শোর বাজার চোর বাজারে পরিণত হয়। আপনিও এই বাজার থেকে যেকোনো কিছু কিনতে পারেন। এমন কোনও জিনিস নেই যা আপনি খুঁজে পাবেন না এই বাজারে।
সর্দার মার্কেট, যোধপুর- যোধপুরের (Jodhpur) বৃহত্তম এবং ব্যস্ততম মার্কেটপ্লেস, সর্দার মার্কেট (Sardar Market)। এখানেও আপনি সব কিছু পাবেন। বিয়ের জিনিস থেকে মশলা, প্রাচীন জিনিসপত্র, জামাকাপড়ও এখান পাবেন। স্থানীয় পণ্য বিক্রি করার সময় রাজস্থানের (Rajasthan) ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে, আপনি অবশ্যই এই জায়গাটি দেখতে পছন্দ করবেন। এখান থেকে রাজস্থানী স্টাইলের জুতো পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের বিষয়।
জোহরি বাজার, জয়পুর-
জোহরি বাজার (Johari Bazar) নামের আক্ষরিক অর্থ “গহনা বাজার”। এটি হাওয়া মহলের ঠিক পাশেই অন্তত ১৭০০ এর দশকে রাজস্থানী রাজপরিবারের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। এখানে আপনি রাজস্থানের সবচেয়ে মূল্যবান কিছু ধন- মীনাকারি গহনা, বাঁধানি এবং লেহারিয়া পোশাক, মশলা এবং খাদ্য সামগ্রী, রূপালী এবং অক্সিডাইজড রৌপ্য গহনা, পাদুকা এবং আরও অনেক কিছু পাবেন।
শিংয়ের পুলিশ বাজার-
মেঘালয়ে শিলং-এর (Shillong in Meghalaya) পুলিশ বাজারে ভারতবিখ্যাত। সাবেকি দোকান থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক শো রুম সবই মিলবে এখানে। একটি গোলাকার অংশের মধ্যে আবদ্ধ গোটা বাজারটি। স্থানীয়রা একে বলেন চক। মশাল, ড্রাই ফ্রুটস, শো পিস, শীতের পোশাক, খাবার দাবার সবই পাবেন এখানে।
কলকাতার নিউ মার্কেট
কথায় বলে নিউমার্কেটে (New Market) নাকি বাঘের দুধও মেলে! ভারতের সেরা এবং অভিনব বাজারগুলির মধ্যে অন্যতম নিফ মার্কেট। বলা যায় কলকাতার (Kolkata) প্রাণ কেন্দ্র। ১৮৭৪ সালে এই বাজারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিই কলকাতার প্রথম মিউনিসিপ্যাল মার্কেট। এই বাজারের ২০০০ হাজারেরও বেশি দোকান রয়েছে। পিংপং বল থেকে পিকাসোর ছবি সবই পাবেন এখানে। এখানে পেয়ে যেতে পারেন হাজার হাজার বছরের পুরোনো নানা জিনিস। জুতো, জামা, শাড়ি, খেলনা, খাবার, ঘর সাজানোর জিনিস, মশলাপাতি, আসল এবং নকল গয়না সব পাবেন এখানে। গরম কালে শীতের পোশাক এবং শীতকালে গরমের পোশাক, কী চান সব পাবেন এই প্রাচীন বাজারে।
কনৌজ বাজার, উত্তর প্রদেশ
বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন নগরী বারাণসী উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) অহঙ্কার। প্রাচীন কনৌজ বাজারটির ঐহিহ্যশালী। এটি মূলত সুগন্ধীর বাজার। এখানে প্রবেশ করলেই নানা সুগন্ধী তেল, গোলাপ জল, সুগন্ধীর গন্ধ আপনার নাকে বসে যাবে। সাড়ে ছয়শোটিরও বেশি সুগন্ধী কারখানা রয়েছে এখানে। বেশিরভাগ কারখানাতেই সুগন্ধী তৈরি হয় সাবেকি প্রথা মেনে। গঙ্গা নদীর তীরে প্রাচীন শহর কনৌজের আরেক নাম সুগন্ধী নগরী। প্রাচীনকালে এটি ছিল সম্রাট হর্ষবর্ধনের রাজধানী। বলা হয় প্রায় সেই সময় থেকেই নাকি পারস্যের ব্যবসায়ীদের হাত ধরে এখানে সুগন্ধী প্রবেশ করে।
ইমা কেইথেল, মণিপুর
মণিপুরের বিখ্যাত বাজার ইমা কেইথেল। এর আরেক নাম মায়েদের বাজার। মানে এই বাজারটি পরিচালনা করেন শুধুমাত্র মহিলারা। সর্ব ধর্ম নির্বিশেষে মহিলারা এই বাজারে পণ্য বিক্রি করতে আসেন। সরকারিভাবে বাজারের প্রতিষ্ঠা হয় ব্রিটিশ আমলে। সালটা ১৯৩৯। সেই বাজার এখনও চলছে রমরমিয়ে। যদিও স্থানীয়দের দাবি এই বাজারটি চলছে সেই সপ্তদশ শতক থেকেই। প্রায় তিন হাজার মহিলা ব্যবসায়ী এই বাজারে ব্যবসা চালান। খাবার, হস্তশিল্পের পণ্য, গৃহস্থালীর জিনিস থেকে শুরু করে সবই মেলে এখানে। মহিলা চালিত এই বাজারের সুনাম রয়েছে বিশ্বজুড়ে। বহু বিদেশি পর্যটক শুধু এই বাজারের টানেই এখানে বেড়াতে আসেন।